ও, এজন্যেই, হাসতে হাসতে রাফিকে বলল জিনা, এতক্ষণে বুঝতে পারলাম। তাই তো বলি, এত ভূমা হলে কি করে…কিশোর হতে চাইছে স্লিম, আর তুমি…
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল কিশোর, সর্বনাশ!
কি হলো? চমকে গেছে রবিন।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। মিস্টার বেবি আর তার মেয়েকে এগিয়ে আনতে যেতে বলেছেন আমাকে কেরিআন্টি। এগারোটার বাসে আসবেন। পৌনে এগারোটার বেশি বাজে।
.
০২.
টাউন হলের পাশ কাটানোর সময় রবিন বলল, কনফারেন্সটা এখানেই হবে। আগামী হপ্তায়, চারদিন ধরে চলবে। নোটিশ পড়েছি। কলিওপটারিস্টদের মীটিং। কলিওপটারিস্ট কি?
কলি? অবাক হলো ডল। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
হবে হয়তো কলি কুত্তা গোছের কিছু, নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বলল মুসা।
মুসার কথার জবাব দিতে গিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে চোখ পড়তে থেমে গেল কিশোর। ওই দেখো, আসছে। ঝামেলা র্যাম্পারকট। দুষ্ট হাসি ফুটল মুখে। তাকে স্লিম হবার পরামর্শ দিলে কেমন হয়?
সাইকেলে করে এগিয়ে এল গাঁয়ের পুলিশম্যান ফগর্যাম্পারকট। পেটের কাছে। ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে বেল্টটা। ছেলেমেয়েদের দেখে গম্ভীর হয়ে গেল।
গলা ফাটিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল রাফিয়ান।
তার দিকে একটা চোখ রেখে জিনাকে বলল, এই, তোমার কুত্তাটাকে থামতে বলো। কামড়ে দিতে এলে ওর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করব আমি বলে দিলাম।
হাসল জিনা। আগামী হপ্তায় অনেক কুত্তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার সুযোগ পাবেন। কলি কুত্তা নিয়ে কনফারেন্স হচ্ছে। একটা কুত্তাও আপনাকে দেখে খুশি হবে বলে মনে হয় না…
জ্বলন্ত চোখে জিনার দিকে তাকাল ফগ। বলল, ঝামেলা! রাফিয়ানের দিকে তাকিয়ে সরে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করল। বিড়বিড় করে আরও কি বলতে বলতে তাড়াতাড়ি প্যাড়ালে চাপ দিল।
পেছনে ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে গেল রাফি। হাসতে হাসতে মুসা বলল, থাক থাক, রাফি, মিস্টার ফগর্যাম্পারকট তো পালাচ্ছেন, তাঁকে আর গালাগাল করার দরকার নেই।
জিনার কথায় ঝট করে ফিরে তাকাল ফগ। ভীষণ রাগে লাল হয়ে গেছে চোখমুখ। কিন্তু কুকুরটার ভয়ে ফিরে আসতে সাহস করল না। চোখের আগুনে ওদের ভস্ম করতে করতে দ্রুত প্যাড়াল করে চলে গেল।
হাসতে লাগল সবাই।
জিনাকে বলল কিশোর, কলি কুত্তার কথা বলে দিলে তো ফগের ঘুম-ন্দ্রিা হারাম করে। ও এখন সারা গায়ে কলি কুত্তা খুঁজে বেড়াবে।
ভাল করেছি। কিন্তু কলি-কলি করে কি যেন বলছিলে…
কলিওপটারিস্ট।
হ্যাঁ, কলিওপটারিস্ট। মানে কি? জানো মনে হচ্ছে?
জানি, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। পারকার আঙ্কেলকে বলতে শুনলাম। গুবরেপোকার বিশেষজ্ঞ। গুবরে নিয়ে যারা গবেষণা করে তাদেরকে বলে। কলিওপটারিস্ট।
তাজ্জব হয়ে গেল সবাই। গুবরেও একটা জিনিস! আর সেটা নিয়ে গবেষণা, কনফারেন্স করার মত লোকও আছে! জানত না।
হেসে বলল মুসা, ফগের মত বোকা মনে কোরো না আমাদের যে, যা বলবে তাই বিশ্বাস করব।
করলে করো না করলে নেই, যখন হবে তখন দেখবে।
বাস স্টেশনটা দেখা গেল। একটা বাস এসে দাঁড়িয়েছে। ঘড়ি দেখল কিশোর। এগারোটা বেজে গেছে। যাহ, নেমেই পড়লেন কিনা কে জানে! আমাকে না পেয়ে একা একা বেবিরা বাপ-বেটি বাড়ি চলে গেলে কেরিআন্টি রাগ করবেন আমার ওপর।
তাড়াতাড়ি রাস্তা পেরোল ওরা। বাসটা এসে সবে থেমেছে। দরজা খুলল। সারি দিয়ে নামতে শুরু করল যাত্রীরা।
এক হাতে একটা ব্যাগ আর অন্য হাতে একটা বড় সুটকেস নিয়ে নামলেন কালো দাড়িওয়ালা, মোটা ফ্রেমের চশমা পরা একজন ছোটখাট ভদ্রলোক। পেছনে নামল তার চেয়ে ইঞ্চিখানেক লম্বা একটা মেয়ে। দেখতে মোটেও ভাল নয়। চুল খুব পাতলা। ওগুলো দিয়েই সরু সরু দুটো বেণি করেছে। পরনে স্কুল ড্রেসের মত পোশাক। তার ওপর নীল ওভারকোট। কোমরে গাঢ় নীল বেল্ট। মাথায় রঙিন ব্যান্ড। আর বাঁ দিকে একটা ব্যাজ লাগানো গাঢ় নীল ফেল্ট হ্যাট।
বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েও মেয়েটার স্পষ্ট জোরাল শব্দ কানে এল কিশোরের, না, বাবা, কুলি লাগবে না। আমরাই পারব। তুমি ছোট ব্যাগটা নাও, আমি বড় সুটকেসটা নিচ্ছি। দাও, ছাড়ো, আমার হাতে দাও।
মেয়েটার মুরুব্বী মুরুব্বী ভঙ্গি ভাল লাগল না কিশোরের।
চারপাশে তাকাতে লাগল মেয়েটা। আপনমনেই বলল, আমাদের না নিতে আসার কথা ছিল…
সাইকেল রেখে এগিয়ে গেল কিশোর। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি মিস্টার বেবি?
বেবি! ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিই..তা বাবা, শুধু বেবি তো নই, গ্রেগাবেবিরন, জবাব দিলেন ছোটখাট, দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক।
চাবুকের মত শপাং করে উঠল মেয়েটার কণ্ঠ, ইয়ার্কি মারা হচ্ছে নাকি?
না না, ইয়ার্কি মারব কেন? বড় নাম তো, কঠিন, তাই…
ছোট করতে গিয়েছিলে। কারও নাম ছোট করা যে অভদ্রতা, এটাও জানো না? কক্ষনো আর কাউকে এভাবে ডাকতে যাবে না, অন্তত বাবার বয়েসী কাউকে। নাম কি তোমার?
মুখের হাসি নিভে গেছে কিশোরের। কি-কি-ক্বিশোর পাশা। সুটকেসটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়াল।
দিল না মেয়েটা। না, আমিই পারব। এটাতে বাবার দামী দামী গুবরেপোকাগুলো আছে। ভেঙে ফেললে গেল।
সুটকেস ভাঙবে কি করে?
আরে বুদ্ধু, সুটকেসের ভেতরে কাঁচের বাক্স আছে। ওটা ভাঙবে।
ও, তাহলে তোমার কাছেই থাক, মিস এলিজা গ্রেগাবেবিরন।
থাক, আমাকে আর পুরো নাম নিয়ে ডাকতে হবে না। আমি বাবার বয়েসী নই। শুধু এলিজা বললেই চলবে।