রাতে আমাকে হাত-পা বেঁধে ভাঙা ক্যারাভানে ফেলে রাখল। কষ্টের চোটে মাথাটা ঠিকমত কাজ করছিল না তখন আমার। ভোরের বাতাসে হেঁটে এসে মগজটা পরিষ্কার হয়ে গেল। কান ব্যথা করছিল। উলা দিতে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো, একটা জরাজীর্ণ বুড়ি, এত জোরে ঘুসি মারে কি করে? ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে আগের পাওয়া সূত্রগুলোর মানে পরিষ্কার হয়ে গেল।
বুবুকার তাঁবুতে বসে গভীর মনোযোগে বাক্সে রা মাছি দেখছিল সে। তারপর ক্যারাভানে হাড় জিরজিরে বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে আদর করা। মনে পড়ল, কয়েদীটা কীট-পতঙ্গ আর বিড়াল ভালবাসে।
সারাক্ষণ শাল দিয়ে মাথা ঢেকে রাখার ব্যাপারটাও স্বাভাবিক নয়। কেন রাখত। পরচুলা ঢাকার জন্যে। যাতে কারও নজরে পড়ে না যায়, কেউ বুঝে না ফেলে ওগুলো আসল চুল নয়।
আরও আছে। রাতে ক্যারাভানে ওঠার সময় তার পা দেখেছি। বিরাট পা। এতবড় পা কোন মহিলার হতে পারে না।
বুড়ি সেজে থাকায় আরও অনেক সুবিধে পেয়েছে সে। ঠোঁটের কাটা দাগ আর হাতের ফোলা রগ আড়াল করে রাখতে পেরেছে সহজেই। কুঁচকানো মুখের ভাঁজে লুকিয়ে ফেলেছিল কাটা দাগটা। ছদ্মবেশটা এত চমৎকার হয়েছিল, তাঁজের মধ্যে নাকের নিচের একটা কাটা দাগ আলাদা করে বোঝা যায়নি। আর রগ লুকানোর কোন চেষ্টাই করেনি সে। বুড়ো মানুষের হাতের রগ ফোলাই থাকে, তাই দেখলেও সন্দেহ করবে না, জানত।
হাসলেন শেরিফ, কিন্তু তোমাকে ফাঁকি দিতে পারেনি।
দিয়ে ফেলেছিল আরেকটু হলে। তবে ভুল করেই ফেলে অপরাধীরা। আসলে ঘাবড়ে গিয়েছিল আমাকে ছদ্মবেশে যেতে দেখে। পুলিশের চর, না চোরের দলের লোক বুঝতে পারছিল না। মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি তাই। আর মাথা ঠাণ্ডা রাখতে না পারলেই ভুল করে বসে, যত চালাক লোকই হোক। আমার মুখ থেকে কথা আদায়ের জন্যে ঘুসি মেরে বসল।
আর ওই একটা ঘুসিই কাল হলো ওর, হাসলেন শেরিফ।
ঝামেলা! বিড়বিড় করল ফগ। এত কাছে থেকেও কয়েদীটাকে ধরতে না পারায় আফসোস হচ্ছে তার। নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।
মিস্টার ফগ… বলতে গেল কিশোর।
ফগর্যাম্পারকট! শুধরে দিল ফগ।
সরি, মিস্টার ফগর্যাম্পারকট, হেসে বলল কিশোর, আমার কাছে একটা জিনিস পাওনা রয়ে গেছে আপনার।
ভুরু কুঁচকে তাকাল ফগ। তার গোলআলু চোখে বিস্ময়। ঘোৎ করে উঠল, কি জিনিস!
পকেট থেকে পঞ্চাশ সেন্টের মুদ্রাটা বের করে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দেখুন তো এটা চিনতে পারেন নাকি?
প্রথমে কিছু বুঝল না ফগ। তারপর আপেলের মত টকটকে লাল হয়ে উঠল গাল।
নিন, মুদ্রাটা টেবিলের ওপর রেখে ঠেলে দিল কিশোর। কাঁপা হাতে তুলে নিল ফগ। তাকাতে পারছে না কিশোরের চোখের দিকে।
ভুরু কুঁচকালেন শেরিফ। একবার কিশোরের মুখের দিকে, একবার ফগের মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন। কি ব্যাপার?
অনুরোধের সুরে কিশোর বলল, এই একটা রহস্য আমার আর মিস্টার ফগর্যাম্পারকটের মধ্যেই গোপন থাক, আঙ্কেল, না-ই বা ফাঁস করলাম।