চোর ধরেও এ ভাবে ছেড়ে দেয়ায় পুলিশের ওপর নারাজ হলো ক্যারাভানের লোকেরা। ব্যঙ্গ আর গালমন্দ করতে লাগল। কিন্তু কিছু করার নেই ফগের।
*
গেট দিয়ে কিশোরকে ঢুকতে দেখল প্রথমে এলিজা। তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে হাঁ হয়ে গেল। দৌড়ে এল। কি ব্যাপার? কি হয়েছে তোমার? রাতে কোথায় ছিলে?
সরো তো! খিঁচড়ে আছে কিশোরের মেজাজ। কানটা ব্যথা করছে এখনও। নিজের অজান্তেই হাত চলে গেল কানের ওপর। ডলতে গিয়ে স্থির হয়ে গেল হাতটা। ঝিলিক দিয়ে উঠল চোখের তারা। এলিজাকে আরও অবাক করে দিয়ে দৌড় দিল ঘরের দিকে।
সোজা এসে ফোনের কাছে দাঁড়াল সে। প্রথমেই খবর দিতে হবে শেরিফকে। তারপর ফোন করবে মিস্টার বেকারের বাড়িতে। মুসাদের জানানোর জন্যে। পেয়ে গেছে কয়েদীর খোঁজ!
*
ঘণ্টা দুই পরে সেদিন সকালে দ্বিতীয়বারের মত পুলিশ ঢুকল ক্যারাভানের মাঠে। তবে এবার আর ফগ একা নয়, সঙ্গে শেরিফ রয়েছেন, আরও আছে চারজন কনস্টেবল। যে জেল থেকে কয়েদী পালিয়েছিল, শেরিফের ফোন পেয়ে সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে। কিশোরও একা আসেনি। সঙ্গে রয়েছে এখন মুসা, রবিন, জিনা, ডল, রাফিয়ান। আর অবশ্যই এলিজা। এবার আর তাকে বাড়িতে রেখে আসা যায়নি। অবশ্য রেখে আসার চেষ্টাও করেনি কিশোর।
দলবল নিয়ে সোজা এসে ওগলাদের ক্যারাভানটার সামনে দাঁড়াল ওরা। শেরিফের নির্দেশে দরজায় থাবা দিল ফগ। হাঁক দিল, আই, খোলো, জলদি খোলো! পুলিশ!
খুলে দিল বুড়ি। চোখ মিটমিট করে তাকাতে লাগল। মিউ মিউ করে পায়ের কাছে এসে দাঁড়াল বিড়ালটা। কোলে তুলে নিল ওটাকে। ফগের ওপর চোখ পড়তে কাশা শুরু করল। কাশি থামলে জিজ্ঞেস করল, রিপোর্ট লিখতে এসেছেন বুঝি?
ঝামেলা! রিপোর্ট না, কয়েদী ধরতে। বুঝবে মজা আজকে। ভেতরে কে কে আছে, বেরোতে বলো জলদি।
কে আর থাকবে? আমার ছেলে আর মেয়ে…এই ওগলা, ওঠ। রাবুকে উঠতে বল। পুলিশ।
চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে এল রাবুকা আর ওগলা। এত পুলিশ দেখে চমকে গেল। মাটিতে নেমে দাঁড়াল। বুড়িও নামল বিড়াল কোলে নিয়ে।
লাফ দিয়ে ক্যারাভানে উঠে ভেতরটা দেখে এল ফগ। ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কিশোরকে, কই, কোথায় তোমার আসামী?
মুচকি হাসল কিশোর। যাক, একেবারে শিওর হয়ে নিলাম যে ভেতরে আর কেউ নেই। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল বুড়ির সামনে। আচমকা হাত বাড়িয়ে বুড়ির চুল ধরে মারল এক হ্যাঁচকা টান।
আঁউ করে উঠল বুড়ি। কিশোরের হাতে চলে এসেছে তার পরচুলা। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল বেরিয়ে পড়েছে। একটা মুহূর্ত দ্বিধান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বুড়ি। তারপর ঘুরে দিল দৌড়।
ঝট করে একটা পা সামনে বাড়িয়ে দিল ফগ। তাতে বেধে গিয়ে ধুড়স করে হুমড়ি খেয়ে পড়ল বুড়ির ছদ্মবেশে থাকা লোকটা। কোলের বিড়ালটা উড়ে গিয়ে পড়ল আরও দূরে। ব্যথা পেয়ে চিৎকার শুরু করল মিউ মিউ করে।
লোকটাকে টেনে তুলে চোখের পলকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হলো।
রাবুকা আর ওগলার হাতে হাতকড়া পরাতে যেতেই কাকুতি-মিনতি শুরু করল ওরা : আমরা কিছু করিনি, জোর করে এসে থাকতে চেয়েছে, থাকতে দিতে বাধ্য হয়েছি!
এ সব কথায় মন গলল না পুলিশের। আসামী লুকিয়ে রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হলো ওদেরও। জানা গেল, আসামী ওদের দূর সম্পর্কের ভাই। ডাকাতির অপরাধে জেলে গিয়েছিল। ডাকাতির টাকা লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল। পুলিশকে বলেনি। জেল থেকে পালিয়ে এসে প্রথমেই সেই টাকা বের করে কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করেছে রাবুকার। ওগলা তাকে দেখতে পারত না। টাকার জন্যে আসামীকে জায়গা দেয়ারও পক্ষপাতি ছিল না। কিন্তু কি করবে? রানুকা দিয়ে ফেলেছে। একটা প্রায় নতুন ক্যারাভানেরও বায়না করে ফেলেছে। টাকার জন্যে এসে চাপ দিচ্ছে মালিক। পুরো টাকা না দিলে বায়নার টাকাও মার যাবে। ভাঙাচোরা ক্যারাভান-যেটাতে কিশোরকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেটা ওদেরই ফেলে দেয়া ক্যারাভান।
চারজন কনস্টেবলকে দিয়ে তিন আসামীকে হাজতে পাঠিয়ে দিলেন শেরিফ। তারপর ফগ আর ছেলেমেয়েদের সহ রওনা হলেন জিনাদের বাড়িতে।
.
১৩.
এতবড় একটা দলকে নাস্তার জন্যে হাজির হতে দেখে অবাক হলেন না কেরিআন্টি। জানেন, আসবে। তাই প্রচুর মাংস, ডিম আর পাউরুটি বের করে রেখেছেন। ভাজতে আর টোস্ট করতে যা দেরি। শেরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, এত সকালে তো নাস্তা করে নিশ্চয় বেরোতে পারেননি। সবাইকেই দেব তো?
দিন।
আমি বাদ, মিনমিন করে লজ্জিত কণ্ঠে বলল ফগ। নাস্তা করতেই বসেছিলাম, এই সময় ফোন এল…দৌড়ালাম।
হাসলেন কেরিআন্টি। তারমানে পুরো খাওয়া হয়নি আপনারও। বসে পড়ুন। কোন সমস্যা নেই। প্রচুর আছে।
মিস্টার গ্রেগ আর মিস্টার পারকার নাস্তা সেরে স্টাডিতে চলে গেছেন। আপাতত তাঁদের ডাকার প্রয়োজন মনে করলেন না কেরিআন্টি। খাবার আনতে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
কিশোর, এবার বলো তো দেখি, টেবিলে দুই কনুই রেখে সামনে ঝুঁকে বসেছেন শেরিফ। বুড়িকে তোমার সন্দেহ করার কারণটা কি?
সূত্র অনেকগুলোই পেয়েছিলাম, কিশোর বলল, কিন্তু মেলাতে পারিনি প্রথমে। রাবুকা আর ওগলার মা সেজে থাকার বুদ্ধিটা সাংঘাতিক। এই এলাকায়। এই প্রথম মেলায় যোগ দিতে এসেছে ওরা। কেউ জানে না ওগলার মা, তার বাবার আগেই মরে গেছে। সেই জায়গাটা সহজেই দখল করল লোকটা। জানত, কেউ সন্দেহ করবে না। ঝগড়াঝাটি বাধিয়ে পরিস্থিতিটাকে এতই স্বাভাবিক করে রেখেছিল, সত্যিই কেউ সন্দেহ করেনি যে সে রাবুকা আর ওগলার মা নয়। লোকটার প্রশংসা করতে হয়। বুড়ির ছদ্মবেশে পারও পেয়ে গিয়েছিল প্রায়। ধরাটা পড়ল আমাকে ঘুসি মেরে।