বাঘ-সিংহ, না? মুখে ওসব বলাই যায়। কাজ করতে গিয়ে দেখো না কেমন লাগে! দুটো পয়সার জন্যে সারাজীবনের জন্যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে শরীরটা। দাগে ভর্তি করে দেবে।
ক্ষত? দাগ? দাগের কথাই যখন তুললেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করি-ঠোঁটের ওপর দাগওয়ালা কাউকে দেখেছেন?
কি বললি? মুহূর্তে বদলে গেল ওগলার চোখের দৃষ্টি। এই, কি বললি? দাগ দিয়ে কি করবি তুই?
রীতিমত অবাক হলো কিশোর। না, কিছু না।
তাহলে বললি কেন?
আপনি বাঘ-সিংহের কথা বললেন…
যা, বেরো! আর ঝাড় দেয়া লাগবে না। এই নে, পঁচিশ সেন্ট, মাটিতে পয়সা ছুঁড়ে দিল ওগলা।
অত রেগে যাচ্ছেন কেন, ম্যাম? দাগের কথা বলে ভুল করেছি। মাপ করে দেবেন…
বেরো! নইলে এক্ষুণি রাবুকাকে ডেকে আনব। ফকির আর চোর দেখলে পেটানোর জন্যে অস্থির হয়ে যায়। একবার তোর মত একটা শয়তান ছেলের হাত মুচড়ে ভেঙে দিয়েছিল। ডাকব?
না, না, ঘাবড়ে যাওয়ার ভান করল কিশোর। যাচ্ছি, যাচ্ছি। মাটি থেকে পয়সা তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল সে।
.
১০.
বিকেল বেলা দল বেঁধে গুবরেপোকার কনফারেন্সে গেল ওরা। কিশোর চলল এলিজা আর তার বাবার সঙ্গে। রাফিকে নেয়া হলো না। কারণ, জানা কথা, এ রকম একটা অনুষ্ঠানে কোনমতেই ঢুকতে দেয়া হবে না তাকে। মিস্টার বেকারের বাড়ি থেকে সোজা টাউন হলে চলে গেল মুসারা চারজন-সে, জিনা, রবিন আর ডল। কিশোরদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল গেটে। বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যাবে শুনে ওদের ছুটি দিতে রাজি হয়েছেন মিস্টার বেকার।
টাউন হলের গেটে আরও একজনের দেখা পাওয়া গেল। ফগর্যাম্পারকট। পাহারা দেয়ার ছুতোয় দারোয়ানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রইল সে। আসল উদ্দেশ্য, কারা কারা আসে চোখ রাখা। ছেলেমেয়েদের দেখে গোলআলুর মত চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। ঢুকতে বাধা দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু মিস্টার গ্রেগর জন্যে পারল না। দারোয়ানকে জানালেন, তিনি নিয়ে এসেছেন ওদের। জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার রইল না ফগের।
সম্মেলনটা মোটেও আহামরি লাগল না ছেলেমেয়েদের কারও কাছে, একমাত্র এলিজা ছাড়া। কোনরকম মজা, কোনরকম বৈচিত্র নেই। কয়েদীটার খোঁজে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল কিশোর। লোকটার চেহারার সঙ্গে দুতিনজনের মিল থাকলেও ওদের কারও ঠোঁটেই কাটা দাগ দেখতে পেল না।
দুই ধরনের গুবরেপোকা প্রেমিক এসেছে সম্মেলনে-দাড়িগোঁফ আর ঝাকড়াচুলো, নয়তো দাড়িগোঁফ আর টাকমাথা; মেয়েরা বাদে। বেশির ভাগই চশমা পরা।
শুরু হলো সম্মেলন। বিরক্তিকর আলোচনা। ভাল লাগল না। ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে গিয়ে ধমক খেয়ে থেমে গেল ছেলেমেয়ে। ঢুকে পড়েছে, মীটিং শেষ না হলে বেরোনোও যায় না। কি আর করবে? বসে বসে ঢুলতে শুরু করল মুসা। প্রচণ্ড বিরক্তিতে মুঠো শক্ত করে ফেলল জিনা। রবিনের কোন ভাবান্তর নেই। ডল অতটা বিরক্ত হচ্ছে না, কারণ বাড়ি থেকে বেরোনোর। অন্তত সুযোগ পেয়েছে। তাকে একা বাড়ি থেকে দূরে কোথাও যেতে দেয়া হয় না। হাই তুলতে শুরু করল কিশোর। দরজার দিকে তাকাতেই দেখল টুলে বসে ফগও হাই তুলছে। চোখাচোখি হতেই পিঠ সোজা হয়ে গেল ফগের। মনে মনে গাল দিতে লাগল বিচ্ছু ছেলেটাকে। সে ভেবেছে দেখাদেখি হাই তুলে তাকে রাগাচ্ছে কিশোর।
সত্যি সত্যি যখন ঘুম এসে যাওয়ার জোগাড় হলো, তখন শেষ হলো সম্মেলন। সবার আগে আগে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে এল গোয়েন্দারা। গেটের বাইরে মাঠের কোণে বসে সকালে মেলায় গিয়ে কি কি জেনে এসেছে কিশোর, সেই আলোচনা শুরু করল।
সব শোনার পর মাথা দোলাল রবিন, হুঁ, সন্দেহজনক। কাটা দাগের কথা শুনে খেপে গেল কেন ওগলা?
এর একটাই মানে, কাটা দাগওয়ালা লোকটা কোথায় আছে, জানে সে, জিনা বলল।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, আমারও তাই ধারণা।
ক্যারাভানে লুকিয়ে রাখেনি তো? মুসা বলল। গিয়ে দেখো না একবার।
সেকথাই ভাবছি। আজই যাব। রাতে। অন্ধকার হলে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুসা, আমাদের আর যাওয়া হবে না। এমন প্যাঁচেই পড়েছি..যাকগে, যাও, তুমি একাই যাও। কি হলো না হলো জানিয়ে।
কোথায় যাবে একা একা
চমকে ফিরে তাকাল সবাই। এলিজা দাঁড়িয়ে আছে। পা টিপে টিপে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের পেছনে।
রেগে উঠল মুসা, সেটা তোমার জানার দরকার নেই। আড়ি পাততে লজ্জা করে না?
লজ্জা কি ওর আছে নাকি! আরেক দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকাল জিনা।
রাগে, দুঃখে কেঁদে ফেলার অবস্থা হলো এলিজার। জিনাকে বলল, দাঁড়াও, তোমার আম্মাকে গিয়ে বলব, তুমি আমাকে অপমান করেছ।
বলোগে! ঝাজিয়ে উঠল জিনা। ইচ্ছে হলে বাবাকেও বোলো। আমি থোড়াই কেয়ার করি!
জিনাকে রাগালে এলিজার কপালে দুঃখ আছে। অঘটন ঠেকানোর জন্যে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল কিশোর। জিনা, তোমরা এখন যাও। আমি এলিজাদের সঙ্গে বাড়ি যাচ্ছি।
এলিজার হাত ধরে টানতে টানতে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মিস্টার গ্রেগের কাছে নিয়ে এল কিশোর। গুবরেপোকার পিঠের মতই চকচকে টাকমাথা এক বরে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছেন মিস্টার গ্রেগ। সম্মেলনে এতক্ষণ কথা বলে আর শুনেও যেন প্রাণ ভরেনি দুজনের।
এলিজা বলল, বাবা, বাড়ি যাবে না? ডিনার নিয়ে তোমার জন্যে বসে থাকবেন পারকার আঙ্কেল।
হা হা, চলো। গুবরে-বিশেষজ্ঞের দিকে তাকিয়ে বললেন মিস্টার ঘেণ, রস, পরে কথা হবে। কাল আসছ তো?