হে মিস্টার, জিনা জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জানেন, মেলা কটার সময় বন্ধ হবে?
সাড়ে দশটায়। সরো, কুত্তা সরাও তোমার। কামড়ে দেবে তো। মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করব আমি! মাথা ঝাঁকি দিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার আলগা লাল গোঁফের একটা পাশ খুলে গেল। তাড়াতাড়ি আঙুল দিয়ে টিপে ধরে আড়চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল, জিনা ওকে চিনতে পারল কিনা।
কিন্তু জিনার মুখে চেনার কোন লক্ষণ নেই। নিরীহ স্বরে বলল, রাফিকে ভয়। পাবার কোন কারণ নেই, মিস্টার। গায়ের হাঁদা পুলিশম্যান ঝামেলার্যাম্পারকট ছাড়া আর কাউকে কামড়াতে যায় না সে। বলে আর দাঁড়াল না। সরে এল। নীরব হাসিতে ফেটে পড়ছে।
ভয়ানক রাগে জ্বলে উঠল ফগের মুখ। ঠাস করে চড় মারার ইচ্ছেটা বহু কষ্টে রোধ করল। শেরিফের প্রশ্রয় পয়েই ছেলেমেয়েগুলো এতটা বেয়াড়া হয়েছে। ওর হাতে ছেড়ে দিলে কবে সিধে করে ফেলত। নিজের অসহায়ত্বে অজান্তেই ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল তার। চাকরির ওপর ঘেন্না ধরে গেল।
এরপর এল রবিন। ফগের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিচু হয়ে কি যেন তোলার ভঙ্গি করল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা বোতাম দেখিয়ে বলল, এ বোতামটা কি আপনার, স্যার?
মাথা নাড়ল ফগ। অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। তিন-তিনটা বিচ্ছু এল, কেউ তাকে চিনতে পারেনি ভেবে রাগটা কমে গেছে। না, থোকা, আমার না। মেলা দেখতে এসেছ বুঝি? কেমন লাগছে?
খুব ভাল।
রবিন ফিরে এলে কিশোর গিয়ে দাঁড়াল ফগের কাছে। তীক্ষ্ণ চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখতে লাগল। মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, কিছু মনে বরবেন না, স্যার। আপনার পায়ে ওগুলো পুলিশের বুট মনে হচ্ছে। চুরি করেছেন নাকি?
চমকে গেল ফগ। মনে মনে ঝাড়পেটা করতে লাগল নিজেকে। ছদ্মবেশ নেয়ার সময় জুতো বদলানোর কথা মনে ছিল না। কটমট করে তাকাল কিশোরের দিকে।
জুতোগুলো চেনা চেনা লাগছে, কিশোর বলল আবার। ফগের জুতোর মত…
ফগর্যাম্পারকট! ধমকে উঠল ফগ। বলেই বুঝল, ভুল করে ফেলেছে। শোধরানোর উপায় নেই আর। খেঁকিয়ে উঠল, ঝামেলা! শয়তান ছেলে! যাও, ভাগো এখান থেকে! ঘাড় মটকে দেব নইলে!
.
০৮.
অনেক কষ্টে হাসি থামাল ওরা।
মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, এলিজা কোথায়?
বাপের সঙ্গে রাউন্ডএবাউট চড়ছে। মিস্টার বেবি আসলেই পাগল। মেলায় হেন জিনিস নেই, যেটাতে চড়ছেন না তিনি।
চলো তো, দেখি।
রাউন্ডএবাউটের সামনে এসে দেখে ফগ দাঁড়িয়ে আছে। আড়চোখে ওদের দিকে তাকাল ফগ। চোখ জ্বলছে। মুখে কিছু বলল না। আশেপাশের লোকের কাছে ছদ্মবেশ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে।
মেলায় যে জেল পালানো কয়েদীটাকেই খুঁজতে এসেছে ফগ, সন্দেহ রইল না কিশোরের। কিন্তু কাকে দেখছে এমন মনোযোগ দিয়ে?
বুঝতে পেরে হতবাক হয়ে গেল কিশোর। আগে লক্ষ করেনি ভেবে অবাক হলো ভীষণ।
মিস্টার থেগের দিকে জাকিয়ে আছে ফগ।
ছবির কয়েদীটার সঙ্গে প্রচুর মিল মিস্টার গ্রেগের। তীক্ষ্ণ চোখ, মোটা ভুরু, গোঁফ, দাড়ি, হাতের ফুলে ওঠা রগ, মাঝারি উচ্চতা-সব মিলে যায়। গোঁফের জন্যে ঠোঁটে কাটা দাগ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। থাকলে শিওর হওয়া যেত।
নিশ্চয় তার মত এখন একই কথা ভাবছে ফগও। কি করবে? অ্যারেস্ট করবে মিস্টার গ্রেগকে? থানায় নিয়ে গিয়ে গোঁফের নিচে দাগ আছে নাকি দেখবে? ইস, সে-চেষ্টা যদি করত! দেখার মত দৃশ্য হতো একটা।
ধীরে ধীরে গতি কমতে কমতে থেমে গেল রাউন্ডএবাউট। মেয়েকে নিয়ে নেমে এলেন মিস্টার গ্রেগ। ঘড়ি দেখলেন। কিশোরের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাড়ি যাওয়া দরকার। চা নিয়ে বসে থাকবে পারকার।
অবাক হয়ে ওদের দিকে ফগকে তাকিয়ে থাকতে দেখল কিশোর। একটা কয়েদীর সঙ্গে কিশোরের অত খাতির দেখে নিশ্চয় ভীষণ অবাক হচ্ছে। ফগের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে মুচকি হাসল সে।
বিড়বিড় করে কি বলল ফগ। চোখের দৃষ্টিতে কিশোরকে ভস্ম করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে সরে গেল ওখান থেকে।
.
মেলা থেকে ফিরতে কিছুটা দেরিই হয়ে গেল ওদের। তবে টেবিল থেকে ওঠেননি মিস্টার পারকার। বন্ধুর জন্যে চা নিয়ে বসে আছেন।
চা খেতে বসে মেলা দেখা নিয়ে একনাগাড়ে বকবক করে যেতে লাগলেন মিস্টার গ্রেগ। খুব উপভোগ করেছেন তিনি, সেকথা বলতে থাকলেন উৎফুল্ল হয়ে। সবই দেখলাম, একটা জিনিস বাকি রয়ে গেল কেবল, মাছির সার্কাস। মাছিকে ট্রেনিং দিয়ে কি করে ওদের দিয়ে কাজ করায় দেখার খুব শখ ছিল।
দেখে এলেই পারতে, মিস্টার পারকার বললেন।
দেখাল না তো আজ। কি নাকি অসুবিধা আছে।
নাক কুঁচকালেন কেরিআন্টি। আমি হলে ওই সার্কাসের দশ মাইলের মধ্যে যেতাম না। মিস্টার গ্রেগ, সত্যি কি সার্কাস দেখানোর মত অতটা মগজ মাছির আছে?
মাছি খুব বুদ্ধিমান প্রাণী, মিস্টার গ্রেগ বললেন। তবে গুবরেপোকার ক্ষেত্রে তারতম্য আছে। কোন কোনটা খুবই বুদ্ধিমান, কোনটা একেবারে বোকা। অ্যাটলাস পর্বতমালায় দুই হাজার ফুট ওপরে এক ধরনের গুবরে বাস করে, যারা পাতার সঙ্গে পাতা জুড়ে সেলাই করতে পারে…
গুবরের কথায় কান নেই কিশোরের। সে ভাবছে অন্য কথা মাছির সার্কাস! কয়েদীটা পোকামাকড় ভালবাসে। হয়তো ওই তাবুতেই লুকিয়ে রয়েছে। কিংবা সার্কাসটার মালিকই সে। ভিন্ন নামে চালাচ্ছে।