না।
আমিও না, রবিন বলল। তবে এখানকার লোকে যে করে তাতে সন্দেহ নেই। করার কারণ, পেনসিলভানিয়া ডাচেরা আসলে ডাচ নয়, জার্মান। দু-তিনশো বছর আগে ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্যে দেশ ছেড়ে এসে বসতি করেছিল এখানে। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল ডাইনী, রক্তচোষা ভুত, জাদুমন্ত্র এসবের গল্প। ওদের অনেকেই এখনও এসব উদ্ভট গল্প সত্যি বলে মানে, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ওসব আছে।
হ্যাঁ, মাথা দোলাল মুসা, মিসেস ভারগনও তো করে।
ডাইনীর গল্প অবশ্য আরও অনেক দেশে আছে। নিউ ইংল্যান্ডের পিউয়ারিটনরাও বিশ্বাস করে ডাইনী আছে।
চুপ করে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।
কিছু ভাবছ মনে হচ্ছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
অ্যাঁ! হ্যাঁ। রবিন, তোমার কি মনে হয়নি, কুত্তা চুরি করে কেউ ডাইনীর এই কিংবদন্তীটাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে?
করতে পারে। তবে কেন করবে এই কাজ, কিছু বুঝতে পারছি না।
সরু একটা পথ চলে গেছে ফরেস্টবার্গের দিকে। আশোঁপাশে বসতি খুব কম। প্রায় দুই ঘণ্টা একটানা চলার পর পাহাড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে একটা চৌরাস্তা পড়ল। অন্য যে পথটা আড়াআড়ি কেটে চলে গেছে মূল রাস্তাটাকে, তার একটা প্রান্ত উঁচু হয়ে পাহাড়ে উঠে গেছে, অন্য প্রান্তটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে একটা পার্বত্য নদীর দিকে। নেমে যাওয়া দিকটার দু-দিকে অনেকগুলো। কাঠের তৈরি বাড়িঘর চোখে পড়ল। পুরানো একটা আঁতাকলও আছে।
ম্যাপ দেখে কিশোর বলল, ওটাই ফরেস্টবার্গ। ঘোরো।
গাড়ি ঘোরাল মুসা।
আগের দিনে ওটা দিয়ে গম ভাঙাত লোকে, আঁতাটা দেখিয়ে রবিন বলল। তখন ইলেকট্রিসিটি ছিল না, নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ওটা ঘোরানো হত।
একটা বাড়ির ডিসপ্লে উইন্ডোতে বড় বড় করে লেখা রয়েছে: অ্যাংগাস জেনারেল স্টোর। আকৃষ্ট করল মুসাকে। ছাউনি দেয়া বারান্দায় পড়ে আছে দড়ির বান্ডিল, হাতুড়ি-বাটাল, খন্তা-কুড়াল জাতীয় যন্ত্রপাতি, আর গম-আটার। বস্তা।
আমি ঢুকব ওখানে, ঘোষণা করল সে। গোয়েন্দাগিরিতে অনেক পরিশ্রম, অনেক ক্যালোরি খরচ হয়, ঠিকমত না খেলে শরীর টিকবে না।
হেসে ফেলল রবিন। মুসা দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলে সে বসল ড্রাইভিং সীটে। ড্রাইভ কিশোরও করতে পারে, কিন্তু গাড়ি চালাতে ভাল লাগে না তার। ছুটন্ত গাড়িতে আরাম করে বসে দু-ধারের দৃশ্য দেখাই, তার বেশি পছন্দ।
কেনাকাটা করার জন্যে মুসাকে রেখে কাউন্টি কোর্টহাউসে রওনা হলো। অন্য দু-জন। সাদা একটা কাঠের বাড়ি, সামনে ছড়ানো বারান্দার ওপরে। কাঠের খুঁটি দিয়ে ধরে রাখা চালা।
কাউন্টি ক্লার্কের অফিসে ঢোকার আগে দরজায় থাবা দিতে গেল কিশোর। কিন্তু পাল্লাটা ভোলা, চাপ লাগতেই ফাঁক হয়ে গেল। ভেতরে ঢুকল
সে আর রবিন। বিশাল, পুরানো আমলের একটা রোল-টপ ডেস্ক রয়েছে। ঘরে, ওটার খোপগুলোতে ঠেসে ভরা রাখা হয়েছে দলিলপত্র। টেবিলের ওপরেও গাদা গাদা কাগজ, বড় বড় পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া।
কেউ নেই ঘরটায়। ওপাশের দরজাটার কাছে এসে সবে টোকা দিতে যাবে কিশোর, এই সময় খুলে গেল ওটা। বেরিয়ে এল চশমা পরা এক মধ্যবয়েসী মহিলা। কি চাই? ক্লার্ক মিস্টার রেনসন বাইরে গেছেন। আমাকে দিয়ে কোন সাহায্য হবে?
ব্ল্যাক হোলোতে ক্যাম্পিং করতে যেতে চাই আমরা, জবাব দিল কিশোর। জায়গাটার মালিক কে জানতে পারলে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিতাম।
বহুবছর ধরে মহিলা এই এলাকার বাসিন্দা, এক অফিসে কাজ করতে করতে অনেক কিছু মুখস্থ হয়ে গেছে। ফাইল কিংবা রেজিস্টার দেখার প্রয়োজন বোধ করল না। জবাব দিয়ে দিল, পুরো উপত্যকাটারই মালিক আরিগনরা। যদূর জানি, এখনও যারা বেঁচে আছে, সবাই যার যার মত অন্য জায়গায় চলে গেছে। ওদের কেউ ওখানে এখন বাস করে কিনা বলতে পারব না।
আরিগন নামটা নোটবুকে টুকে নিল রবিন।
মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল দু-জনে।
শেরিফের অফিসের দরজায় গিয়ে টোকা দিল কিশোর।
ভেতর থেকে ভারি গলায় ডাক শোনা গেল, আসুন।
খাটো, ভারি শরীর, ধূসর রঙের পুরু গোঁফওয়ালা একজন মানুষ টেলিফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখলেন। ওয়েস্টকোটের বোতাম খোলা, বলিষ্ঠ বাহুর ওপরে গুটিয়ে রাখা শার্টের হাতা। খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে তাকে। সুইভেল চেয়ার ঘুরিয়ে নিয়ে ডেস্কের ওপর দিয়ে তাকালেন ছেলেদের দিকে।
দ্রুত নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর। শেরিফের নাম জানতে পারল, টোনার।
কি দরকার? জানতে চাইলেন শেরিফ।
সংক্ষেপে ক্যাপ্টেন রিচটনের নিখোঁজ সংবাদ জানাল কিশোর। তার যে খারাপ কিছু হয়েছে, এই সন্দেহের কথাও বলল।
ভুরু কুঁচকে নীরবে সব শুনলেন শেরিফ। কথা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে কি করতে বলো?
ব্ল্যাক হোলোতে গিয়ে খুঁজে দেখার জন্যে যদি কাউকে পাঠাতেন…
মাথা নাড়লেন শেরিফ, সম্ভব না। আজ তো নয়ই, কালও পারব কিনা? জানি না। আমার সমস্ত লোক এখন হাইজ্যাকারদের পেছনে ব্যস্ত। ইন্টারস্টেট ট্রাক থেকে মাল হাইজ্যাক হয়ে গেছে। কদিন ধরেই উৎপাত। করছে খুব, মাঝে মাঝেই মালবাহী গাড়ির ওপর চড়াও হয়ে লুটপাট চালাচ্ছে। ব্যাটাদের ধরতেই হবে।
কিন্তু স্যার, মিস্টার রিচটনের ব্যাপারটাও কম জরুরী না, আবার বলল কিশোর। দেরি হলে আরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তার। প্রাণের ওপরও আঘাত আসতে পারে।