শুনেছি, ঝাড়ুর ডাণ্ডাকে হাউই বাজি বানিয়ে তাতে বসে উড়ে চলে ডাইনীরা, মাথা নাড়তে নাড়তে বলল রবিন, কিন্তু একি! এ তো পা-কেই হাউই বানিয়ে ফেলেছে!
গলা থেকে দূরবীন খুলে নিল কিশোর। চোখে লাগিয়ে দেখতে লাগল গর্তের কিনারে উঠে লোকটা যেখানে অদৃশ্য হয়েছে সেখানটা। সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়ল না। শেষে ব্ল্যাক হোলোর নিচের দিকে দূরবীনের চোখ নামাল।
কিছু দেখছ? জানতে চাইল মুসা।
প্রচুর গাছপালা, আর কিছু না।
একপ্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে আরেক প্রান্তে নজর সরাচ্ছে কিশোর। ছোট্ট একটু খোলা জায়গার ওপর চোখ পড়তেই স্থির হয়ে গেল হাত।
দেখেছ মনে হচ্ছে কিছু? প্রশ্নটা করল এবার রবিন।
তার হাতে দূরবীন তুলে দিল কিশোর। যেদিকে খোলা জায়গাটা আছে নীরবে সেদিকে হাত তুলে দেখাল।
প্রথমে শুধু গাছ চোখে পড়ল রবিনের। কই, কিছু তো দেখছি না।
গর্তের দেয়ালের গোড়ায় দেখো।
রবিনও দেখতে পেল। শুরুতে যেগুলোকে কেবল পাথর মনে হয়েছিল, সেগুলোকেই এখন অন্য রকম লাগল, মনে হচ্ছে কাঠ আর পাথরকে যত্ন করে সাজিয়েছে কেউ। চেঁচিয়ে উঠল হঠাৎ, আরি, এ তো ঘর। দরজাও দেখতে পাচ্ছি। এমন করে ক্যামোফ্লেজ করে রেখেছে, যাতে নজরে না পড়ে।
রবিনের হাত থেকে দূরবীনটা প্রায় কেড়ে নিল মুসা। দেখে বলল, ওরকম বাড়িতে কে বাস করে, বলো তো? ওই ডাইনীমুখো লোকটা?
হতে পারে। যে-ই করুক, ক্যাপ্টেন রিচটনের খবর হয়তো জানাতে পারবে আমাদের। কিশোর, যাবে নাকি?
চলো।
আবার নামা! আঁতকে উঠল মুসা, এই পথে নামতে গেলে এবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।
তুমি কি ভেবেছিলে চিরকালই থাকব আমরা এখানে? হেসে বলল কিশোর।
ততক্ষণে নামতে শুরু করে দিয়েছে রবিন, পাহাড়ে চড়ায় অন্য দু-জনের চেয়ে দক্ষ সে।
নিচে নেমে পায়েচলা পথটা আবার খুঁজে বের করল ওরা।
আধঘণ্টা পর বন থেকে বেরিয়ে এল খোলা জায়গাটুকুতে। হাত তুলে থামার ইঙ্গিত করল কিশোর। এত কাছে থেকেও রহস্যময় ছোট্ট বাড়িটাকে চেনা কঠিন। আগে থেকে না জানা থাকলে হয়তো চোখেই পড়ত না, অথচ রয়েছে মাত্র দশ-বারো গজ তফাতে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে লাগল ওরা। পাথর আর কাঠ দিয়ে তৈরি ঘর। জানালা নেই, সামনের দিকে কেবল একটা দরজা। কাউকে চোখে পড়ল না। পা টিপে টিপে বাড়িটার দিকে এগোতে শুরু করল কিশোর, পেছনে দুই সহকারী। সামনের খোলা চত্বরটুকু পেরিয়ে এসে কাঠের দরজার সামনে। দাঁড়াল সে। একমুহূর্ত দ্বিধা করে টোকা দিল দরজায়।
বার বার টোকা দিয়েও সাড়া মিলল না।
মুসা বলল, ভেতরে কিছু নড়েছে মনে হলো।
সরে গিয়ে এককোণ থেকে উঁকি দিল সে। কাউকে দেখতে পেল না। বাড়িটার গঠন দেখে অবাক হলো। আরেক পাশে সরে গিয়ে অন্য কোণ থেকে তাকাল। কাঠ আর পাথর দিয়ে তিনদিকে বেড়া তৈরি করা হয়েছে। বাকি একদিকের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পাথরের দেয়ালটাকে। একধারে একটা খোয়াড়, ভেড়া রাখা হত বোধহয়, এখন শূন্য। একটা জানোয়ারও নেই।
দেখলে কিছু? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। কেউ নেই।
তাহলে নড়ল কি?
কি জানি!
বাড়িটার গঠন কিশো; আর রবিনও দেখল। রবিন বলল, আরেকটা। দেয়াল বানাতে কি এমন কষ্ট হত? আলসে নাকি লোকটা? নাকি কোন কারণ আছে এ ভাবে বানানোর?
একটা কারণ হতে পারে, ক্যামোফ্লেজ, দেখতে দেখতে বলল কিশোর। এভাবে তৈরি করাতে দেয়ালের সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে, সহজে চোখে পড়ে না।
হু। এখানে আর দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে, তারচেয়ে চলো বাড়িটা কার জানার চেষ্টা করি। ব্ল্যাক হোলোর মালিক কে, সেটা জানাও বোধহয় জরুরী।
বেরিয়েছি কিন্তু রিটনকে খুঁজতে, মনে করিয়ে দিল কিশোর। এই বাড়ির মালিক, কিংবা যে লোকটা আমাদের ওপর চোখ রাখছিল, তার সঙ্গে ক্যাপ্টেনের নিখোঁজ হওয়ার কোন সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। একটা ব্যাপারে এখন শিওর হয়ে গেছি আমরা, এখানে, এই গর্তের মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে তার। শেরিফকে জানাতে হবে খবরটা।
একঘণ্টা জোরকদমে চলার পর গর্তের উল্টোধারের দেয়ালের ওপরে। এসে উঠল ওরা আবার, রিচটনের কেবিনের কাছে। একবাক্স বিস্কুট আর তিনটে আপেল বের করে নিল মুসা। ইতিমধ্যে ছোট্ট একটা নোট লিখে টেবিলে চাপা দিয়ে রাখল কিশোর, ক্যাপ্টেন ফিরে এলে দেখতে পাবেন; জানবেন, ওরা এসেছে।
আবার এসে গাড়িতে উঠল ওরা। ফরেস্টবার্গে শেরিফের সঙ্গে দেখা করতে যাবে।
.
০৫.
গাড়ি চালাচ্ছে মুসা। ভারগনদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল সামনের চত্বরে গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে আছে পটি।
ওর কুত্তাটা খোঁজার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা।
রবিন বলল, যাবে আর কোথায়, হয়তো ফেরত চলে এসেছে।
আমার মনে হয় না, কিশোর বলল। এলে ওভাবে মন খারাপ করে বসে থাকত না। কুকুরটাও থাকত তার সঙ্গে।
বাকি কুত্তাগুলোর ব্যাপারে কি মনে হয় তোমার? হারিয়েছে যে বলল। মিসেস ভারগন? কোনও পশু চোরের কাজ?
চোরটা কে, জানি আমি, জবাব দিল মূসা। সেই ডাইনী।
রবিন ভেবেছিল, উড়িয়ে দেবে কিশোর, কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে। বলল গোয়েন্দাপ্রধান, আমার ধারণা, ডাইনী আর কুকুর-নিখোঁজ রহস্যের। মধ্যে যোগাযোগ আছে। ক্যাপ্টেনও এটা সন্দেহ করেছেন। নইলে ক্যালেন্ডারে লিখে রাখতেন না।
কিশোরের কথায় মুসাও অবাক, ডাইনী আছে তুমি বিশ্বাস করো?