ঢাল বেয়ে উঠে আসতে লাগল কয়েকজন পুলিশ। প্রথম যে লোকটা কাছে এল তাকেই জিজ্ঞেস করল কিশোর, রবিন ঠিক আছে? আমার বন্ধু?
আছে, জবাব দিল লোকটা।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর, গাড়িতে পুড়ে মরেনি তাহলে!
অবাক হলো পুলিশম্যান, কিসের গাড়ি!
জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না কিশোর। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামতে শুরু করল ঢাল বেয়ে। নিচে নেমে দৌড় দিল ডোবারের কেবিনের দিকে।
হাঁ হয়ে খুলে আছে একমাত্র দরজাটা। একছুটে ভেতরে ঢুকে পড়ল সে। থমকে দাঁড়াল।
রান্নাঘরের গোপন পাথরের দরজাটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মুসা, ওটা এখন খোলা। চেয়ারে বসে আছে রবিন, রিচইন আর শেরিফ ইকার।
শব্দ শুনে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন শেরিফ। হেসে বললেন, এসো কিশোর। তোমাদের পাত্তা না দিয়ে, ডোবারের কথায় গুরুত্ব দিয়ে ভুল করেছিলাম, সরি। যাই হোক, কেসটার কিনারা করার জন্যে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ।
হাঁটু ভেঙে এল যেন কিশোরের। সমস্ত উত্তেজনা শেষ হয়ে যেতে এতক্ষণে টের পেল ক্লান্তি। ধপ করে বসে পড়ল একটা চেয়ারে।
পুরো আধমিনিট কথা বলল না সে, জিরিয়ে নিয়ে মুখ তুলে তাকাল রবিনের দিকে, এত তাড়াতাড়ি পুলিশকে খবর দিলে কি করে?
হাসল রবিন, তারপর খুলে বলল সব, বেরিয়েই গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, মিসেস ভারগনের বাড়িতে টেলিফোনের তার দেখেছি। ফরেস্টবার্গে যেতে-আসতে অনেক সময় লাগবে। তাই ভাবলাম শেরিফকে একটা ফোন যদি করতে পারি অনেক সময় বাচবে।
হঠাৎ পেছনে শুনলাম চিৎকার। তারপর ট্রাকের ইঞ্জিন চালু হলো। আসতে লাগল আমার পেছন পেছন। কেন আসছে বুঝতে পারলাম। নিশ্চয় আমাকে দেখে ফেলেছে, ধরতে আসছে। ট্রাকে কয়জন আছে জানি না। আমাকে ধরার জন্যে বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালাবে ওরা। রাস্তা যতক্ষণ খারাপ থাকবে ততক্ষণ ধরতে পারবে না জানি, কিন্তু তারপর? ওরা পিছে লেগে থাকলে পুলিশকে খবর দিতে পারব না। কি করি, কি করি, ভাবছি, এই সময় চোখে পড়ল পুরানো গাড়িটা। দেখেই একটা বুদ্ধি এল মাথায়, সিনেমায় দেখা একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়ল কি করে তেড়ে আসা ডাকাতদের ফাঁকি দিয়েছিল একজন লোক।
তাড়াতাড়ি আলো নিভিয়ে গাড়িটা ঢুকিয়ে রাখলাম একটা ঝোপে। দৌড়ে ফিরে এসে পুরানো গাড়িটায় আগুন ধরিয়ে ঠেলে ফেলে দিলাম পাড়ের ওপর থেকে। পেট্রোল ছিল ওটার ট্যাঙ্কে। দাউ দাউ করে যে ভাবে জ্বলে। উঠল, ওটার মধ্যে নিজেকে কল্পনা করে শিউরে উঠলাম। রাস্তাটা ঘোরাল আর গাছপালা ছিল বলে আমাকে এ সব করতে দেখতে পায়নি লোকটা, আসতেও দেরি হয়েছে তার। ঝোপে লুকিয়ে দেখলাম, গাড়ি থেকে নামল সে, আগুন লাগা গাড়িটা দেখল, তারপর ট্রাক নিয়ে ফিরে গেল। বুঝলাম, আমার ফাঁকি কাজে লেগেছে।
সে চলে গেলে আবার রওনা হলাম মিসেস ভারগনের বাড়িতে। খুশি। হয়েই ফোন করতে দিলেন তিনি। শেরিফকে পেতেও অসুবিধে হলো না। তিনি বললেন, এখুনি আসছি। বার বার মনে হতে লাগল, কেবিনে ফিরে আসি, তোমাদের কোন সাহায্য লাগতেও পারে। কিন্তু ভয়ও হলো, সাহায্য করতে এসে না বিপদে ফেলে দিই। দ্বিধায় দ্বন্দে ভুগতে ভুগতে মিসেস ভারগনের, বাড়িতেই বসে রইলাম পুলিশ না আসা পর্যন্ত।
দারুণ একখান কাজ করেছ, হাসল মুসা। মস্ত ফাঁকি দিয়েছ ব্যাটাকে। তবে টেলিফোনটা করে সবচেয়ে ভাল করেছ। এত তাড়াতাড়ি পুলিশ না এলে আমাদের কি হত কে জানে! ডোবার ভয়ঙ্কর লোক! ও আমাকে আর ক্যাপ্টেন রিটনকে খুন করার মতলব করছিল।
কিশোর পুমাটার পেছনে বেরিয়ে যাওয়ার পর কি হলো, জানাল মুসা। তাকে ধরে ফেলল ডোবার। গায়ে অসম্ভব জোর লোকটার, তাছাড়া হাতে পিস্তল ছিল, কাবু করতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। ওকে নিয়ে গিয়ে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে একই ঘরে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখল। ফেরেল ফিরে এলে একটা ব্যবস্থা করবে বলছিল। এই সময় কেবিনের দিকের দরজা খুলে পুলিশ নিয়ে ঘরে ঢুকল রবিন।
ডোবার আর ফেরেলকে ধরে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে ভোলা হয়েছে, এসে খবর দিল একজন পুলিশ। হুগারফকে আগেই তোলা হয়েছে। এখানে আর কোন কাজ নেই। ওঠার আগে তিন গোয়েন্দাকে একটা খবর জানালেন শেরিফ, ডাকাতদের খোঁজ কেউ দিতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে ঘোষণা করেছে একটা কোম্পানি। তাদের অনেক মাল লুট করেছে ডাকাতেরা। এখন একেবারে বমাল ওদের ধরে দেয়াতে নিশ্চয় ভাল একটা অঙ্কের টাকা পাবে। তিন গোয়েন্দা। শীঘ্রি সেটার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা দিয়ে, কয়েকবার করে ওদের ধন্যবাদ দিয়ে, উঠলেন তিনি। যাওয়ার আগে বললেন, হ্যাঁ, একবার আমার অফিসে দেখা কোরো, পারলে আজই। তোমাদের কেসের রিপোর্ট লিখে নিতে হবে।
তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পর রবিন বলল, যাক, একটা কাজের কাজ হলো। ওকে কি করে সাহায্য করা যায়, ভাবছিলাম। আমার ভাগের পুরস্কারের টাকাটা ওকে দিয়ে দেব। আর্ট স্কুলে যাতে ভর্তি হতে পারে।
আমারটাও, সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করল মুসা।
পুরোটাই দিয়ে দেয়া হবে। তাতেও না কুলালে অন্য ব্যবস্থা করার কথা ভাবব। চলো, ওকে খুঁজে বের করি। সুখবরটা জানাই, বলে উঠতে গেল কিশোর।
কিন্তু ওঠার আগেই দরজায় দেখা দিল পিচার। হাসিমুখে ভেতরে ঢুকল কুকুরের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে।