তবে আজ রাতে ডোজ বোধহয় কম হয়ে গিয়েছিল, কিংবা অন্য কোন কারণে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে ওষুধের ক্ষমতা, ফলে খেপে উঠেছিল। সে জন্যেই পর পর দুবার পেঁচার ডাক ডাকতে হয়েছিল, সব ঠিক আছে জানানোর পর পরই জানাতে হয়েছিল আমার লোকদের, ঠিক নেই, সাবধান হও। তবে ভাগ্য ভাল, কারও কোন ক্ষতি না করেই খাঁচায় ফিরেছে পুমাটা। হয়তো তার সামনে পড়েনি কেউ। পড়লে ছাড়ত বলে মনে হয় না।
ছাড়েন কেন? মূসার প্রশ্ন।
কে ওটার গু সাফ করবে? বাইরেই সেরে আসতে পাঠাই। আরেকটা কারণ আছে, যেদিন আমাদের কাজ থাকে সেদিন পাহারা দেয়ার কাজটাও অনেকটা ওকে দিয়ে করাই। ব্ল্যাক হোলোতে অচেনা কেউ ঢুকলে ঠেকাবে। ও বাইরে বেরোলে আরও একটা উদ্দেশ্য সফল হয় আমাদের, ওই যে বললাম, ডাইনী। চিৎকার করে। ওর ভয়াবহ ডাক শুনে লোকে ভাবে ডাইনীর। চিৎকার। ভয়ে আর এ পথ মাড়ায় না কেউ। সাধারণ একটা পুমার কাছে আর। কত কাজ চাও?
আজকে অবশ্য নতুন একটা কাজ করাব ওকে দিয়ে। রহস্যময় কণ্ঠে বলল ডোবার। খাঁচার এদিকেও একটা দরজা আছে, শেকল টেনে তুলে। নেয়া যায়। পালাতে যদি চাও, মুচকি হেসে আবার চোখ টিপল সে, সহজ একটা পথ বাতলে দিতে পারি। এদিককার দরজাটা তুলে ফেলবে, তারপর ওদিকেরটা, আর কোন বাধা থাকবে না, পুমাটাকে ডিঙিয়ে কেবল ওপাশের সুড়ঙ্গে গিয়ে ঢুকবে। ব্যস, বেরিয়ে যেতে পারবে।
ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা লাগাল সে। বাইরে থেকে ভারি খিল তুলে দিল। চেঁচিয়ে বলল, ও, নতুন কাজটা কি, বলতে ভুলে গেছি। আরও একটা শেকল আছে আমার এখানে। এটা টেনেও খাঁচার তোমাদের দিকের দরজাটা ভোলা যায়। ভাবছি, আজই রাতে কোন একসময় সেটা তুলে নেব। গুডবাই।
টর্চ নিয়ে গেছে ডোবার। ঘর অন্ধকার হয়ে গেছে। তবে নিজের টর্চটা শার্টের মধ্যে লুকিয়ে ফেলেছিল মুসা, সেটা বের করে নিয়ে আলো জ্বালল। পরীক্ষা করে দেখতে লাগল তাদের বন্দিশালাটা।
নাহ, কোন পথ নেই, দেখেটেখে নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে। আমাদের একমাত্র ভরসা এখন রবিন। নিরাপদে বেরিয়ে গিয়ে পুলিশ নিয়ে যদি ফিরে আসতে পারে!
অহেতুক ব্যাটারি নষ্ট না করে আলোটা নিভিয়ে দিল মুসা। গভীর অন্ধকারে ঢেকে গেল ঘর। মাত্র কয়েক ফুট দূরে খাঁচার মধ্যে অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারি করছে পুমাটা।
অনেকক্ষণ পর বাইরের করিডরে কথা শোনা গেল। ডোবার বলছে, ছেলেটাকে পেলে না?
না, বস, জবাব দিল ফেরেলের খসখসে কণ্ঠ। কুয়ার বাইরে বেরিয়েই শুনলাম গাড়ির শব্দ। লাল কনভারটিবলটা চলে যাচ্ছে। বুঝলাম, কোন কারণে ছেলেটা পালাচ্ছে। ট্রাক নিয়ে পিছু নিলাম। কিন্তু সাংঘাতিক গাড়ি ওর, চালায়ও ভাল, কাছেই যেতে দিল না আমাকে…
আর তুমিও পরাজিত হয়ে ফিরে এলে, গর্দভ! গর্জে উঠল ডোবার। জানো, এখন আমাদের কি হবে…
কিছুই হবে না, বস, ও আর কিছু করতে পারবে না আমাদের হাসি শোনা গেল বিশালদেহী লোকটার। আমিও যতটা সম্ভব গতি বাড়ালাম। এত্তবড় ট্রাক নিয়ে কি আর ওই গাছপালার মধ্যে জোরে চলা যায়, বলুন? তবে। থামলাম না। মোড় নিয়ে চোখের আড়ালে চলে গেল গাড়িটা। একটু পরেই শুনলাম সাংঘাতিক শব্দ। গিয়ে দেখি, নিচে পড়ে আগুন ধরে গেছে গাড়িতে। ওই গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাচবে ও? অসম্ভব!
গুড! শান্ত হয়ে এল ডোবার। একটা ঝামেলা নিজে নিজেই কমল!
অন্ধকারে যেন বরফের মত জমে গেছে কিশোর আর মুসা, অবশ হয়ে আসতে চাইছে হাত-পা।
.
১৬.
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কথা ফুটল না ওদের মুখে। তারপর বিড়বিড় করল মুসা, এ হতে পারে না, কিশোর! এটাস্পত্যি হতে পারে না!
গল্পটা আমিও বিশ্বাস করতে পারছি না, গলা কাঁপছে কিশোরের। বেরোতেই হবে আমাদের, যে ভাবেই হোক, সত্যিটা জানতে হবে!
বেরোনোর একমাত্র পথ, খাঁচার দরজাটার কাছে এসে দাঁড়াল ওরা।
শিকের কাছে এসে মাথা ঠেকিয়ে ভয়ঙ্কর সুরে গরগর করে উঠল পুমাটা।
মোজা, শার্ট, বেল্ট, সোয়েটার সব খুলে ফেলল, কিশোর বলল। একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়।
মুহূর্তে সব খুলে খাঁচার সামনে স্তূপ করে ফেলল দুজনে।
একটা জিনিসকে সব জানোয়ারই ভয় করে, বিড়বিড় করল কিশোর। দুটো বেল্টকে এক করে পাকিয়ে নিল সে, তার ওপর জড়াল সোয়েটার আর শাট। মোজা দিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে বাঁধল, যাতে সহজে না খোলে কাপড়গুলো।
কি করছ? বুঝতে পারছে না মুসা।
জবাব না দিয়ে পকেট থেকে লাইটার বের করল কিশোর। বুঝে গেল মুসা, আগুন!
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আগুনকে ভয় পায় না এমন জানোয়ার নেই।
লাইটার জেলে কাপড়ে তৈরি বিচিত্র মশালটার মাথায় আগুন ধরল সে। আগুন দেখেই চাপা গর্জন করতে করতে খাঁচার দরজার কাছ থেকে সরে গেল পুমাটা। টর্চ নিভিয়ে দিল মুসা। কিন্তু অন্ধকার হলো না আর ঘরটা, মশালের আলোয় আলোকিত। বিহূত ছায়া নাচছে দেয়ালে।
কি ঘটে পরীক্ষা করে দেখার জন্যে মশালটা খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে। পূমাটাকে খোঁচা মারার ভঙ্গি করল কিশোর। গর্জে উঠে একলাফে সরে গেল ওটা। মুচকি হাসল সে। বুঝল কাজ হবে। মুসাকে বলল, শেকল টেনে আস্তে আস্তে দরজাটা তোলে।
লোহায় লোহায় ঘষা লাগার শব্দ তুলে উঠে যেতে শুরু করল দরজাটা। সামনে মশাল বাড়িয়ে ধরে ঢুকে গেল কিশোর। এগোল পুমাটার দিকে। ভয়ে, রাগে হিসিয়ে উঠে খাঁচার দেয়ালে নিজেকে ঠেসে ধরল ওটা। বিশাল থাবা বাড়িয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করতে চেয়েও আবার পিছিয়ে যাচ্ছে।