ক্যাপ্টেন রিচটন? ছুটে গেল রবিন।
কে তোমরা? দুর্বল কণ্ঠস্বর মানুষটার।
জানাল কিশোর, আমরা গোয়েন্দা। মিস্টার সাইমন আপনার চিঠি পেয়েছেন।
আশার আলো ঝিলিক দিল রিচটনের চোখে, সে কোথায়? মাথা তুললেন তিনি।
তিনি জরুরী কাজে ব্যস্ত। সেজন্যেই আমাদের পাঠিয়েছেন।
আলো নিভে গেল আবার চোখ থেকে। গড়িয়ে পড়ে গেল মাথাটা। একজন দক্ষ গোয়েন্দার পরিবর্তে তিনটে ছেলেকে দেখে নিরাশ হয়েছেন রিচটন, সেটা বুঝে কিশোর বলল, কদিন ধরেই এখানে আপনাকে খোঁজাখুঁজি করছি, ক্যাপ্টেন। আজকে পেলাম। এখন সাবধান থাকতে হবে আমাদের, নইলে বিপদে পড়ব। ডোবার আর তার চ্যালারা কোথায় আছে, এখনও জানি না।
আমি জানি ওরা কোথায়, কনুইয়ে ভর দিয়ে উঠে বসলেন ক্যাপ্টেন। পাথরের কেবিনটাতে। এই ঘর থেকেও যাওয়া যায়, ওই দরজা দিয়ে। কিশোররা যেদিক দিয়ে ঢুকেছে তার উল্টো দিকের আরেকটা দরজা দেখালেন তিনি।
তার শার্টের ছেঁড়া জায়গাগুলো চোখ এড়াল না কিশোরের। ঝোপের কাটায় আটকে থাকা কাপড়ের টুকরোগুলো এটা থেকেই ছিঁড়েছে, বুঝতে পারল।
তোমরা একা কিছু করতে পারবে না, গিয়ে শেরিফকে জানাও, পুলিশ নিয়ে এসো। ওরা ডাকাত, ভয়ঙ্কর লোক। দলটা লুটপাট করে বেড়ায় বাইরে বাইরে, মাল এনে লুকিয়ে রাখে এখানে। ডোবার ওদের নেতা, উকিল হুগারটাও আছে তার দলে। তোমাদেরকে এখানে দেখে ফেললে বিপদ হবে।
চলুন আপনাকে বের করে নিয়ে যাবে, মুসা বলল। কুয়াটাতে একটা সিঁড়ি আছে। সেটা বেয়ে ওপরে ওঠা যাবে। ওই পথেই ঢুকেছি আমরা, পালাতেও পারব। ওরা কিছু জানবেই না।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার কিশোর। বলল, কিন্তু ওরা যখন দেখবে, ক্যাপ্টেন নেই, বুঝবে খেল খতম। গা ঢাকা দেবে। ধরতে আর পারব না।
তুমি ঠিকই বলেছ, একমত হলেন ক্যাপ্টেন। তার চেয়ে যা বললাম, তাই করো, গিয়ে পুলিশ নিয়ে এসো…
বরং এক কাজ করো, রবিনকে বলল কিশোর। তুমি চলে যাও। শেরিফকে খবর দাও। আমি আর মুসা থাকছি এখানে।
কি ভেবে তর্ক করল না রবিন, বেরিয়ে গেল।
কিশোর আর মুসাকেও যাওয়ার জন্যে চাপাচাপি করে করে হাল ছেড়ে দিলেন ক্যাপ্টেন, যাবে না ওরা। শেষে কিশোরের প্রশ্নের জবাবে তার কাহিনী বলতে আরম্ভ করলেন, চিৎকারটা প্রথম যখন শুরু হলো, বিশেষ মাথা ঘামালাম না আমি। তারপর কুকুর হারাতে লাগল। মনে পড়ল ডাইনীর কিংবদন্তীর কথা। ক্যালেন্ডারে লিখে রাখতে লাগলাম ডাক কবে শোনা যায়, আর কুকুর কবে হারায়। কোনটা কি কুকুর, মালিক কে, তা-ও লিখলাম, পরে যাতে ভুলে না যাই সে-জন্যে। দুটো ঘটনার মধ্যে একটা যোগাযোগ লক্ষ করলাম। সেজন্যেই ভিকটরকে চিঠি লিখেছিলাম, জানি, এ সব উদ্ভট রহস্যগুলোতে কাজ করে আনন্দ পায় সে। শেরিফকে গিয়ে বলতে পারতাম, কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত একজন পুলিশ অফিসার এ সব গুজবে বিশ্বাস করে তদন্তের সাহায্য চাইতে গেছি দেখলে মনে মনে হাসত সে। ভাবত, বুড়োটার মাথায় দোষ পড়ে গেছে।
আপনি কি ডাইনী বিশ্বাস করেন? ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল মুসা।
না। তবে ব্যাপারটা বেশ দ্বিধায় ফেলে দিয়েছিল। তলে তলে সিরিয়াস কিছু একটা ঘটছে বুঝতে সময় লাগল। হাইজ্যাকারদের কথা আগেই শুনেছি, সন্দেহ করলাম, ওরাও এসে আস্তানা গেড়ে থাকতে পারে এখানে। তারপর একরাতে আমার ককার স্প্যানিয়েল কুকুরটাও চুরি হয়ে গেল। আর কারও অপেক্ষা না করে নিজেই তদন্ত করব ঠিক করলাম।
মাথা ঝাঁকাল কিপোর। এবং সেদিন বেরিয়েই ধরাটা পড়লেন।
হ্যাঁ, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন। সঙ্গে বন্দুক নিয়েছিলাম। হোলোতে নেমে খুঁজতে শুরু করলাম। ঝোপের মধ্যে একটা রহস্যজনক শব্দ শুনে এগিয়ে গেলাম সেদিকে, ভেতরে কে জিজ্ঞেস করলাম? জবাব পেলাম না। তারপর দেখি দুটো জ্বলন্ত চোখ, পরক্ষণেই ভয়ঙ্কর এক চিৎকার। একটা পুমা। এখানে ওই জানোয়ার দেখে খুব চমকে গিয়েছিলাম, কখনও শোনা যায়নি এই এলাকায় পুমা আছে। গুলি করতে দেরি করে ফেললাম। আমি নিশানা করার আগেই লাফ দিল ওটা। দুটো গুলির একটাও লাগাতে পারলাম। আমাকে ধরার জন্যেই লাফ দিয়েছিল, কিন্তু গুলির শব্দে ভয় পেয়ে পালাল। মনে হলো, পুরোপুরি বুনো নয়। তা ছাড়া কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল।
গুলির খোসাগুলো পেয়েছি আমরা, মুসা বলল।
গুলির শব্দ শুনে চুপি চুপি দেখতে এল ডোবার। পেছন থেকে মাথায় বাড়ি মেরে বেহুশ করে ফেলল আমাকে। জ্ঞান ফিরলে দেখি, ডোবারের কেবিনটাতে শুয়ে আছি। রান্নাঘরের দেয়ালে পাথরের একটা গোপন দরজা খুলছে সে। আগে থেকে জানা না থাকলে দরজাটা আছে ওখানে বোঝাই যায় না।
বেহুঁশের ভান করে পড়ে রইলাম। আমাকে হিঁচড়ে হিঁচড়ে একটা গলি পার করে আনল সে, তারপর একটা ঘর–একধারে অনেকখানি জায়গায় শিক লাগিয়ে আলাদা করা, হাজতের মত; এবং সবশেষে নিচু একটা দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে এনে ফেলল এই ঘরটায়। তারপর থেকেই আছি। একটাই ভরসা ছিল আমার, ভিকটরকে চিঠি লিখেছি, সে আসবেই। কেবিনে আমাকে না পেলে খুঁজে বের করবে।
অথচ তিনি কল্পনাও করেননি আপনি এই বিপদের মধ্যে আছেন,. কিশোর বলল। তাহলে সব কাজ বাদ দিয়ে নিজেই ছুটে আসতেন।
ওরা এসে কি কি করেছে রিচটনকে বলতে লাগল সে। হুগারফ তার। কাছে টাকা পায় বলেছে শুনে রেগে উঠলেন ক্যাপ্টেন, মিথ্যে কথা! আমার কাছে কেউ টাকা পায় না। ওই বাহানা করে ও তোমাদের খোঁজ নিতে। গিয়েছিল। ওর মত একটা চোরের কাছে টাকা নিতে যাব কেন আমি?