কৌতূহলী হয়ে উঠল কিশোর, কেন?
জায়গাটা ভাল না। ডাইনীর আসর আছে। দুশো বছর আগে এখানকার এক সুন্দরী মেয়ে ডাইনী হয়ে যায়। কুত্তা দেখতে পারত না সে, মন্ত্র পড়ে ওগুলোকে গায়েব করে দিত। তারপর কি যে করল কে জানে, জোয়ান জোয়ান মানুষগুলো হঠাৎ অসুখ হয়ে মরে যেতে শুরু করল।
ঘাবড়ে গেছে মুসা। চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, কেউ কিছু করতে পারল না তার?
চেষ্টা কি আর কম করেছে। লোকে ধরে আটকে রেখে দিল ডাইনীটাকে। ভাবল, এইবার শয়তানি বন্ধ হবে। কিন্তু তা কি আর হয়। একদিন উধাও হয়ে গেল সে, ঢুকে পড়ল গিয়ে ব্ল্যাক হোলোর কাছে বনে।
রাতে বেরিয়ে এসে ঘুরে বেড়াত গায়ের পথে পথে, মন্ত্র পড়ে গরুকে শুকিয়ে মারত, কুত্তা ধরে নিয়ে যেত, আর ফিরে আসত না ওগুলো। লোকের ধারণা, কুত্তা খেত ডাইনীটা। আরও যত রকমের শয়তানি আছে করত। তারপর এক রাতে ভয়ানক চিৎকার শোনা গেল। গায়ের সবচেয়ে সাহসী দু-চারজন লোক গিয়ে দেখল, একজায়গায় একটা গর্ত হয়ে আছে। মাটি পুড়ে কালো হয়ে। গেছে।
কি-ক্কি হয়েছিল! ভয়ে তোতলাতে শুরু করল মুসা।
লোকের ধারণা, স্বয়ং শয়তান বেরিয়ে এসে ডাইনীটাকে ধরে নিয়ে। গেছে মাটির তলে! ভয়ে ভয়ে আবার এদিক ওদিক তাকাল মিসেস ভারগন। এর প্রায় একশো বছর পর আবার রহস্যজনক ভাবে কুত্তা হারাতে আরম্ভ করল। গর্তটার কাছে রাতে শোনা যেতে লাগল ডাইনীর চিৎকার। যেমন হঠাৎ করে আরম্ভ হয়েছিল, কিছুদিন পর আবার হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল। আরও একশো বছর পর এখন আবার যখন কুত্তা হারাতে শুরু করেছে, রাতে চিৎকার শোনা যায় শোনো, তোমাদেরকে ভাল ছেলে বলেই মনে হচ্ছে আমার, সেজন্যেই সাবধান করছি, নইলে আমার কি।
নিগ্রো ছেলেটার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যেতে দেখল মিসেস ভারগন। শ্বেতাঙ্গ ছেলেটার বিশেষ কোন ভাবান্তর হলো না। আর তৃতীয় ছেলেটার চোখ জুলজুল করছে।
বাড়ির ভেতরে টেলিফোনের শব্দ শোনা গেল।
কে আবার করল? যাই, দেখি। ভেবেছিল, ডাইনীর কথা শুনে ভয়ে একেবারে কাবু হয়ে যাবে ছেলেগুলো, সঙ্গে সঙ্গে ফিরে যাবে। হলো না। দেখে খানিকটা হতাশই হলো মহিলা। ভোতা স্বরে বলল, আমার সাবধান করা দরকার করলাম, শোনা না শোনা তোমাদের ইচ্ছে।
.
০২.
আমার রোম খাড়া করে দিয়েছে। মুসা বলল।
লো গীয়ারে গাড়ি চালাচ্ছে রবিন, ওপরের দিকে উঠছে। তুমিই না তখন বললে এই যুগে আর ডাইনী-ফাইনী বিশ্বাস করে না কেউ, তুমিও কোরো না।
কিন্তু এ জায়গাটা ভাল না। বলা যায় না, এখানে থাকতেও পারে। ঘন বন, একটা-দুটো.বাড়ি..এই কিশোর, মহিলা বানিয়ে বলেনি তো এ সব কথা? কি মনে হয় তোমার? পটির কুত্তাটা যে হারিয়েছে সেটাও তো ঠিক, নইলে অত কাদবে কেন?
হেসে বলল রবিন, এ সব গল্প এ ভাবেই ছড়ায়। রহস্যময় ঘটনা ঘটতেই পারে। আসল কারণটা না খুঁজে রঙ চড়িয়ে যার যা ইচ্ছে বানিয়ে বলে দেয়। যত দোষ ফেলে নিয়ে গিয়ে ডাইনী কিংবা ভূতের ওপর।
কিশোর বলল, কিছু বুঝতে পারছি না। চিৎকারটাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না, রবিন নিজে না শুনলে আমাদের আগ বাড়িয়ে এ ভাবে বলত না মিসেস ভারগন।
পাহাড়ের ওপরে উঠে প্রথম যে জিনিসটা চোখে পড়ল, তা হলো নতুন। রঙ করা একটা লেটার-বক্স। নাম লেখা রয়েছে: ডি. রিচটন। তার ওপাশে ঘাসে ঢাকা ছোট্ট একটুকরো খোলা জায়গা। জায়গাটাকে দু-পাশ থেকে ঘিরে এসেছে ঘন পাতাওয়ালা হার্ডউড আর দেবদারু গাছের জঙ্গল। ঠিক মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে কাঠের তৈরি ছোট একটা কেবিন। বাড়ির ওপাশ থেকে উঁকি দিয়ে আছে পুরানো একটা গাড়ির নাক।
বাহ, গাড়ির যত্ন করেন ক্যাপ্টেন, চিনতে পারল রবিন। পনেরো বছর আগের মডেল, অথচ একেবারে ঝকঝকে রেখেছেন।
বাড়ির পেছনে কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ করেই যেন শূন্যে মিলিয়ে গেছে ঘাসে ঢাকা জায়গাটা। ওটা আসলে একটা বিরাট গর্তের কিনারা। কিনারে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যাবে, ঘাস শেষ, তার জায়গা দখল করেছে ওখানে ধূসর, মসৃণ পাথর, প্রায় খাড়া হয়ে নেমেছে বাটির মত দেখতে একটা উপত্যকায়, ঢুকে পড়েছে লতায় ছাওয়া ঘন জঙ্গলের মধ্যে।
এটাই ব্ল্যাক হোলো, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। আশ্চর্য! ওখানকার গাছগুলো পর্যন্ত কালো লাগছে। অথচ এ রকম লাগার মত এতটা অন্ধকার কিন্তু হয়নি এখনও।
কিন্তু ক্যাপ্টেন কোথায়? বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। আমাদের গাড়ির শব্দ নিশ্চয় শুনেছেন। আসছেন না কেন? চিৎকার করে ডাকল, ক্যাপ্টেন রিচটন, আমরা এসেছি! তিন গোয়েন্দা!
কোন সাড়া পাওয়া গেল না। অবাক হলো ওরা। আসার খবর চিঠি লিখে, জানিয়েছে ক্যাপ্টেনকে, তবে কি চিঠি পাননি? সেটা তো হতে পারে না। আর চিঠি পান বা না পান, ডাক শুনে এসে দেখার তো কথা?
এগিয়ে গিয়ে দরজায় টোকা দিল রবিন। ক্যাপ্টেন! ক্যাপ্টেন রিচটন।
জবাব এল না এবারও।
দরজায় তালা নেই। ঢুকে পড়ল ওরা। সুন্দর, সাজানো-গোছানো একটা ঘর, এককোণে ছোট একটা বাংক। শুধু গাড়িরই যত্ন করেন না ক্যাপ্টেন, সব জিনিসেরই করেন, বোঝা গেল। কিন্তু তিনি গেলেন কোথায়?
ওপাশের ছোট রান্নাঘরটায় ঢুকল মুসা। মুহূর্ত পরেই তার চিৎকার শোনা গেল, অ্যাই, দেখে যাও! বন্যা হয়ে গেছে!
দৌড়ে গেল কিশোর আর রবিন। অনেক পানি জমে আছে মেঝেতে, তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মুসা। ওই পানিটুকু বাদ দিলে রান্নাঘরটাও শোবার ঘরের মতই গোছানো, যেখানে যেটা থাকা দরকার, ঠিক সেখানেই আছে। চকচক করছে প্যান, চামচ, বাসন-পেয়ালা। পরিষ্কার পর্দাগুলোর কোথাও এতটুকু দাগ নেই।