মগে চুমুক দিয়ে রবিন বলল, তাহলে বোঝা গেল, হুগারফ ডোবারের উকিল। এবং দু-জনেই টাকার পাগল।
কিছু টাকা আসবে বলল ডোবার, কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। কোত্থেকে আসবে বলো তো?
আর যেখান থেকেই আসুক, সম্পত্তি বিক্রি করে নয় এটা ঠিক, কিশোর বলল। এখনও জায়গাটার কোন মীমাংসাই হয়নি।
বেআইনী কিছু করছে না তো? রবিনের প্রশ্ন।
কি জানি! তবে টাকার যখন এত লোভ, করলে অবাক হব না। তার ভাইয়েরও তো সে-রকমই সন্দেহ।
কিশোর, মুসা বলল, হুগারফের পাওনা টাকা দেয়ার ভয়ে কোথাও গিয়ে লুকাননি তো ক্যাপ্টেন?
মাথা নেড়ে রবিন বলল, আমার মনে হয় না। একজন পুলিশ অফিসার, মিস্টার সাইমনের বন্ধু, হুগারফের মত একটা হেঁচড়া লোক তার কাছে টাকা। পাবে, এ কথা আমার বিশ্বাস হয় না। কিশোরের দিকে তাকাল সে, ডোরারের কথা শুনে কিন্তু মনে হলো; টাকার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিছু একটা ঘটাবে মনে হলো। কি, বলো তো?
এটা জানলে তো অনেক প্রশ্নেরই জবাব পাওয়া যেত। চলো, শুয়ে পড়ি, রাত প্রায় শেষ। এখন মাথা ঘামিয়ে কিছু করতে পারব না, কাজ করবে না মগজ। তবে একটা কথা বলে রাখি, কাল সকালে উঠেই ডরোথি আরিগনের খোঁজে বেরোব আমরা। দুই ভাইয়ের সঙ্গেই দেখা হলো, বোনকে বাদ দেয়া উচিত না। হয়তো ওখানে জরুরী কোন তথ্য পাওয়া যাবে।
পাবে কোথায় তাকে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
দেখি, সে-কথা সকালে উঠে ভাবব।
.
অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙল ওদের। কুকুরের বাচ্চাটা খুব শান্ত, ডাকাডাকি করে অহেতুক বিরক্ত করেনি বলেই ওরা ঘুমাতে পারল।
নাস্তার টেবিলে বসে ঘোষণা করল কিশোর, খেয়ে ফরেস্টবার্গে রওনা হব। প্রথমে ডরোথি আরিগনের নামটা খুঁজব টেলিফোন গাইডে। না পেলে তখন অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।
কি ব্যবস্থা? জানতে চাইল রবিন।
খোঁজখবর করব। মহিলাদের খবর মহিলারাই বেশি রাখে। মহিলারা চালায় এমন সব দোকানে ঢুকে তাদেরকে জিজ্ঞেস করব। পুরুষেরা মুখ বন্ধ রাখলেও মহিলারা অতটা রাখতে পারবে না। কিছু না কিছু ফাঁস করে দেবেই।
সুতরাং নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়ল ওরা।
ফরেস্টবার্গে এসে সহজেই পেয়ে গেল ডরোথি আরিগনের ঠিকানা। কোর্টহাউসে পাবলিক টেলিফোনের ব্যবস্থা আছে যেখানে, সেখানে একগাদা ফোনবুক পাওয়া গেল। ফরেস্টবার্গের আশেপাশে আরও যে কটা শহর আছে, সবগুলোর ফোন নম্বর আছে একটা বইতে। দেখা গেল, ডরোথি বাস করে উডে।
ম্যাপ দেখে রাস্তা বের করে ফেলল কিশোর। গাড়ি চালাল রবিন।
দুপুরের একটু আগে লাল গাড়িটা এসে ঢুকল ব্রুকউডের শান্ত, প্রায় নির্জন মেইন রোডে। দুই পাশে বড় বড় সাদা বাড়ি, সামনে সুন্দর লন আর বাগান। প্রচুর গাছপালা আছে।
সুন্দর শহর, দেখতে দেখতে বলল কিশোর। পুরানোও।
এক কাজ করলে হয় না? রবিন বলল, ডরোথির সঙ্গে দেখা করার আগে তার সম্পর্কে বাইরের লোকের কাছে একটু খোঁজখবর নিয়ে নিই। কথা বলতে সুবিধে হতে পারে।
মন্দ বলনি।
একজায়গায় বেশ কয়েকটা পুরানো বাড়ি প্রায় গায়ে গায়ে লেগে থাকতে দেখা গেল। বাণিজ্যিক এলাকা, আন্দাজ করল কিশোর। গাড়ি রাখতে বলল। রবিনকে।
সাইনবোর্ড দেখে একটা চায়ের দোকানে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। কুকুরের বাচ্চাটাকে গাড়িতে রেখে এসেছে,। দোকানের ভেতরের চেহারা দেখে দমে গেল মুসা। বলল, এখানে ঢুকে লাভটা কি হলো? খাওয়ার জিনিস পাব বলে তো মনে হয় না। সবই বুড়োবুড়ি; দেখগে, সবগুলো ডায়েট কন্ট্রোল করে।
এদের কাছেই তো খবরটা পাওয়া যাবে, হেসে বলল কিশোর। কাজ নেই কর্ম নেই, মানুষের সমালোচনা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই ওদের।
ওরা টেবিলে গিয়ে বসতেই লম্বা, মাঝবয়েসী অ্যাপ্রন পরা এক মহিলা এগিয়ে এল।
গুড মর্নিং বলল কিশোর। আমরা বহুদূর থেকে এসেছি, বেড়াতে। খিদে পেয়েছে। ভাল কিছু দিতে পারেন?
কিশোরের ভদ্রতায় খুশি হলো মহিলা। হেসে বলল, বসো, আনছি।
মুসাকে অবাক করে দিয়ে ডিমের ওমলেট, ভেজিটেবল সালাদ আর বরফ ও তাজা মিন্টের ফ্লেভার দেয়া কোল্ড টী এনে দিল মহিলা। জিজ্ঞেস করল, চলবে?
চলবে মানে! এখানে এলে এই দোকান ছাড়া আর চা খেতেই ঢুকব,তাড়াতাড়ি ডিমের প্লেটটা টেনে নিল মুসা।
আস্তে খাও, রসিকতা করে বলল রবিন। বুড়োবুড়িদের খাবার, গলায় আটকে ফেলো না।
চলে গেল মহিলা। ফিরে এল বড় এক প্লেট স্ট্রবেরি পাই নিয়ে। টেবিলে নামিয়ে রাখল।
আন্তরিক খুশি হলো মুসা। ঢোকার আগে যে অনীহাটা ছিল, একেবারে দূর হয়ে গেছে।
খেতে খেতে কিশোর জিজ্ঞেস করল, ডরোথি আরিগন নামে কাউকে চেনেন? ব্ল্যাক হোলোতে বিশাল সম্পত্তি আছে তাদের। আমার মার বান্ধবী। বলেছে দেখা করে যেতে। কিন্তু আমি চিনি না।
চিনব না কেন? অনেক বড় দরজির দোকান দিয়েছে। আশপাশের সব শহর থেকে লোকে কাপড় বানাতে আসে তার কাছে।
কাছেই থাকে?
না।
হ্যাঁ। মহিলা বেশ ভাল, তবে অহঙ্কারী। এই অহঙ্কারটা অবশ্য আরিগনদের রক্তের দোষ, ওদের সবার মধ্যেই আছে। আর এই নিয়েই তো গণ্ডগোলটা বেধেছে, কেউ কারও কথা মানতে চায় না, নিজের ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিতে চায়। পরিবারটাই ভেঙে গেল এ কারণে।
নতুন কয়েকজন ঢুকল দোকানে। তাড়াহুড়ো করে সেদিকে চলে গেল। মহিলা, আর কোন কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল না গোয়েন্দারা। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে এল দোকান থেকে। ডরোথির বাড়িতে যাওয়ার সময় রবিন বলল, কি ভাবে কথা শুরু করবে তার সঙ্গে? ছুতোটা কি?