আর্নি হুগারফ
অ্যাটর্নি-অ্যাট-ল
ঢুকবে কি ঢুকবে না দ্বিধা করতে লাগল। সে কি ভেবে না ঢোকাই স্থির করল।
রাস্তা পেরিয়ে কোর্টহাউসের সামনে এসে দাঁড়াল দু-জনে। এত সকালে কেউ কাজে আসেনি।
এক কাজ করি চলো, কিশোর বলল। দোকানগুলোতে খোঁজ নিই। আরিগনদের কেউ চিনতেও পারে।
পরের একটা ঘণ্টা দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াল দুই গোয়েন্দা। দু একজনের কাছে নামটা পরিচিত হলেও কোথায় শুনেছে মনে করতে পারল। কেউ কোন তথ্য দিতে পারল না। অনেকেই এখানে নতুন, তারা চেনেই না আরিগনদের। আর পুরানো যারা, চিনতে পেরেছে, তারা চেপে গেছে; বাইরের কারও কাছে নিজেদের ঘরের কথা বলতে রাজি না ওরা।
পথের মাথার একটা দরজির দোকান দেখিয়ে কিশোর বলল, চলো, ওইটাই শেষ।
সে-ও বলবে না।
এবার অন্য বুদ্ধি করব। ভাব দেখাব, যেন কাজ করাতে এসেছি।
দরজির দোকানে আবার কি কাজ? অবাক হলো রবিন।
হেসে প্যান্টের একটা ছেঁড়া দেখাল কিশোর। কাল রাতে পাথরে টাতরে খোঁচা লেগে বোধহয় ছিঁড়েছে। রিপু করাব।
দরজা খোলার শব্দ শুনে মুখ তুলে তাকাল বুড়ো দরজি। ছোটখাট মানুষ, মাথা জুড়ে টাক। কাউন্টারে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কী?
ছেঁড়াটা দেখিয়ে কিশোর অনুরোধের সুরে বলল, এটা রিপু করে দেয়া যাবে? আমরা দাঁড়াই।
হাসল বুড়ো। সোনায় বাঁধানো দুটো দাঁত দেখা গেল। খুলে দাও।
দোকানের পেছনের ড্রেসিং রুমে ঢুকে প্যান্টটা খুলে ওখানে রাখা অন্য কাপড় পরে এল কিশোর। টেবিলে বসে কাজ শুরু করল দরজি। দুটো টুলে বসে দেখতে লাগল কিশোর আর রবিন।
পুরানো কাপড় মেরামত করার জন্যে দিয়ে গেছে অনেকেই, মেঝেতে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে সেগুলো। সুন্দর একরোল স্যুটের কাপড় দৃষ্টি আকর্ষণ করল কিশোরের। জিজ্ঞেস করল, নতুন কাপড়ের অর্ডার কেমন পান?
এখানে আর কাজ কোথায়? ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল দরজি। খালি ফুটোফাটা মেরামতের জন্যে নিয়ে আসে।
ওই যে, নতুন কাপড় রেখেছেন?
রেখেছি, যদি কেউ আসে স্যুট করাতে। কিন্তু আসে না, রেডিমেড পোশাকের দিকেই লোকের ঝোঁক, প্যান্টের ফুটোর চারপাশে সুচ চালাতে, চালাতে দুঃখ করে বলল বুড়ো, চল্লিশ বছর ধরে আছি এখানে। এখন আমার। প্রধান ব্যবসা হলো ধোপাগিরি। কিন্তু দশ বছর আগেও অবস্থা এমন ছিল না। অনেকেই আসত পোশাক বানাতে। কাজ করতে করতে একেক সময় অস্থির হয়ে যেতাম। হ্যারিসনরা আসত, মবাররা আসত, আসত আরিগনরা। কত সুন্দর সুন্দর স্যুট যে ওদের বানিয়ে দিয়েছি আমি। আজ আর সে-সব দিন। কোথায়!
আরিগন?
হ্যাঁ, আরিগন, একটা চমৎকার পরিবার। এই এলাকার অনেক পুরানো বাসিন্দা। টাকাও ছিল, বিলাসিতাও ছিল। বুড়ো আরিগন, লম্বা, সুদর্শন একজন মানুষ। আর তার স্ত্রীর কথা কি বলব, খুবই শৌখিন ছিল। সুন্দরী একটা মেয়ে ছিল তাদের, দুটো যমজ ছেলে ছিল–লমা, সুন্দর, একেবারে বাপের মত। চেহারায় এত মিল, কে যে কোনটা আলাদা করাই মুশকিল।
যমজ! উত্তেজনা দেখাতে গিয়েও তাড়াতাড়ি সেটা সামলে নিল রবিন, বুড়োকে সন্দিহান করে তোলা যাবে না, দারুণ তো? কি হলো পরিবারটার? এখন আর কাপড় বানাতে আসে না কেন?
দুঃখের সঙ্গে মাথা নাড়ল দরজি, থাকলে তো আসবে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কে কোথায় চলে গেছে কে জানে। মেয়েটার খবর জানি না। যমজদের একজন, নুবার আরিগন শহর ছেড়ে একেবারেই চলে গেছে। আরেকজন, ডোবার, কালেভদ্রে আসে। আবার জোরে নিঃশ্বাস ফেলল বুড়ো। তবে কাপড় আর বানাতে আসে না সে-ও। হাতে তৈরি জমকালো পোশাক পরা ছেড়েই দিয়েছে। পরে কেবল সাদাসিধা কাপড়, যেগুলো পরলে হাঁটাচলার সুবিধে হয়।…নাও, তোমার এটা হয়ে গেছে।
প্যান্টটা পরে নিল কিশোর। ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, তবে রবিনের মতই সেটা চেপে রেখে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, হ্যারিজ কার্নিভ্যালটা এখন কোথায়, বলতে পারবেন? একবার দেখেছি। কিন্তু আমার বন্ধুর, রবিনকে দেখিয়ে বলল, আরেকবার দেখার ইচ্ছে।
ওয়েস্টবাস্কেট থেকে খুঁজে পেতে দোমড়ানো একটা পোস্টার বের করে আনল বুড়ো। দিল কিশোরকে। কবে কোনখানে যাবে কার্নিভ্যালটা, তার শিডিউল করা আছে। বুড়োর মজুরি মিটিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল। দুই গোয়েন্দা।
আরও চমক অপেক্ষা করছিল তাদের জন্যে। কয়েক গজ এগোতে না এগোতেই একটা ওষুধের দোকান থেকে লম্বা একজন মানুষকে বেরোতে দেখল ওরা। আরিগন! মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা। ফিসফিস করে রবিন বলল, বাড়িটা জোরেই মেরেছে পিচার!
তাই তো মনে হচ্ছে। ইনি কোন জন, নুবার, নাকি ডোবার, জানতে পারলে ভাল হত। দেখা যাক, কার্নিভ্যালের হুমবা নতুন কিছু জানাতে পারে নাকি আমাদের।
.
১২.
তখনও ঘুমাচ্ছে মুসা, কিন্তু বাচ্চাটা জেগে গেছে। কিশোর আর রবিনের সাড়া পেয়ে খেউ খেউ শুরু করল।
জেগে গেল মুসা। লাল চোখ মেলে হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করল, এখনও কি ফরেস্টবার্গেই আছি?
দুই ঘণ্টা ধরে আছি, জবাব দিল রবিন। তোমার স্বপ্ন দেখা শেষ হয়েছে?
হয়েছে। তোমাদের কি খবর?
বলতে লাগল রবিন। শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার, ঘুম চলে গেল বহুদূরে। একটা ম্যাপের ওপর ঝুঁকে পড়েছে কিশোর।
স্টার্ট দিল রবিন। শহর থেকে বেরিয়ে কিশোরের নির্দেশে পশ্চিমে যাওয়ার একটা রাস্তা ধরল।
যাচ্ছি কোথায়? জানতে চাইল মুসা।