এ তো আরিগন! অবাক কণ্ঠে বলে উঠল রবিন। কিন্তু ছবি এঁকে কেন? লিখলেও আরও সহজ হয়ে যায়।
লিখতে জানে না বোধহয়। হাত তুলল কিশোর, দাঁড়াও, পিচারের আঁকা এখনও শেষ হয়নি।
টেবিল ঘিরে এসেছে তিন গোয়েন্দা, তাকিয়ে রয়েছে কাগজটার দিকে। লম্বা একজন মানুষ আঁকল পিচার, হাত আঁকল, ফগের চেহারার একটা বাচ্চা কুকুর ধরেছে হাতটা।
আবার চেঁচিয়ে উঠল রবিন, ও বলতে চায়, আরিগন চুরি করেছেন বাচ্চাটাকে!
.
১১.
দাঁড়াও, আবার বলল কিশোর, ওর আঁকা এখনও বাকি আছে।
আরও কয়েকটা কুকুরের ছবি আঁকল পিচার–একটা ককারেল স্প্যানিয়েল, একটা জার্মান শেফার্ড, আর দুটো হাউন্ড।
ওটা আবার কি আঁকছে? পিচারের পেন্সিলের দিকে তাকিয়ে বলল রবিন, একটা ধূসর কুকুর?
ধূসর কিংবা বাদামী, কিশোর বলল। দেখো, বা কানটা সাদা রেখে দিয়েছে।
খাইছে! বলে উঠল মুসা, ওটা তো পটির কুকুর! তারমানে ডবকেও চুরি করেছেন আরিগন!
বার বার আরিগন নামটা শুনেই বোধহয় মুখ তুলে একটা রাগত ভঙ্গি করল পিচার। তারপর রেখা টেনে টেনে সবগুলো কুকুরকে যোগ করে দিল মানুষটার ছবির সঙ্গে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল ছেলেটা। দৃষ্টি আর ভঙ্গি দেখে মনে হলো আরও কিছু বলতে চায়। আরিগনের ছবিতে আঙুল রাখল, তারপর ফগকে দেখাল। হঠাৎ একটা চেয়ারের নিচে চলে গিয়ে মুখ বের করে উঁকি দিল।
ও বলতে চায়, ব্যাখ্যা করল কিশোর, গাছের আড়ালে কিংবা ঝোপের। মধ্যে লুকিয়ে ছিল।
হাত টান টান করে দিল পিচার, আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আবার বন্ধ করে বোঝাতে চাইল ভারি কিছু চেপে ধরেছে। লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল চেয়ারের নিচ থেকে। হাতের অদৃশ্য জিনিসটা দিয়ে ডোনারের ছবির মাথায় বাড়ি মারল, পরক্ষণেই হাতের কুকুরের বাচ্চাটাকে ছো মেরে কেড়ে নিয়ে ঘুরে দৌড় দেয়ার ভঙ্গি করল।
কি বোঝাতে চাইল বুঝল তিন গোয়েন্দা। সে লুকিয়ে বসে চোখ রাখছিল, আরিগন আসতেই তার মাথায় বাড়ি মেরে বাচ্চাটাকে কেড়ে নিয়ে দৌড় দিয়েছে।
হু, চোরের ওপর বাটপাড়ি! মন্তব্য করল উত্তেজিত রবিন।
কিশোরের প্রশ্ন তখনও শেষ হয়নি, আজ বিকেলে আমাদেরকে পাথর ছুঁড়লে কেন?
আবার চেয়ারে বসল পিচার। কয়েক টানেই এঁকে ফেলল তিনটে ব্যাটল। সেক। ওগুলো দেখিয়ে মুসা আর রবিনের বুকে হাত রেখে ওদেরকে ঠেলে সরানোর ভঙ্গি করল।
হেসে বলল কিশোর, বলেছিলাম না, ও তোমাদের বাঁচাতে চেয়েছিল। সাপগুলো দেখেছিল। তার মানে আরিগনের দলে নয় সে।
আচমকা প্রশ্নটা জাগল রবিনের মাথায়, কুত্তাচোরের পেছন নিয়েই বিপদে পড়েননি তো ক্যাপ্টেন রিচটন?
পড়তে পারেন। তারও তো একটা কুকুর ছিল। আরিগন হয়তো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল, ক্যাপ্টেন পিছু নিয়েছিলেন তার। তারপর গোপন এমন কিছু দেখে ফেলেছিলেন, যেটা কাল হয়েছিল তার।
তখন তাকে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো! পাতায় লেগে থাকা রক্তের কথা ভেবে বলল রবিন।
নতুন সম্ভাবনাটা নিয়ে এতই মজে গেল তিনজনে, নিঃশব্দে কখন যে দরজার কাছে চলে গেল পিচার, খেয়াল করল না। করল সে বেরিয়ে যাওয়ার পর। লাফিয়ে উঠে তার পিছু নিতে গেল মুসা, ধরে ফেলল কিশোর। যাক। ও আমাদের পক্ষেই আছে।
ওর জন্যে কিছু করতে পারলে ভাল হত, রবিন বলল। ছবি আঁকার। হাত দেখেছ? ট্যালেন্ট একটা! আর্ট স্কুলে ভর্তি হলে ফাটিয়ে ফেলবে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। সে-সব পরের ভাবনা। আগে এই রহস্যের একটা কিনারা করা দরকার। বুঝলে, কর্নেল হুমবাকে মন থেকে তাড়াতে পারছি না আমি, আরিগনের সঙ্গে চেহারার এত মিল কেন? ভাবছি, কাল আবার কার্নিভ্যালে গিয়ে হুমবার সঙ্গে কথা বলব। জিজ্ঞেস করব, তার কোন যমুজ ভাই আছে কিনা।
ফরেস্টবার্গে গেলেও তথ্য মিলতে পারে। আরিগন পরিবার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা দরকার।
রাতের ঝড়বৃষ্টির পর খুব ঝলমলে হয়ে দেখা দিল সকাল। গাছের সবুজ পাতা চকচক করছে কাঁচা রোদে। ফুরফুরে মন নিয়ে কেবিন থেকে বেরোল তিন গোয়েন্দা। কিন্তু বাইরে বেরিয়েই থমকে গেল মুসা, বলে উঠল, খাইছে! দেখো!
কনভারটিবলের টপ তুলে দিতে ভুলে গিয়েছিল ওরা, বৃষ্টির পানি জমে আছে গাড়ির মেঝেতে। সীট, সীটের কভার, সব ভেজা। পানি মুছে নিয়েও। তাতে বসে যাওয়া যাবে না।
ক্যাপ্টেনের গাড়িটাই নিয়ে যাই, রবিন বলল। এতে আরেকটা কাজ হবে। তার শত্রুরা দেখলে মনে করতে পারে তিনি পালিয়েছেন, বাধা দেয়ার জন্যে তখন সামনে বেরিয়ে আসতে পারে ওরা।
বুদ্ধিটা ভাল, পছন্দ হলো কিশোরের। এ ছাড়া আর কিছু করারও নেই, তাদের এত ভেজা গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। পানিটানিগুলো মুছে, শুকানোর জন্যে ফেলে রেখে ক্যাপ্টেনের গাড়িটা নিয়েই রওনা হলো ওরা।
রবিনই চালাল, কিশোর তার পাশে, কুকুরের বাচ্চাটাকে নিয়ে পেছনে বসল মূসা। ফরেস্টবার্গে পৌঁছে দেখা গেল সীটে এলিয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে মুসা, বাচ্চাটা কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে তার কোলে। হেসে ফেলে কিশোর বলল, কাল রাতে দু-জনের ওপরই খুব ধকল গেছে। ঘুমাক। চলো, আমরাই যাই।
কোর্টহাউসের দিকে হেঁটে এগোল ওরা। মাত্র আটটা বাজে, রাস্তায় লোকজন কম। আগের দিন ভাল করে দেখা হয়নি, আজ দেখতে দেখতে চলল ওরা। বেশির ভাগ দোকানেরই ওপরতলায় অফিস করা হয়েছে। একটা সাইনবোর্ডে দেখা গেল: