হ্যারিজ কার্নিভ্যাল
এই, থামো তো, মুসা বলল। এদিকের কার্নিভ্যাল দেখার শখ আমার অনেক দিনের। পপকর্নের গন্ধও পাচ্ছি। টেস্টটা দেখি কেমন।
কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। হেসে মাথা ঝাঁকাল গোয়েন্দাপ্রধান।
গাড়ি পার্ক করে নেমে এল তিন গোয়েন্দা। কান ঝালাপালা করে ঝমঝম বাজছে মিউজিক, সেই সঙ্গে ঘোষকের চিৎকার, কোলাহল। প্রচুর দর্শকের ভিড়। বনবন ঘুরছে নানারকম নাগরদোলা, বিচিত্র ওগুলোর নাম–হুঁইপ, অকটোপাস, ম্যাড় হর্স। ওগুলোতে বসা মানুষগুলো সমানে চেঁচাচ্ছে, বাচ্চা বুড়োতে কোন ভেদাভেদ নেই। একপাশে অনেকগুলো স্টল, চিৎকার করে ক্রেতা ডাকছে মালিক আর সেলসম্যানেরা।
অন্য কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা একটা খাবারের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল মুসা। কিনল এক কার্টন পপকর্ন, এক ব্যাগ পানাট, একগাদা ক্যান্ডি।
একটা সাইনবোর্ড দেখিয়ে রবিন বলল, ওই ভাবুটাতে ঢুকলে কেমন হয়?
মুসা আর কিশোরও পড়ল সাইনবোর্ডটাঃ
কর্নেল ডুম হুমবা
নির্ভীক অ্যানিমেল ট্রেনার
মাশাআল্লাহ! পপকর্ন চিবাতে চিবাতে বলল মুসা, নাম বটে। জন্তুর শিক্ষক যখন, হুমবা না রেখে হামবা রাখলেই হত, গরু, মানাত ভাল।
তাঁবুর ভেতর থেকে হিংস্র জানোয়ারের ডাক শোনা গেল। তারমানে বাঘ-সিংহ জাতীয় কিছু আছে। হুমবা কতটা নির্ভীক দেখার জন্যে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে পড়ল তিনজনে। এ
গোলাকার তাঁবুর কেন্দ্রে একটা গোল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আঁটসাট সাদা পোশাক পরা একজন মানুষ, পায়ে গোড়ালি ঢাকা চকচকে কালো বুট। ঘন, ঝাঁকড়া কালো চুল, পুরু গোঁফ, মোটা ভুরু, তীক্ষ্ণ চোখ, হাতে কালো লম্বা চাবুক যেন কর্তৃত্ব জাহির করছে। এর দরকারও আছে, কারণ কাছেই একটু পর পর সাজানো ছোট টুলে তাকে ঘিরে বসে আছে চারটে ভয়ানক জন্তু, দুটো হলদেটে, আর দুটো কালো। চারটেই জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। লম্বা লেজের মাথা থিরথির করে কাঁপছে, বুঝিয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পছন্দ করে না ওরা।
পুমা, নিচু স্বরে বলল রবিন। কি বিরাট দেখেছ!
সপাং করে উঠল চাবুক। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরছে ট্রেনারের শক্তিশালী দেহটা, প্রতিটি জানোয়ারকে টুল থেকে নেমে আবার লাফিয়ে উঠে বসতে বাধ্য করছে।
নাহ, লোকটা সত্যি নির্ভীক, প্রশংসা না করে পারল না কিশোর। যে ভাবে পেছন করে দাঁড়াচ্ছে জানোয়ারগুলোকে, ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লে দেখতেই পাবে না।
কিন্তু ভুল অনুমান করেছে সে। একটা কালো পুমা লাফিয়ে পড়ার জন্যে তৈরি হলো। এক্কেবারে সময়মত কি করে টের পেয়ে পাক খেয়ে ঘুরে গেল ট্রেনার, হিসিয়ে উঠল চাবুক, থমকে গেল জানোয়ারটা, লাফ দেয়া আর হলো না।
খাইছে! এ তো সাংঘাতিক মানুষ! বলে উঠল মুসা।
হ্যাঁ, পাশের সীটে বসা অপরিচিত একজন দর্শক বলল, সাহস আছে। এখনও বুনোই রয়ে গেছে জানোয়ারগুলো, ওগুলো নিয়েই খেলা দেখাচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে আরেকটা ছিল, হলুদ রঙের, এমন শয়তানের শয়তান, হুমবাও বাগ মানাতে পারেনি। একদিন আরেকটু হলেই দিয়েছিল ঘাড় মটকে, শেষমেষ ওটাকে বিদেয় করতে হয়েছে।
অবাক হয়ে হুমবার খেলা দেখল তিন গোয়েন্দা। তারপর তার প্রশংসা করতে করতে বেরোল তাঁবু থেকে। আবার চড়ল গাড়িতে।
.
দুই ঘণ্টা পর, শেষ বিকেলে খাড়া কাঁচা রাস্তা বেয়ে উঠে চলল ওপর দিকে লাল গাড়িটা। দু-পাশের বনের গোড়ায় তখন কালো ছায়া পড়েছে।
মনে হচ্ছে ঠিক পথেই যাচ্ছি, কিশোর বলল। তবু, শিওর হওয়া দরকার। ওই যে একটা বাড়ি।
বাড়িটার সামনে এনে গাড়ি থামাল রবিন। অনেক পুরানো, কাঠের তৈরি ঘর। সামনের বেড়ার রঙ উঠে গেছে বহু আগে। নীরব, নির্জন।
কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না, আশপাশটা দেখতে দেখতে বলল রবিন। কুকুর খেকো ডাইনী
গেটের দিকে এগোল তিনজনে। হাত তুলে বাড়ির পাশে গাছপালার ভেতর দিয়ে যাওয়া একটা রাস্তা দেখাল কিশোর। ওই যে, মানুষ আছে।
রোগাটে, ছোটখাট একজন মহিলা বেরিয়ে এল গাছের আড়াল থেকে। হাত ধরে টেনে আনছে বছর সাতেকের একটা ছেলেকে। চিৎকার করে, কাঁদছে ছেলেটা। গোয়েন্দাদের দেখে এগিয়ে এল মহিলা, আমি মিসেস ভারগন। তোমাদেরকে তো কখনও দেখিনি? কি চাও?
এটা কি রিম রোড? জানতে চাইল কিশোর। ক্যাপ্টেন রিচটনের বাড়িটা খুঁজছি।
রঙ ফ্যাকাসে হয়ে আসা একটা সুতার পোশাক পরেছে মহিলা। আরেকটু এগিয়ে এসে ভালমত দেখল ছেলেদের। রিচটন? সোজা সামনে, পথের মাথার শেষ বাড়িটা। একেবারে ব্ল্যাক হোলোর কিনারে বলে আরেকবার দেখল ছেলেদের।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুসা বলল, কাঁদছে কেন ও? মন খারাপ? এই বাবু, একটা চকলেট খাবে? নাও।
কোন লাভ হবে না, মিসেস ভারগন বলল, ওর কান্না থামবে না। কাল রাতে ওর কুত্তা হারিয়ে গেছে। ওটা না পাওয়া পর্যন্ত আর কোন কিছু দিয়েই বন্ধ করা যাবে না।
তাই নাকি? দেখলে জানাব। কি কুকুর?
এই ছোট জাতের, বাদামী রঙ। একটা কান সাদা। গলায় কলার পরানো। তাতে ট্যাগে নাম লেখা আছে, ডব।
যাওয়ার জন্যে ঘুরল ছেলেরা। শুনতে পেল, ছেলেটাকে ধমক দিয়ে। মিসেস ভারগন বলছে, পটি, তুই কান্না থামাবি! মরে যাবি নাকি একটা কুত্তার জন্যে! তারপর আবার ডাকল গোয়েন্দাদের, এই, শোনো।
তা কিছুটা অবাক হয়েই ঘুরে তাকাল তিন গোয়েন্দা। গেটের কাছে এসে দাঁড়াল মহিলা। এদিক ওদিক তাকিয়ে, কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলল, তোমরা এখানে নতুন, বুঝতে পারছি। সাবধান করে দেয়া দরকার। ব্ল্যাক হোলোর কাছে যেয়ো না।