রিচটন কোথায়? খসখসে কণ্ঠস্বর, অধৈর্য ভাবভঙ্গি।
তিনি নেই, জবাব দিল কিশোর।
নেই? কোথায় গেছে?
জানি না। এলে কিছু বলতে হবে?
আমি টাকা পাই ওর কাছে। দেয় না কেন?
এলে বলব। আপনার নামটা?
অ্যাঁ?.. হুগারফ। আর্নি হুগারফ। বললেই হবে ওকে, চিনবে। আমি ফরেস্টবার্গের অ্যাটর্নি।
অ্যাটর্নি? এক পা এগোল কিশোর, মনে হয় আপনি জানবেন, মিস্টার হুগারফ: ব্ল্যাক হোলোর মালিকের নাম কি? আরিগন?
হ্যাঁ। একটা সামার কটেজ ছিল এখানে ওদের, আগুন লেগে ছাই হয়ে গেছে। চলে গেল সব। তারপর আর কোন হুগারফকে দেখিনি।
ডাইনীর গল্প আপনি বিশ্বাস করেন? ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল কিশোর।
প্রশ্নটায় যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল অ্যাটর্নি। তিনজনের ওপর ঘুরতে লাগল চোখ। তারপর বলল, কিসের ডাইনী! ওই গর্তটাই যত নষ্টের মূল। অদ্ভুত প্রতিধ্বনি তোলে। ওই ধারটা তত কয়েক মাইল দূরে, কিন্তু ওখানে গিয়ে চিৎকার করলেও এখান থেকে স্পষ্ট শোনা যাবে।
তাই নাকি! আচ্ছা, ক্যাপ্টেন রিচটন এলে আপনার কথা বলব।
গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই মুসা বলল, লোকটাকে একবিন্দু পছন্দ হয়নি আমার। কেমন খটখট করে কথা বলে দেখেছ?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমি এখনই পরীক্ষা করে দেখব। কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যায়, এ কথা বিশ্বাস হয় না আমার। গাড়ি নিয়ে হোলোর অন্যপাশে চলে যাচ্ছি। বাতাস এখন এদিকে বইছে। গিয়ে চিৎকার করব, দেখো, তোমরা শোনো কিনা। ওখানে পৌঁছে হেডলাইট জ্বেলে-নিভিয়ে সঙ্কেত দেব।
বারান্দা থেকে নেমে গেল সে।
.
০৭.
ব্ল্যাক হোলোর কিনারে এসে দাঁড়াল মুসা আর রবিন। অন্ধকার হয়ে গেছে। খানিক পর দেখতে পেল দুটো উজ্জ্বল আলো এগিয়ে যাচ্ছে গর্তের অন্য প্রান্তের দিকে। প্রায় দুই মাইল দূরে।
ওটাই কিশোর, দূরবীন চোখে লাগাতে লাগাতে বলল রবিন। কিছুক্ষণের জন্যে অদৃশ্য হয়ে গেল আলোটা। তারপর আবার দেখা গেল, জ্বলছে নিভছে, জ্বলছে নিভছে।
আমাদের দিকে গাড়ি ঘুরিয়েছে কিশোর, আবার বলল রবিন।
চিৎকার শোনার জন্যে কান খাড়া করে রাখল দুজনে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করল। গাড়িটার দিক থেকে এসে গালে পরশ বোলাচ্ছে বাতাস, কিন্তু কোন শব্দ শোনা গেল না। স্থির হয়ে গেল আলো দুটো, ঘুরল, তারপর আবার চলতে আরম্ভ করল। ফিরে আসছে কিশোর।
কেবিনে ফিরে জানাল সে, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছি। হর্নও বাজিয়েছি।
আমরা কিছুই শুনিনি, রবিন বলল।
হ্যাজাক লাইট জ্বেলে রান্নার জোগাড় করছে মুসা।
টেবিলে কনুই রেখে কুটি করল কিশোর। কই, তেমন কোন প্রতিধ্বনিইতো হয় না হোলোতে। তারমানে হুগার মিথ্যে কথা বলেছে। কেন?
কিছু ঢাকার চেষ্টা করছে না তো? রবিনের প্রশ্ন। লুকাচ্ছে কিছু?
ক্যাপ্টেন রিচটন যে নিখোঁজ হয়েছে, কাজ করতে করতে বলল মুসা, এ কথা কিন্তু জানে না।
বলা যায় না, ভানও হতে পারে তার। হয়তো এসেছিল আমরা কতখানি জানি, জানার জন্যে।
একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ডাইনীর চেয়েও রহস্যময় কিছু একটা ঘটছে এখানে। ক্যাপ্টেনের ভাগ্যে খারাপ কিছুই ঘটেছে। কাল আবার খুঁজতে বেরোব।
পরদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সিদ্ধান্ত নিল ওরা। তাই কুকুরটাকে টোপ হিসেবে বাইরে রেখে জেগে থাকার চিন্তাটা বাদ দিল সে-রাতের জন্যে। ঘুমানো দরকার।
কিন্তু ঘুম আসতে চাইল না। তিনজনেই কান পেতে আছে ডাইনীর। চিৎকার শোনার আশায়। চোখ লেগে এসেছিল, মাঝরাতে তন্দ্রা টুটে গেল তীক্ষ্ণ চিঙ্কারে।
ব্ল্যাক হোলোর নিচ থেকে উঠে এল যেন চিৎকারটা, আগের দিনের চেয়ে অন্যরকম। লম্বা, তীক্ষ্ণ, কাঁপা কাঁপা। গোঙাতে শুরু করল বাচ্চাটা, কাঁপছে। ভয়ে।
আজকেরটা আরেক রকম কেন? মুসার প্রশ্ন।
হঠাৎ হাসতে শুরু করল রবিন।
এত হাসির কি হলো! রেগে উঠল মুসা। দেখছ না, কুত্তাটাও ভয় পেয়েছে?
পাবেই তো, হাসতে হাসতে বলল রবিন। যে ডাকছে সে যে তার শত্রু। কুকুরের বাচ্চার অনেক শত্রু থাকে। ডাইনী নয় ওটা, বুঝলে, পেঁচার ডাক। অনেক বড় পেঁচা।
পেঁচা! ওরকম করে ডাকে নাকি?
ডাকে। অনেক জাতের পেঁচা আছে। একেকটার ডাক একেক রকম।
বাংকে উঠে বসল মুসা। তোমার ধারণা এটা পেঁচার ডাক? আর কিছু না?
মাথা ঝাঁকাল রবিন। না আর কিছু না। তবে কাল রাতে যেটা ডেকেছিল সেটা পেঁচা ছিল না। মুসাকে ভয় দেখানোর জন্যে বলল, পেঁচাকে কিন্তু অশুভ পাখি বলা হয়, ডাইনী আর ভূতের সঙ্গে নাকি সম্পর্ক আছে ওদের।
আহ, রাত-বিরেতে ওসব অলক্ষুণে কথা বোলো না তো!
এসব রসিকতার মধ্যে গেল না কিশোর, বলল, পেঁচা কিন্তু কুত্তা চুরি করতে পারে না, রবিন।..রাত দুপুরে ওসব আলোচনা থাক। এসো, ঘুমাই। কাল ভোরে উঠতে হবে।
.
খুব ভোরে উঠল ওরা। কুয়াশা পড়ছে ঘন হয়ে। বিষণ্ণ, ধূসর আলো। রোদের দেখা নেই। নাস্তা খাওয়া শেষ করে স্যান্ডউইচ বানাতে বসল মুসা। সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। যাতে খিদের জন্যে কাজের অসুবিধে না হয়।
কিশোর অপেক্ষা করতে লাগল শেরিফের লোকের জন্যে।
ঘণ্টাখানেক পর জোরাল বাতাস এসে হঠাৎ করেই সরিয়ে নিয়ে গেল। কুয়াশা। রোদ উঠল। ঝলমল করে হেসে উঠল যেন প্রকৃতি। মুহূর্তে দূর করে দিল সমস্ত বিষণ্ণতা।
ওরা আসবে না, বলল কিশোর। চলো, আমরা বেরিয়ে যাই। বসে থাকার মানে হয় না। আগে মিস্টার আরিগনকে খুঁজে বের করব।