শোনো, ভারিক্কি ভঙ্গিটা কোমল করার চেষ্টা করলেন শেরিফ, এত ভাবার কিছু নেই। এসব এলাকায় মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যায় লোকে। বেড়াতে বেরোয়, ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় বহুদূরে, আবার একদিন ফিরে আসে। ক্যাপ্টেনও হয়তো তাই করছেন। শুধু সন্দেহের বশে আমার লোকদের জরুরী কাজ থেকে সরিয়ে আনতে পারি না, কোন প্রমাণ নেই…
আছে স্যার, প্রমাণ আছে, জোর দিয়ে বলল রবিন। তার ভাঙা টর্চটা আমরা পেয়েছি। গুলির খোসা, পাতায় রক্ত, শার্টের ভেঁড়া কাপড়..এসবকে কি প্রমাণ বলবেন না?
চুপ করে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত রবিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন শেরিফ। ভুরু কুঁচকে বললেন, এত কিছু পেয়েছ! তাহলে তো সিরিয়াস ব্যাপারই মনে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও… অসহায় ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি, আজ লোক দেয়া সম্ভব নয়। কাল একটা সার্চ পার্টি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, তবে কথা দিতে পারছি না।
এখানে আর এমন কেউ কি আছে, যে আমাদের খুঁজতে সাহায্য করতে পারে? জানতে চাইল কিশোর।
সামনের রিপোর্ট পড়তে শুরু করে দিয়েছেন ততক্ষণে শেরিফ, কিশোরের কথায় চোখ তুলে তাকালেন, মিস্টার আরিগনের কথা ভাবছি। ওই হোলোতে বাস করে। ওখানকার প্রতিটি ঝোপ, প্রতিটি পাথর তার চেনা। জন্মের পর থেকে বাস করেছে ওই অঞ্চলে। তোমরা গিয়ে বললে খুশি হয়েই তোমাদের সাহায্য করবে। ওই রকমই মানুষ, সবাইকে সাহায্য করার জন্যে যেন তৈরি হয়েই থাকে। ভাল লোক।
আরেকবার দৃষ্টি বিনিময় করল দুই গোয়েন্দা। আবার টোনারের দিকে তাকাল কিশোর। ওই উপত্যকাতেই থাকে বলছেন?
হ্যাঁ, সে-রকমই তো শুনেছি, একটা কেবিনে। আমি কখনও যাইনি। তোমরা গিয়ে খোঁজো, বের করে ফেলতে পারবে।
কোর্টহাউস থেকে বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। গাড়ি নিয়ে চলে এল জেনারেল স্টোরের সামনে। বাইরে অপেক্ষা করছে মুসা। পায়ের কাছে নানারকম প্যাকেট, টিন আর বোতলের স্তূপ। পারলে পুরো দোকানের সব খাবারই যেন কিনে ফেলত। গাড়িতে উঠেই বলল, আগে কোথাও গাড়ি রেখে খেয়ে নেব।…তো, কি জেনে এলে তোমরা?
ভোঁতা গলায় জানাল রবিন, শেরিফ সাংঘাতিক ব্যস্ত। মনে হচ্ছে আমাদেরই সব করতে হবে। কিশোর, মিস্টার সাইমনের সাহায্য চাইব?
মন্দ হয় না। সাহায্য না দিতে পারেন, পরামর্শ হয়তো দিতে পারবেন।
টেলিফোনে কথা বলতে চাও তো? সে আশা বাদ রাখো, মুসা বলল। দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজারই করেছি শুধু ভেব না, গোয়েন্দাগিরিও করেছি। এই শহরের অনেক কথা জেনেছি। জানো, সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় এখানে কাকে নিয়ে? মিসেস অ্যাংগা, জেনারেল স্টোরের মালিকের স্ত্রী। বেশি বকর বকর করে কে? মিসেস অ্যাংগা। টেলিফোন অপারেটর কে জানো? মিসেস অ্যাংগা। এখান থেকে টেলিফোনে যত গোপন কথাই বলো সেটা আর গোপন থাকবে না, চোখের পলকে ছড়িয়ে পড়বে। সারা শহরে।
হুঁ, বুঝেছি, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। রবিন ঠিকই বলেছে, যা করার সব আমাদের করতে হবে। শেরিফ বলেছেন, কাল সকালে সার্চ পার্টি পাঠানোর চেষ্টা করবেন। যদি না পাঠান, মিস্টার আরিগনকে খুঁজে বের করব আমরা। তার সাহায্য চাইব।
আচ্ছা, রবিন বলল, গর্তের নিচের ওই আজব ঘরটাতে থাকেন না তো তিনি?
থাকতে পারেন। আর কোন বাড়ি তো চোখে পড়েনি ওখানে।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিল মুসা। একটা কাফের সামনে এনে গাড়ি রাখল। বলল, টিনের খাবার পরেও খেতে পারব। রান্না করা কিছু খেয়ে নিই এখন।
খাবার খুব ভাল কাফেটার। স্থানীয় পত্রিকাটা টেনে নিয়ে চোখ বোলাতে লাগল কিশোর। আচমকা চিবানো বন্ধ হয়ে গেল তার। বলল, জন্তু জানোয়ারের নিলাম হবে, সেখানে যাব আমরা।
অবাক হলো রবিন, জানোয়ার নিলাম!
কোথায়? মুসাও অবাক।
পরের শহরে। এই যে, বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আজকেই হবে, এবং আধঘণ্টার মধ্যেই।
কিন্তু ওখানে আমরা কি কিনতে যাব? গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস দুটোই নিয়েছি, জ্যান্ত পশু আমাদের দরকার নেই।
আছে। কুকুর। ডাইনীর জন্যে ফাঁদ পাততে হলে কুকুরের টোপ দরকার। ক্যাপ্টেন রিচটনের কেবিনে নিয়ে যাব ওটাকে আমরা। কুত্তা চোর যদি থেকেই থাকে ওখানে, নিতে আসুক আমাদেরটা, তৈরি হয়ে বসে থাকব আমরা।
হাসি ছড়িয়ে পড়ল রবিনের মুখে, ভাল বুদ্ধি করেছ!
চোরটা যদি সত্যি ডাইনী হয়? মুসা খুশি হতে পারছে না। অহেতুক একটা জানোয়ারকে…
বাধা দিয়ে কিশোর বলল, ভয় নেই, পাহারায় থাকব আমরা। কুকুরটার ক্ষতি করতে দেব না ডাইনীকে। বরং ডাইনী ধরার চেষ্টা করব। হেসে রসিকতার সুরে বলল, একটা ডাইনীকে যদি ধরে নিয়ে যেতে পারি আমরা, ভাবতে পারো কি ঘটবে? ওটা শো করার ব্যবস্থা করব। টিকেট বেচেই বড়লোক হয়ে যাব আমরা।
খাওয়া শেষ হলো। কয়েক মিনিট পর আবার গাড়িতে এসে উঠল ওরা।
ম্যাপ দেখে রাস্তা বলে দিতে লাগল কিশোর। শহর ছাড়িয়ে আসতে খুব খারাপ হয়ে গেল পথ। এবড়োখেবড়ো কাঁচা রাস্তা, প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগছে।
খাইছে! শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে রেখেছে মুসা, কবে বানিয়েছিল এই রাস্তা! আমার তো বিশ্বাস, সেই ওয়াইল্ড ওয়েস্টের যুগে, ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া যখন আর কিছু চলত না।
একেই খারাপ, তার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তার অবস্থা আরও করুণ হয়ে আছে। মাটি গলে সরে গিয়ে নিচের পাথর বেরিয়ে পড়েছে। টায়ারে নিষ্ঠুর আঘাত হেনে চলেছে ওগুলো।