- বইয়ের নামঃ কুকুর খেকো ডাইনী
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
কুকুর খেকো ডাইনী
০১.
জুনের এক রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেল। শক্তিশালী। একটা লাল কনভারটিবল গাড়ি চালাচ্ছে রবিন, এখানে আসার জন্যে ভাড়া নিয়েছে গাড়িটা। পাশে বসে তন্ময় হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে কিশোর। দু-ধারে চষা খেত। দূরে দেখা যাচ্ছে পকোনো পর্বতমালার সবুজ ঢাল। পেনসিলভানিয়া ডাচ এলাকার মধ্যে দিয়ে চলেছে ওরা।
পেছনের সীটে বসে ঝিমাচ্ছে মুসা।
হঠাৎ রসিকতার সুরে বলে উঠল রবিন, মুসা, ওই দেখো একটা। সাইনবোর্ড। ডাইনী তাড়ানোর জন্যে বসানো হয়েছে। ডাইনী আছে। এখানে।
চমকে চোখ মেলল মুসা, কই, কোথায়? দেখতে পেল নিজেই। চাষীর এক গোলাঘরের ওপর বিরাট একটা গোল জিনিস। এ রকম গোল কেন?
একে বলে হেকস্ সাইন। ডাইনী আর বজ্রপাতকে তাড়ানোর জন্যে বসানো হয়।
ডাইনী! আজকের দিনে?
কেন, ভূত যদি থাকতে পারে, ডাইনী থাকবে না কেন? কিছু কিছু ডাইনীর ক্ষমতা কিন্তু ভূতের চেয়ে বেশি, মুসাকে ভয় দেখানোর জন্যে বলল রবিন। তোমার গরুকে যদি জাদু করে দেয়, দুধ শুকিয়ে যাবে ওটার, আর দুধ দেবে না। আরও অনেক কুমন্ত্র জানে ডাইনীরা। ওসব শয়তানি যাতে না। করতে পারে সেজন্যেই বসানো হয়েছে ওটা।
ঘুম দূর হয়ে গেল মুসার চোখ থেকে। পরের দুটো গোলাবাড়ির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল। নিজেকেই যেন বোঝাল, দূর, কি যে বলো, আজকাল। আর ওসব বিশ্বাস করে না কেউ! এটা বিংশ শতাব্দী। আমাকে আর ভয়। দেখানোর চেষ্টা কোরো না, বুঝলে, আমি এখন আর ডাইনী-ফাইনী বিশ্বাস। করি না।
তাই নাকি? হেসে বলল কিশোর, তাহলে ভয় পাচ্ছ কেন?
কই পাচ্ছি?
যাই বলো, আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা। সত্যি বলেছ, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরিতেও হেক্স সাইন লাগায় লোকে?
খাইছে! দোহাই তোমার, কিশোর, এর মধ্যে আর রহস্য খুঁজো না তো! এই একটিবার অন্তত রক্ষা করো। এই ছুটিতে কোন গোয়েন্দাগিরি করব না আমরা, খাব-দাব আর ঘুরে বেড়াব।
শুধু ঘুরে বেড়ানোর জন্যে তোমাকে এতদূরে এত খরচ করে পাঠানো হয়েছে ভাবছ কেন?
তুমি না বললে বেড়াতে যাচ্ছি আমরা।
বেড়াতেই তো এসেছি, তবে বিনিময়ে একটা কাজ করে দিতে হবে। খামোকা কি আর কেউ কাউকে টাকা দেয়। আর আমরাই বা নেব কেন?
তা তো নেব না। কিন্তু ঘটনাটা কি খুলে বলো তো?
মিস্টার সাইমনের এক বন্ধু ক্যাপ্টেন ডেভিড রিচটনকে সাহায্য করার জন্যে পাঠানো হয়েছে আমাদের। ওই পর্বতের ভেতরে ব্ল্যাক হোলো নামে একটা জায়গায় তার কেবিন।
ক্যাপ্টেন রিচটন? কিসের ক্যাপ্টেন? সেনাবাহিনীর?
না, পুলিশের। পাঁচ-ছয় বছর আগেও পুলিশ চীফ ছিলেন। এখন রিটায়ার করেছেন।
হু, বুঝেছি, আমি একটা গাধা! মুষড়ে পড়ল মুসা, এলিয়ে পড়ল আবার পেছনের সীটে, শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। আর কোন কাজ নেই কিছু নেই, শুধু বেড়াতে যাওয়ার এত আগ্রহ কেন তোমার, সেটা আগেই সন্দেহ করা উচিত ছিল আমার। তোমরাও কিন্তু বলোনি আমাকে।
তুমিও তো জিজ্ঞেস করোনি। বেড়ানোর নাম শুনেই লাফিয়ে উঠেছ।
চুপ হয়ে গেল মুসা। ভিকটর সাইমন যেদিন তিন গোয়েন্দাকে তার বাড়িতে ডেকেছিলেন, সেদিন গ্যারেজে জরুরী কাজ ছিল মুসার। নিজেদের গাড়িগুলো ধুয়েমুছে সাফ করছিল। সেজন্যে যেতে পারেনি। কিশোর আর রবিন গিয়েছিল। বিকেলে খবর জানিয়েছে রবিন, আগামী দিনই নিউ জারসিতে রওনা হচ্ছে ওরা। খরচ-খরচা সব মিস্টার সাইমন বহন করবেন। বোকার মত সে ভেবেছিল, শুধু বেড়াতেই বুঝি যাওয়া হচ্ছে। তিক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, আর কি কি জানো বলে ফেলো তো?
আর? অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে ব্ল্যাক হোলোতে। এ কথা মিস্টার সাইমনকে লিখে জানিয়েছেন ক্যাপ্টেন রিচটন। সাহায্যের অনুরোধ করেছেন। তাঁকে। কিন্তু তিনি এখন ভীষণ ব্যস্ত, আরেকটা অত্যন্ত জরুরী তদন্ত করছেন। ব্ল্যাক হোলোতে যাওয়া এখন তাঁর পক্ষে অসম্ভব। সেজন্যেই আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন…
তার দায়িত্বটা আমাদের ঘাড়ে চাপানোর জন্যে!
তোমার কি খুব রাগ হচ্ছে? খোঁচা দিয়ে বলল রবিন। বলো তো ফিরে যাই। কি বলো, কিশোর?
কিশোর হাসল। তাড়াতাড়ি মুসা বলল, না না, যাওয়ার আর কি দরকার, এসেই যখন পড়েছি। তা ছাড়া এতগুলো খাবার-দাবার কিনে আনলাম। সব নষ্ট হবে।
ঝলমলে বিকেল। প্যানসিলভানিয়া ডাচের চমৎকার উপত্যকা ধরে চলছে গাড়ি। সবুজে সবুজে ছেয়ে আছে। পেছনে পড়েছে চাষের খেত। এঁকেবেঁকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে পথ, পাহাড়ের ঢালের গভীর বনের দিকে। এখানে ওখানে সবুজের মধ্যে থেকে মাথা তুলেছে ধূসর পাথরের চাঙড়।
পর্বতে ঢুকলাম, ঘোষণার মত করে বলল রবিন।
একটা শৈলশিরা পেরিয়ে এসে হঠাৎ করে নেমে গেছে পথটা, পরের পাহাড়শ্রেণীতে পৌঁছে আবার সোজা উঠেছে। সামনে তাকিয়ে আছে কিশোর। বাড়িঘর চোখে পড়ল, একটা শহর।
আচমকা কানে এসে লাগল লাউড-স্পীকারে বাজানো মিউজিক আর কথার শব্দ। কান খাড়া করে ফেলল তিনজনেই, কোথা থেকে আসছে দেখার চেষ্টা করল।
দেখে ফেলেছি! বলে উঠল মুসা। কান ও চোখের ক্ষমতা অন্য দু-জনের চেয়ে তার বেশি।
ররিন আর কিশোরও দেখল, একসারি তাঁবু। উজ্জ্বল রঙের ব্যানারে লেখা রয়েছেঃ