কাহিনী শুরু করল রবিন। গোড়া থেকে বলতে লাগল। কি করে মুসার আম্মা ওদেরকে কাজটা দিয়েছেন। পিজমো বীচে মিলারের সঙ্গে গোলমালের সূচনা থেকে স্টেটলার রয়ালে তাকে পাকড়াও করা পর্যন্ত কিছুই বাদ দিল না। মাঝে মাঝে তাকে কথা জুগিয়ে দিল মুসা আর কিশোর।
চমৎকার! পুরোটা শুনে বললেন পরিচালক। হোটেলের ওয়েইটাররা যে কাজের সময় লোফার পরে না, শুধু এই সামান্য সূত্র দিয়ে কাউকে সন্দেহ করে ফেলাটা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। একটা ব্যাপার অবাক করছে আমাকে। সান্তা রোসায়ও তো গাড়ির নিচে উঁকি দিয়েছিলে তোমরা। পেট্রোল ট্যাংকে লাগানো সঙ্কেত পাঠানোর যন্ত্রটা তখন চোখে পড়ল না কেন?
অমন কিছু থাকতে পারে, তখনও ভাবিনি, জবাব দিল কিশোর। তা ছাড়া রাত দুপুরে চোখ তখন এমনিতেই ক্লান্ত, তার ওপর টর্চের ব্যাটারি গিয়েছিল ফুরিয়ে। নানা রকম উত্তেজনার মাঝে ব্যাটারি চেক করতে ভুলে গিয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, মিলার যে দুষ্ট লোক, মিস্টার রাবাতের এ কথায় তখনও গুরুত্বই দিইনি। তাই নতুন ব্যাটারি ভরে ভালমত আবার খোঁজার কথা মনে হয়নি।
আগেও এ ধরনের অপরাধ করেছে কিনা মিলার, জানতে পারিনি। এ সব গোপনীয়, ব্যাপার, তাই এফ বি আই আমাদের সামান্যই জানিয়েছে। হোগারসনের কাছে জেনেছি, বিমানের যন্ত্রপাতি তৈরির একটা কারখানায় কাজ করত মিলার। ইলেকট্রনিক এঞ্জিনিয়ার ছিল সে। সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ছিল তার, কারখানার মধ্যে যেখানে ইচ্ছে যখন তখন যেতে পারত। তবে কিছুদিন পর চাকরি থেকে বের করে দেয়া হলো তাকে–অন্যান্য টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অপরাধে। হয়তো প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে জেদের বশেই প্রাইয়ের কাজটা করেছে সে। চাকরি যাবে শোনার পর তথ্য চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, বেরিয়ে আসার আগেই কাজটা সেরে ফেলে।
ছবি ডেভেলপ করার যন্ত্রপাতি ছিল না তার বাড়িতে। কোন ক্যামেরার দোকান থেকে করিয়ে আনারও সাহস করেনি, ঝুঁকি নিতে চায়নি। ক্যামেরাটা সহই দিয়ে দিতে চেয়েছিল ব্যালার্ডকে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, ক্যামেরাটা বদল হয়ে হাতছাড়া হয়ে গেল। অন্য কারণে তাকে সন্দেহ শুরু করেন মিস্টার রাবাত। মিলার ভাবল, তার তথ্য চুরির ব্যাপারটা নিয়ে তাকে সন্দেহ করছেন তিনি। চোরের মন পুলিশ পুলিশ!
হু, মাথা ঝাঁকালেন পরিচালক। অপরাধী এ ভাবেই নিজেকে ধরিয়ে দেয়।
মুসা বলল, যতই এগিয়ে যেতে লাগলাম আমরা, ক্যামেরাটার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল মিলার। ওটা যে বদল হয়ে গেছে, ধরতে পারেনি রবিন। সে বুঝতে পারার আগেই তার কাছ থেকে ওটা কেড়ে নিতে চেয়েছিল মিলার।
সে-সব তো আগেই শুনলাম। ব্যালার্ডের কি খবর? তাকে ধরেছে?
মুহূর্তের জন্যে কালো হয়ে গেল কিশোরের মুখ। ও পালিয়েছে। হোগারসনের কাছে শুনলাম, মিলার ধরা পড়ার পরদিন নাকি ভিয়েনায় দেখা। গেছে তাকে। এফ বি আইয়ের জাল কেটে বেরিয়ে গেছে সে।
তারমানে ওস্তাদ গুপ্তচর সে। অনেক দিন ধরে আছে এ লাইনে।
যতবড় ওস্তাদই হোক, মুসা বলল, আমাদের কাছে একটা মার খেয়ে গেছে। যে ফিল্মগুলো নিয়েছে রবিনের ব্যাগ থেকে, সব বাতিল জিনিস। ডেভেলপ করার পর দেখবে কিচ্ছু ওঠেনি। মুখটা তখন পচা ডিম হয়ে যাবে। হয়তো গালাগাল করবে আমাদের, কিন্তু লাভ হবে না কিছুই।
মৃদু হাসি ফুটল পরিচালকের ঠোঁটে। মাথা ঝাঁকালেন। তা বটে। তো, মুসা, তোমার নানার আবিষ্কারটা কি? বিক্রি করতে পেরেছেন?
হাসল মুসা। পেরেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, সত্যিই কাজের জিনিস। গাড়িতে ওটা পাইনি আমরা তার কারণ, গাড়িতে ছিল না। আক্রমণ আসতে পেরে ভেবে ওটা আগেই ডাকে রিভারভিউ প্লাজায় পাঠিয়ে দিয়েছিল, নিউ ইয়র্ক এসে প্রথম যে হোটেলে আমরা উঠেছিলাম। ম্যানেজারকে বলে রেখেছিল, আমরা না আসা পর্যন্ত যেন খামটা নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়। রেখে দিয়েছিল ম্যানেজার। সেজন্যেই মিলার পিছে লাগায় আবিষ্কার খোয়া যাওয়ার ভয় ছিল না নানার, লোকটাকে দেখতে পারে না বলে ভীষণ খেপে গিয়েছিল।
কিন্তু আবিষ্কারটা কি? সামরিক বাহিনীর কাজে লাগবে এমন কিছু?
না, মহাকাশচারীদের কাজে লাগবে। গির্জার হলের জন্যে প্রিঙ্কলার। সিসটেম বানাতে গিয়ে এক ধরনের নতুন ভালভ আবিষ্কার করে বসে নানা। এর মধ্যে একটা অটোম্যাটিক সেনসর থাকবে। বর্তমানে যে সব ভালভ ব্যবহার করে নভোচারীরা তার চেয়ে অনেক ছোট আর হালকা বলে বহন করতেও সুবিধে। স্পেসস্যুটের ভেতরে বসানো এই জিনিসটা তাপমাত্রা আর চাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে অন্যান্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ছেটে ফেলা যাবে, তাতে স্যুটের আকার আর ওজন দুটোই অনেক কমানো যাবে। শিপ থেকে বেরিয়ে মহাকাশে ঘোরাফেরা করতে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে নভোচারীরা।
তারমানে ভাল জিনিসই আবিষ্কার করেছেন!
হ্যাঁ। নানাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে এখন কয়েকটা ফার্ম, NASA-র অনেক জিনিস সাপ্লাই দেয় ওরা। একজন উকিল নিযুক্ত করেছে। নানা। তাকে নিয়ে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মাটিঙে বসছে। ভোরে বেরোয়, রাত করে ফেরে। সাংঘাতিক খাটুনি যাচ্ছে। সেই তুলনায় মেজাজ খারাপ হচ্ছে না। রাতে এসেও হেসে হেসে কথা বলে আমাদের সঙ্গে। রসিকতা করে। আগে যেটা একেবারেই করত না। হয় চুপ করে থাকত, নয়তো খেউ খেউ করে উঠত।