কোন ওয়েইটার? ব্যবহৃত কাপ-পিরিচ নিয়ে নিচে নামতে যাচ্ছে সে?
রবিন বলল, এই দেখো, ওর পায়ে লোফার?
চমকে গেল ওয়েইটার। সামান্য ঘুরে গেল মাথা, এদিকে তাকাল। মুখের একটা পাশ দেখা গেল।
ওভাবেই থাকুন, মিস্টার মিলার। রবিন বলল, আপনার একটা ছবি তুলে নিই!
সঙ্গে ক্যামেরা এনেছে রবিন। বেড়াতে বেরোনোর পর থেকে এটা সব সময় সাথে থাকে তার, কখনও কাছছাড়া করে না। লোকটার দিকে করে শাটার টিপে দিল। ঝিলিক দিয়ে উঠল ফ্ল্যাশার।
রবিনের দিকে লাফ দিল মিলার। একই সঙ্গে চিৎকার করে উঠল। হাত থেকে ট্রে-কাপ খসে পড়ে ঝনঝন করে ভাঙল।
ওই মুহূর্তে খুলে গেল সার্ভিস লিফটের দরজা। মিলারের পাশ দিয়ে ছুটে লিফটে ঢুকে গেল কিশোর আর মুসা। ইমারজেন্সি সুইচ টিপে দিল কিশোর। এটা টিপলে আটকে যায় লিফট, যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আর অ্যালার্মের লাল, বোতামটা টিপল মুসা। তীক্ষ্ণ শব্দে ঘণ্টা বেজে উঠল। বাজতেই থাকল।
পুলিশ। পুলিশ! বলে চেঁচিয়ে উঠল রবিন। খুন করে ফেলল! বাঁচাও!
রবিনের গলা টিপে ধরতে যাবে মিলার, এই সময় ঝটকা দিয়ে খুলে গেল। বলরুমের দরজা।
আরেকটা ছবি তুলে ফেলল রবিন।
ছুটে বেরিয়ে এল কংকলিন। রাগে কুঁচকে গেছে মুখচোখ। চিৎকার করে বলল, এই, হচ্ছে কি এ সব! বন্ধ করো।
থমকে গেল মিলার দ্বিধায় পড়ে গেছে। চোখ প্রায় অন্ধ করে দিয়েছে। ফ্র্যাশারের তীব্র আলো।
পুলিশ। আবার চেঁচিয়ে উঠল রবিন, পুলিশ ডাকুন! আমাকে খুন করতে, এসেছে।
আবার টিপল শাটার একেবারে মিলারের মুখের কাছে ক্যামেরা নিয়ে গিয়ে।
ধাক্কা খেয়ে যেন পিছিয়ে গেল মিলার। চোখের সামনে নিয়ে গেছে। দুহাত তারপর ঘুরে দৌড় দিল সার্ভিস লিফটের দিকে।
মুসা আর কিশোর ওখানে অপেক্ষা করছে। ভাঙা কাপ-পিরিচ মাড়িয়ে উঠতে গিয়ে ওদেরকে লক্ষ করল মিলার। উঠল না আর। দৌড় দিল ভারী দরজাটার দিকে মুসার মত সে-ও ভেবেছে ওদিকে সিঁড়ি আছে। দুহাত সামনে বাড়িয়ে ছুটছে সে। নব ঘুরিয়ে একটানে পাল্লাটা খুলে চলে গেল। ওপাশের অন্ধকারে। পান্না ছেড়ে দিতেই আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল সেটা, তালা লেগে গেল। চাবি ছাড়া ওদিক থেকে খুলতে পারবে না।
বলরুম থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে কৌতূহলী মানুষেরা। মহিলাদের কেউ কেউ ভয় পেয়েছে। করিডরে এসে এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল অর্কিডপ্রেমীর দল।
লিফটের ঘণ্টা বাজা থেমে গেল।
অকস্মাৎ নীরব হয়ে গেল যেন সব কিছু, বড় বেশি চুপচাপ। এরই মাঝে কানে এল একটা চিৎকার। হলের শেষ মাথায় দরজার ওপাশ থেকে আসছে।
বাচাও! চিৎকার করছে মিলার, দরজায় কিল মারছে, দরজা খোলো! বের করো আমাকে! বাঁচাও!
কংকলিনের দিকে ফিরল কিশোর। শান্তকণ্ঠে বলল, মিস্টার কংকলিন, টেলিফোনটা কোথায় বলবেন দয়া করে? এফ বি আইকে ফোন করতে হবে।
.
২২.
রেস্টুরেন্টটা অবিশ্বাস্য রকমের বিলাসবহুল। সাদা মখমলের কাপড়ে ঢাকা টেবিলগুলো, জানালার পর্দায় এমব্রয়ডারি করা দামী কাপড়ের পর্দা। সবখানে তাজা ফুলের ছড়াছড়ি। কার্পেট এত পুরু, পা ফেললেই গোড়ালি অবধি দেবে যায়। মেন্যুর বদলে হেডওয়েইটার স্বয়ং এসে নরম, ভদ্রস্বরে কথা বলে খাবারের অর্ডার নিয়ে যায়। নীল টেলকোট আর ডোরাকাটা ভেস্ট পরা অন্য ওয়েইটাররা খাবার সরবরাহ করে। তিন গোয়েন্দার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হলো না। চিঙড়ির একটা বিশেষ ডিশের অর্ডার দিল ওরা। রান্না নাকি খুবই চমৎকার এখানে।
ওদের খাওয়াতে এনেছেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার ঘরের চারপাশে তাকাতে তাকাতে বললেন, সিনেমায় তখনও ঢুকিনি। প্রায় পথে পথেই ঘুরে বেড়াচ্ছি বলা চলে, বেকার, কাজ খুঁজছি। এখানে আসার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না তখন হলে। সাধারণ কোন ফাস্ট ফুড শপের সাধারণ বার্গার পেলেই বর্তে যেতাম। তা-ও সব দিন জোগাড় করতে পারতাম না।
মিনারেল ওয়াটারের গেলাসে চুমুক দিলেন তিনি। হাসলেন। ধনী হওয়ার মজাই আলাদা। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না এ কথা। হ্যাঁ, এবার তোমাদের কেসের কথা বলো। কিশোর, পত্রিকায় হ্যারিস মিলারের খবরটা দেখে তোমার মেরিচাচীকে ফোন করেছিলাম। তিনি তো আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি জানেন মুসার নানার সঙ্গে তোমরা ছুটি কাটাতে গেছ, বেড়াতে। কল্পনাই করতে পারেননি, স্পাই তাড়া করে বেড়িয়েছ।
হেসে ফেলল মুসা। ছুটিতে বেড়াতে বেরিয়েছি, এটাও যেমন ঠিক : একটা কেস হাতে নিয়ে বেরিয়েছি এটাও ঠিক। কেসটা দিয়েছিল আমার মা
বাবাকে কি করে ঝামেলা মুক্ত রাখার জন্যে তিন গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মিসেস আমান, খুলে বলল সে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। সেটা করতে গিয়েই স্পাইদের সঙ্গে জড়িয়েছিলাম।
সে-রকমই শুনেছি, পরিচালক বললেন। এ সময় নিউ ইয়র্কে তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে, ভাবিনি। ভাল লাগছে। একটা ছবির কাজে এসেছি। নিউ ইয়র্কে শুটিং করতে হবে। মনে হচ্ছে, সিনেমার আরও একটা ভাল গল্প পেয়ে গেলাম। পত্রিকায় তোমাদের কেসের খবরটা পড়ে তাই মনে হলো। এবার বলো সব। পুরো কাহিনীটা তোমাদের মুখ থেকে শুনতে চাই রবিন, এটা তো বাড়ি নয়, লিখে ফেলার কাজটা নিশ্চয় শুরু করোনি?
করেছি, স্যার, রবিন বলল। আজ সকালে আপনার ফোন পেয়ে তো চমকেই গিয়েছিলাম। আমরাও ভাবতে পারিনি আপনি নিউ ইয়র্কে আছেন, দেখা হয়ে যাবে।