মুসার হাত থেকে ঝুড়িটা নিয়ে নিজের পথে চলে গেল মহিলা।
কার্ডটার দিকে তাকাল কিশোর। নাম লেখা রয়েছে মিসেস স্নো জেলিমেয়ার। নিউ ইয়র্কের রিভারডেলের ঠিকানা। আর স্টেটলার রয়ালটা। পাওয়া যাবে থারটিজের সেভেন্থ অ্যাভেন্যুতে।
বন্ধুদের দিকে তাকাল সে। কি মনে হয় তোমাদের? সৌখিন অর্কিড। চাষীদের সম্মেলনের কথা পত্রিকায় দেখলে দেখতে যাবে মিলার? যেহেতু অর্কিডের ব্যাপার, তার চোখে পড়তেও পারে খবরটা।
মহিলার সঙ্গে যখন কথা বলছিলে, তোমার মতলব তখনই বুঝেছি, রবিন বলল। তোমার ধারণা মিলার এখনও নিউ ইয়র্কেই আছে। কিন্তু ওরকম একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার সাহস কি সে করবে? এফ বি আইয়ের ভয়ে তার। তো লুকিয়ে থাকার কথা।
এফ বি আই তো আর সমস্ত জায়গায় চোখ রাখেনি, ওরা রেখেছে। বিশেষ বিশেষ জায়গায়। নিউ ইয়র্ক থেকে মিলার বেরোতে গেলে ওদের চোখে পড়বে। সুতরাং অত তাড়াতাড়ি বেরোনোর সাহস করবে না সে। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে তখন চেষ্টা করবে। এতদিন সে বসে থেকে করবেটা কি? বিরক্ত হয়ে যাবে না? সময় কাটানোর জন্যে হলেও অনুষ্ঠানে যেতে চাইবে। বিশেষ করে অর্কিডের প্রতি তার যখন এত আগ্রহ।
তাহলে এটাই সুযোগ, মুসা বলল। ধরা যাক, সে যাবে। আমরাই বা বসে থাকি কেন?
রাবাতকে ওখানে নিয়ে যাবে কিনা, এটা নিয়ে সমস্যায় পড়ে গেল ওরা। মুসা নেয়ার বিপক্ষে। বলল, নানার মেজাজের ঠিক-ঠিকানা নেই। মিলারকে দেখেই হয়তো জ্বলে উঠবে। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে ক্ষিপ্ত হয়ে যা খুশি করে বসতে পারে। ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না আমাদের।
আমরা যে গেছি পরে যদি জানে? প্রশ্ন তুলল রবিন।
নাক কুঁচকাল মুসা, জানলে জানবে।
কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারল না ওরা। হোটেলে ফিরে চলল। রিসেপশন ডেস্কে একটা মেসেজ পেল। রাবাত রেখে গেছেন। আসতে দেরি হবে। রাতের খাওয়া ছেলেদের সঙ্গে খেতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। ওদেরকে খেয়ে নিতে বলেছেন। সময় না কাটলে সিনেমা দেখতেও যেতে পারে ওরা।
হয়ে গেল সমস্যার সমাধান। সন্ধ্যায় স্থানীয় একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার খেলো ওরা। নিউ ইয়র্কের মধ্যে নাকি সবচেয়ে বড় এবং ভাল হিরো স্যান্ডউইচ বানায় ওখানে। কথাটা বোধহয় সত্যি। খাওয়া শেষ করার পর মুসারও মনে হলো তার পেট ঠাসাঠাসি হয়ে গেছে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ক্রসটাউন বাস ধরে চলে এল স্টেটলার রয়ালে। লিফটে করে তেরোতলার গ্র্যান্ড বলরুমে পৌঁছল।
গ্র্যান্ড অর্থাৎ মহান বলরুমটা অত মহান নয়। গালভরা নামটাই যা। হোটেলটাও পুরানো। লাল কার্পেটের জায়গায় জায়গায় রঙ চটে গেছে। স্ফটিকের ঝাড়বাতিতে পুরো হয়ে জমে আছে ধুলো। লিফট থেকে নামতে তিন গোয়েন্দাকে স্বাগত জানাল মোটা এক লোক। গায়ে সাদা শার্ট। শার্টের বুকের কাছে তার নাম সুতো দিয়ে তোলা। কোন্ জায়গা থেকে এসেছে, তা ও লেখা আছে। তাতে জানা গেল তার নাম বিল কংকি, সাইয়োনেট থেকে এসেছে। ছেলেরা অর্কিডে আগ্রহী শুনে খুব খুশি হলো। স্যার মারিয়াটের বক্তৃতা সহ ভিডিও ক্যাসেটও যে তার অর্কিড়-বিলাসী চাচার জন্যে অবশ্যই নিয়ে যেতে চাইবে কিশোর, এ ব্যাপারেও নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করে দিল।
কি করে ভাল অর্কিড ফলাতে হয়, এ ব্যাপারে লেকচার দেবেন স্যার মারিয়াট, বিল বলল। এর জন্যে ঠিক মত প্যারেন্ট জোগাড় করতে হবে। ভয়ানক ইন্টারেস্টিং।
দৃষ্টি বিনিময় করল মুসা আর রবিন। মুসার পেট ফেটে হাসি আসছে।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল বিল, আরও কয়েকজন এসেছে, তাদের স্বাগত জানাতে। মুসা বলল, প্যারেন্ট মানে কি? অর্কিডেরও কি মাতাপিতা থাকে নাকি?
কি জানি! ঠোঁট ওল্টাল রবিন। ইন্টারেস্টও যে কি করে ভয়ানক হয়, খোদাই জানে। সাংঘাতিক বলতে পারত। তা না, ভয়ানক।
থাক, খুঁত ধরা বাদ দাও, হাত নেড়ে বলল কিশোর। ওরকম ধরতে থাকলে বেশির ভাগ মানুষেরই ধরতে পারবে।
তেরোতলার ওই ঘরটা ঘুরে দেখতে শুরু করল ওরা।
প্রায় পুরো ফ্লোরটাই জুড়ে আছে গ্র্যান্ড বলরুম। প্রবেশমুখের বাইরে দুটো করিডর আছে। তাতে দুটো লিফট, হোটেলের গেস্টদের ওঠার জন্যে। লিফট শ্যাফটের পাশে একটা দরজা, তার ওপাশে সিঁড়ি। ডানের একটা হলঘরে রয়েছে কয়েকটা টয়লেট। বায়ের আরেকটা হলঘরে সার্ভিস লিফট, হোটেল কর্মচারীদের ওঠানামার জন্যে। লিফট ছাড়িয়ে গেলে পাওয়া যাবে ছোট প্যানট্রি অর্থাৎ ভাড়ার ঘর। প্যানটি থেকে বলরুমে সরাসরি ঢোকারও দরজা আছে। হলের শেষ মাথায় ভারী একটা দরজা, মুসার সন্দেহ হলো, ওটা দিয়ে বেরোলে আরেকটা সিঁড়ি পাওয়া যাবে। তবে নিশ্চয় সাধারণের চলাচলের জন্যে নয় ওটা। নব ঘুরিয়ে দরজাটা খুলল সে।সিঁড়ি দেখতে পেল। না। সরু এক চিলতে বারান্দার মত, ভারী রেলিঙ দিয়ে ঘেরা, তার ওপাশে খোলা।সে যে দরজাটা খুলেছে, সেটা ছাড়া বারান্দা থেকে বেরোনোর আর কোন পথ নেই। সরে এল সে। আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল ভারী পাল্লা, খুট করে জায়গামত লেগে গেল নবের প্রিঙ লক।
মিলার এলে হয় লিফট ব্যবহার করতে হবে, নয়তো মেইন করিডরের সিঁড়ি। পালাতে হলেও ওই একই পথে। আর কোন পথ নেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিল গোয়েন্দারা। সাইয়োসেটের বিল কংকলিন এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে স্পীকারস টেবিলের সামনে। বিনীত ভঙ্গিতে অতিথিদের সীটে বসতে অনুরোধ করল।