যদি না পড়ে? প্রশ্ন করলেন রাবাত। এখানে এ ভাবে অকর্মণ্য হয়ে বসে থাকব নাকি আমরা?
যা মোটেও না। আপনাদের কাজ শেষ। আপনাদের আর বিরক্ত করবে না ওরা। মিলার তার ফিল্ম পেয়ে গেছে। ব্যালার্ডকে দিয়ে দেবে। ব্যালার্ড যখন ফিল্মগুলো ডেভেলপ করে দেখবে কিছুই নেই, বুঝবে আসল ছবিগুলো আমাদের হাতে পড়েছে। আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে আসার সাহস তার হবে না। গা ঢাকা দেবে। ধরে নিতে হবে, আমরাই জিতলাম। আপনাদের আর ভয় নেই।
দুই দুইজন স্পাই ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার রেগে গেলেন রাবাত, আর আপনি বলছেন ভয় নেই! বাহ্, চমৎকার কথা!
হাসল হোগারসন। আর কোনদিন স্পাই হতে পারবে না মিলার, সেই সুযোগই পাবে না। তার শয়তানি ফাঁস করে দিয়েছেন আপনারা। গর্বিত হওয়া উচিত আপনাদের। যে কোন ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট জমা দিতে হয়। যেখানে চাকরি করত, তার ধারেকাছেও আর যেতে পারবে না। নাম ভাড়িয়ে যদি আবার কোথাও চাকরির দরখাস্ত দেয়, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে, বাঁচতে পারবে না তখন আমাদের হাত থেকে। তবে আমার মনে হয় না এই বোকামি করার সাহস পাবে সে। আমেরিকায় থাকতে হলে চিরকাল পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে এখন থেকে। জানের শান্তি নষ্ট হবে। সেটা আরও বড় জেল।
সন্তুষ্ট হতে পারলেন না রাবাত। কিন্তু তার সঙ্গের শুয়াপোকাটার কি হবে? ব্যালার্ড না ফ্যালার্ড? যদি সে আবার কিছু করার চেষ্টা করে? আমার তো মনে হয় না সে স্পাইগিরি ছেড়ে দেবে।
আমারও না, একমত হলো হোগারসন। তবে তার খোঁজে লোক লাগিয়ে রাখব আমরা। ভালমত খোঁজা হবে। মিস্টার রাবাত, আপনি আর। তিন গোয়েন্দাকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক সাহায্য করেছেন আপনারা।
চলে গেল হোগারসন। দরজা লাগিয়ে দিয়ে এল রবিন। পরিস্থিতি সহজ হলো না, কেমন ভারী হয়ে রইল।
মুসা বলল, কোন কাজই হলো না!
ওই হোগারসনটা একটা অপদার্থ! নাক দিয়ে ঘোঁৎ-ঘোৎ করতে লাগলেন রাবাত। দুধের শিশু পেয়েছে আমাদের! একটা কিছু বোঝাল, আর অমনি বুঝে গেলাম!
গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমাদের অবস্থাটা হয়েছে, পিঠের নিচে ভাজ হয়ে থাকা এলোমেলো চাদর নিয়ে ঘুমানোর মত। রাতে বার বার ঘুম থেকে জেগে উঠে চাদর টানতে হবে।
তোমার এ সব মঙ্গলগ্রহের ভাষা ছাড়ো দেখি!
ব্যাখ্যা করতে গেল না কিশোর। গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। হোগারসন যা-ই বলে যাক, আসল ফিল্মগুলো না দেয়া পর্যন্ত মিলার বা ব্যালার্ডের হাত থেকে নিরাপদ নয় ওরা। দুজনকে খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আগে নিশ্চিন্ত হতে পারবে না। তিন গোয়েন্দাও আরাম করে নিউ ইয়র্ক দেখতে পারবে না, রাবাতও তার আবিষ্কার হাত বদল করার ব্যাপারে মন দিতে পারবেন না।
পরদিন সকালে উঠে অবশ্য বেরিয়ে গেলেন তিনি। সারাদিন পর ফিরে এসে জানালেন, যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। কাজ এগোচ্ছে।
ফোর্ড গাড়িটা নিয়ে গেলেন একটা ওঅর্কশপে। সার্ভিসিং করাবেন। টুকিটাকি মেরামত থাকলে, সারিয়ে নেবেন। বাড়ি ফেরার পথে দীর্ঘ যাত্রায়। যাতে গোলমাল না করে ওটা। কি পরের কয়েকটা দিন খুব সকালে বেরিয়ে যান তিনি, ফেরেন সন্ধ্যায়। ছেলেরা থাকে নিজেদের মত। যেখানে ইচ্ছে ঘোরাফেরা করে। হাডসন নদীতে রাখা অনেক পুরানো একটা উভচর বিমান দেখতে গেল ওরা। টুরিস্টদের জন্যে রাখা হয়েছে ওটা দর্শনীয় বস্তু হিসেবে। গেল হেইডিন প্ল্যানেটোরিয়ামে। লিটল ইটালিতে পিজ্জা খেলো। মাথার অনেক ওপরে বসানো ট্রামলাইন ধরে বেড়াতে গেল রুজভেল্ট আইল্যান্ডে। রকফেলার সেন্টার দেখতে গেল। নানা জায়গার সুভনির কিনল। মিলারের সঙ্গে শেষ মোলাকাতের চারদিন পর সাক্ষাৎ হলো অর্কিড়ওয়ালা এক মহিলার সঙ্গে।
সিক্স অ্যাভেনু আর থার্টিয়েথ স্ট্রীটটা যেখানে মিলেছে, সেই মোড়ের কাছে ওদের পাশ কাটাতে গেল মহিলা। একটা ঝুড়িতে বসানো টবে অর্কিড নিয়ে চলেছে। গাছটা বেশ সুন্দর। ফ্যাকাসে সবুজ আর বাদামী রঙের, কাঁটাওয়ালা তিনটে চমৎকার ফুল।
শুনুন! ডাকল রবিন।
খাইছে! বলে উঠল মুসা। এ তো অর্কিড!
লাফ দিয়ে এগিয়ে গেল কিশোর। বিনয়ের অবতার সেজে জাপানী কায়দায় মাথা নুইয়ে অভিবাদন করে বলল, সিমবিডিয়াম ফুল, তাই না?
উজ্জল হলো মহিলার মুখ। তুমি অর্কিড চেনো? সুন্দর ফুল, তাই না? চাষ করো নাকি?
আমার চাচা করে, নির্বিকার ভঙ্গিতে মিথ্যে বলে দিল কিশোর।
তাকে বিশ্বাস করল মহিলা। একটা জরুরী কাজ আছে আমার, ফুলটা আমার মেয়ের বাড়িতে রেখে সেখানে যাব। ফিরে এসে ফুলটা দেখাতে নিয়ে যাব। এইবার আর আমাকে পুরস্কার না দিয়ে পারবে না।
তাই নাকি? অর্কিড শো হচ্ছে নাকি শহরে?
ঠিক শো না। আমাদের স্থানীয় সৌখিন অর্কিড চাষীদের মাসিক সম্মেলন। প্রধান অতিথি হয়ে আসবেন স্যার ওয়ালথার মারিয়াট। বক্তৃতা দেবেন। অর্কিডে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। এসো না তোমরাও? অর্কিডে আগ্রহী লোকদের বিনে পয়সায় অর্কিড বিতরণ করি আমরা। তোমাকেও দিতে পারব।, তোমার চাচাকে নিয়ে গিয়ে দেবে। নিউ ইয়র্কেই থাকো কোমরা?
না, ক্যালিফোর্নিয়ায়।
বাবা, অনেক দূর থেকে এসেছ! বেড়াতে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
অর্কিডের ঝুড়িটা মুসার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পার্স খুলে কার্ড বের করল মহিলা। তাতে ঠিকানা লিখে কিশোরকে দিয়ে বলল, রাত আটটায় স্টেটলার রয়ালে আসবে। স্যার ওয়ালথার মারিয়াটের সঙ্গে দেখা করে তার অনুষ্ঠান থেকে অর্কিড় নিয়ে গেছ শুনলে খুব খুশি হবেন তোমার চাচা, আমি শিওর। আমাদের একজন সদস্য অনুষ্ঠানের ভিডিও করে রাখবে। ইচ্ছে করলে ক্যাসেটটার কপিও করিয়ে নিতে পারো। তার জন্যে অবশ্য পয়সা লাগবে।