সর্বনাশ! খুন করতে এসেছিলে!
মাথা নাড়লেন রাবাত, না, গ্রীনহাউসের তালা খুলতে। জানালা দিয়ে দৈখলাম, ও বেরিয়ে যাচ্ছে। সুযোগটা ছাড়লাম না।
অদ্ভুত দৃষ্টিতে নানার দিকে তাকাল মুসা। মিলারকে খুন করার সঙ্গে গ্রীনহাউসের তালা খোলার কি সম্পর্ক, বুঝতে পারল না। ভাবল, নানার মাথাটা বোধহয় পুরোপুরিই গেছে। গ্রীনহাউস খুলতে গেছিলে কেন?
দেখে আয় উঁকি দিয়ে। তাহলেই বুঝবি।
গ্রীনহাউসে আর কি থাকবে? শাকসজি নয়তো অন্য কোন ধরনের উদ্ভিদ। দেখার আগ্রহ হলো না মুসার। যা-ই বললো, নানা, মিস্টার মিলার ইচ্ছে করলে এখন তোমাকে হাজতে পাঠাতে পারেন–চুরি করে তার বাড়িতে ঢুকে তালা ভাঙার অপরাধে।
কচু করবে! আমি কিচ্ছু ভাঙিনি। দরজাটা খোলার চেষ্টা করেছি কেবল, আমার জিনিসটা বের করে নেয়ার জন্যে। ওই টিনটা দেখেছিস? ওতে ম্যালাথিয়ন আছে। গত হপ্তায় বেকারের দোকান থেকে কিনেছিলাম। আমার। চীনা এলম গাছটাতে স্প্রে করার জন্যে। হঠাৎ দেখি টিন গায়েব। আরও একটা জিনিস নেই, একটা কর্নিক। ওই যে, গ্রীনহাউসের মধ্যে পড়ে আছে। আমারটাই। পুলিশের কাছে গিয়ে এখন বললে কোমরে রশি বেঁধে নিয়ে যাবে না! আগের বার চুরি করেছিল ঘাস কাটার যন্ত্র, এবার করেছে কনিক আর পোকা মারার ওষুধ। এ সব কেনার টাকা তার যথেষ্ট আছে, শয়তানিটা করে শুধু আমাকে খেপানোর জন্যে। আমার কাজে অসুবিধা হতে দেখলে মজা পায়। অত্তবড় শয়তান, অথচ অর্কিড ক্লাবে গিয়ে কি ভালমানুষটিই না সেজে থাকে! আহাহা, যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না! বাড়ির বাগানে ঘাস হয়ে থাকে আধহাত লম্বা, কাটার নাম নেই, ওদিকে সারাদিন গ্রীনহাউসে পড়ে থেকে অর্কিড জন্মায়। ছাগল আর কাকে বলে!
ঘাস না কেটে অর্কিড জন্মালে দোষটা কোথায়, ছাগল হয় কি করে, সেটাও মাথায় ঢুকল না মুসার। নানার মাথার স্থিরতা সম্পর্কে সন্দেহ আরও বাড়ল। বলল, নানা, ওগুলো তোমার জিনিস কি করে বুঝলে?
রেগে উঠলেন রাবাত, তোর মত গাধা নাকি আমি নিজের জিনিস চিনব না। ছাউনিতে ঢুকে দেখি জিনিসগুলো নেই। তারপর দেখি পাতাবাহারের ডাল ভাঙা। মগজটা এখনও এত বুড়ো হয়নি যে কি ঘটেছে বুঝতে পারব না!
মিলারের ড্রাইভওয়েতে গাড়ির শব্দ হলো। থামল গাড়িটা। শঙ্কিত হলেন। পেইত্রি। রাবাতের হাত ধরে টানলেন, ওই বুঝি এলো! চলো, চলে যাই!
ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলেন রাবাত। যাব কেন? ওর মত চোর নাকি? আমার জিনিস না নিয়ে যাব না!
গ্যারেজের কোণ ঘুরে বেরিয়ে এল গাট্টাগোট্টা এক লোক। ঘন পুরু ভুরুর নিচে কোটরে বসা চোখে যেন আগুন জ্বলছে।
তাকে দেখেই বলে উঠলেন রাবাত, হ্যারিস মিলার, আবার চুরি করেছ। তুমি! গ্রীনহাউসে আছে। জলদি বের করে দাও! ম্যালাথিয়নের টিন আর কর্নিকটা আমার!
কি প্রমাণ আছে, তার? সমান তেজে জবাব দিলেন মিলার। তুমি বেরোও আমার বাড়ি থেকে, নইলে পুলিশ ডাকব!
চাপ দিয়ে কটাত্ করে ছুরির ফলা বন্ধ করে ফেললেন রাবাত। বন্ধ ছুরির মাথা মিলারের দিকে তুলে ধরে শাসালেন, প্রমাণ, না? আবার যেয়ো চুরি করতে! বুঝবে মজা! এখন থেকে তক্কে তক্কে থাকব আমি। খালি ধরতে পারলে হয় একবার! ঘাস কাটার যন্ত্র দিয়ে তোমার চুল ছেটে না দিয়েছি তো আমার নাম রাবাত নয়!
আরে যাও যাও, যা পারো কোরো! এখন বেরোও! নইলে
কি করবে? কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন রাবাত। কি করবে? চোর কোথাকার! চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুড়ি।
মিলারের চোখে ভয়ের ছায়া দেখতে পেল কিশোর। বুঝল, মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক, রাবাতকে ভয় পায় সে। অবশ্য সেজন্যে মিলারকে দোষ। দেয়া যায় না। খেপা মোষ বা গণ্ডারকে কে না ভয় পায়।
মারামারি বেধে যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি নানার হাত ধরে টান দিল মুসা, নানা, দোহাই তোমার, থামো! এসো, যাই!
ঝাড়া দিয়ে আবার হাত ছুটিয়ে নিলেন রাবাত, এই, সর, কথার মাঝখানে কথা বলতে আসবি না!
মুসাও দমল না। তুমি আসবে, না মাকে ফোন করব?
ঝাঁঝিয়ে উঠলেন রাবাত। হ্যাঁ হ্যাঁ, করগে না! তোর মাকে কি আমি ডরাই! তবে আর দাঁড়ালেন না তিনি। গটমট করে গ্রীনহাউসের কাছ থেকে সরে এসে বেড়ার দিকে এগোলেন। পিছু নিল তিন গোয়েন্দা।
পেইত্রি রয়েছেন সবার পেছনে। দুর্বল ভঙ্গিতে হাঁটছেন। খুনোখুনির ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। যা কাণ্ড করো না, তোমার কাছে আসাই বাদ দিতে হবে! অনুযোগ করলেন তিনি। আমি বলে দিলাম, এ রকম চলতে থাকলে খুনের দায়ে জেলে যাবে একদিন!
আমি কি ইচ্ছে করে করি নাকি? আশেপাশে বদ লোক থাকলে এই হবে! পাতাবাহারের বেড়া ডিঙিয়ে নিজের সীমানায় ঢুকলেন রাবাত। তাই তো বলি, একটা পড়শী-প্রতিরোধ সংগঠন করা উচিত আমাদের। তাহলে ভোটাভোটির মাধ্যমে ঠিক করা যাবে, কাকে রাখব, কাকে নয়।
তখন তোমাকে নিয়েও ভোট হতে পারে, মুখের ওপর বলে দিলেন পেইত্রি। নিজেকে অত ভাল ভাবার কোন কারণ নেই। ভোট দিয়ে তোমাকেও তাড়াতে পারে!
বাজে বোকো না! গজগজ করে বললেন রাবাত। খেললে এসো, নইলে ভাগো! অহেতুক সময় নষ্ট কোরো না!
কেটলিতে ফুসা বাষ্পের ফোঁস ফোঁস শব্দ বেরোল পেইত্রির নাক থেকে। তবে চলে গেলেন না। রাবাতের পিছু পিছু লিভিং রুমে ঢুকলেন।
রান্নাঘরে রাখা টেলিফোনের দিকে এগোল মুসা। রিসিভার তুলে বাড়ির নম্বরে ডায়াল করল।