আশ্চর্য! বললেন তিনি। সেই কখন থেকে বসে আছি, মনে হচ্ছে বছর পেরিয়ে গেছে। গাধাটা সাক্ষাৎকার দেখেনি নাকি? ছাগল কোথাকার! খবরও দেখে না! ধূর্ত হাসি ফুটল ঠোঁটে। আজ বিকেলে ইয়াংকি স্টেডিয়ামে একটা ডাবল গেম আছে। দেখতে যাবি নাকি, মুসা?
যাওয়া বোধহয় ঠিক হবে না, মুসা বলল। মিলার আর তার দোস্ত সাক্ষাৎকারটা দেখেছে কিনা, বোঝা যাচ্ছে না। দেখলে এখানে খুঁজতে আসবেই। তখন আমরা না থাকলে এতদিনের কষ্ট অহেতুক যাবে।
বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলেও পারি, রাবাত বললেন। এখানে বসে থেকে ভুল করছি আমরা। হয়তো ঢোকার সাহসই পাচ্ছে না। বাইরে গিয়ে ওদের সুযোগ করে দেয়া উচিত।
আমার মনে হয় না, কিশোর বলল, আমরা বাইরে বেরোলেও ওদের হারাতে হবে। এসে আমাদের না পেলে অপেক্ষা করবে ওরা। কিংবা আবার। আসবে। এতদূর আমাদের পিছু ধাওয়া করে আসতে পেরেছে ওই ফিল্মের জন্যে। এত সহজে হাল ছাড়বে না।
সুতরাং বসে না থেকে বাইরে ঘুরে আসারই সিদ্ধান্ত হলো। তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে মেসেজ ডেস্কে এসে দাঁড়ালেন রাবাত। ইয়াংকি স্টেডিয়ামে যেতে হলে কোন্ ট্রেন ধরতে হবে, এবং সেটা মাটির নিচ দিয়ে যায় কিনা, জিজ্ঞেস করলেন।
দুপুর বেলা সদলবলে হোটেল থেকে বেরোলেন রাবাত। হোটেলের দুই ব্লক দূরেই একটা আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন। আধ ব্লক পেছনে লেগে রইল দুই এফ বি আই। প্ল্যাটফর্মে নেমে প্রথম ট্রেনটা ইচ্ছে করে মিস করল গোয়েন্দারা, ওই দুজনকে আসার সময় দিল, ওরা এখনও এসে পৌঁছায়নি। পরের ট্রেনটায় চড়ল সবাই। এফ বি আইরা রইল কামরার এক প্রান্তে, গোয়েন্দারা আরেক প্রান্তে। ব্রংক্স বল পার্কের দিকে চলল ট্রেন। চতুর্দিকে কড়া নজর রাখলেন রাবাত। মিলাররা পিছু নিয়েছে কিনা দেখছেন।
স্টেডিয়ামে এসে ভান করলেন যেন তারা নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। তাতে খেলা দেখার সুবিধে আছে। খেলা দেখতে বসলে কোনও এক পক্ষকে সমর্থন করতে হয়। সেই পক্ষের দর্শকদের মধ্যে বসা ভাল। এবং সেটাই করলেন। তিনি। ইয়াংকিদের মধ্যে, বসলেন। প্রথম গেমে এক রান এগিয়ে রইল ইয়াংকিরা। সুতরাং প্রচুর চেঁচাতে পারলেন তিনি। আশেপাশে ইয়াংকি সমর্থক থাকায় চেঁচাতে কোন অসুবিধে হলো না।
বিরতির সময় হট ডগ খাওয়া হলো। নাতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলেন তিনি। দুজনের কেউই জিততে পারলেন না। রবিন আর কিশোরও প্রচুর খেল, তবে নানা-নাতির ধারেকাছেও যেতে পারল না।
শুরু হলো দ্বিতীয় পর্যায়ের খেলা। শুরুতেই ইয়াংকিদের হারিয়ে দিল বহিরাগত টীম। নিজের আর বাইরের দল, দুটোকেই গালাগাল শুরু করল ইয়াংকি সমর্থকরা। সিটি বাজিয়ে, নানা রকম কটু কথা বলে উত্তেজিত করে জেতানোর চেষ্টা করতে লাগল। খেলার উত্তেজনায় কখন যে তাদের দলে মিশে গেলেন রাবাত আর তিন গোয়েন্দা, খেয়ালই রইল না। শেষ পর্যন্ত যখন ব্রংক্স বহুবাররা হেরে গেল, শির উঁচু করে তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে বেরোনোর জন্যে উঠে দাঁড়ালেন রাবাত। ঘাড় কাত করে মুসার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি, বলেছিলাম না ইয়াংকিরা জিতবে?
প্রচুর দর্শক হয়েছে। বেরোনোর গেটে ভিড়। ঠেলাঠেলি করে বেরোতে হচ্ছে। কনুইয়ের গুতো মেরে ভিড়ের ভেতর দিয়ে পথ করে এগোলেন। রাবাত। স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে রেল স্টেশনে চলে এলেন। জনতার কোলাহল বিরক্তিকর, তবু বিকেলটা ভাল লাগল তার। সুন্দর বাতাস বইছে।
ম্যানহাটানের ট্রেন এসে দাঁড়াল। তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে ট্রেনে উঠলেন। রাবাত যে কামরাটায় উঠলেন, তাতে বেজবল খেলার বেশ কিছু ভক্তও উঠেছে। দরজা বন্ধ হলো। চলতে শুরু করল ট্রেন। মুসার চোখে পড়ল বাদামী সোয়েটার পরা এফ বি আইকে, প্ল্যাটফর্মে জনতার ভিড়ে আটকা, পড়েছে সে, পাগলের মত তাকাচ্ছে এদিক ওদিক, ওদেরকে খুঁজছে। জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিল মুসা। দেখতে পেল লোকটা। গতি বেড়ে গেছে। ট্রেনের। বাদামী সোয়েটারকে ফেলে রেখেই প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে চলে। এল।
মুসার দুপাশে চেপে আছে দুজন ভক্ত। একজন হোঁৎকা বিশালদেহী লোক, গায়ে স্পোর্টস কোট; আরেকজন মুসার চেয়ে দু-এক বছরের বড় হবে, কোন কিছু না ধরেই দাঁড়িয়ে আছে, একনাগাড়ে পিনাট খেয়ে চলেছে। শরীর মোড়ামুড়ি করে কোনমতে দুজনের মাঝখান থেকে বেরিয়ে কিশোরের কাছে চলে এল মুসা। একটা ধাতব হ্যান্ড-স্ট্র্যাপ ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিশোর।
বডিগার্ডকে খুইয়েছি, তাকে বলল মুসা। বাদামী সোয়েটার পরা লোকটাকে প্ল্যাটফর্মে দেখলাম, উঠতে পারেনি।
বডিগার্ড? হেসে উঠল হাড্ডি সর্বস্ব একটা মেয়ে। বয়েস ষোলো সতেরো হবে। মাথায় বেগুনী রঙের কাপড় অনেকটা পাগড়ির মত করে পেচিয়েছে। সেটে আছে প্রায় কিশোরের গায়ের সঙ্গে। অকারণ কথা বলে বলে তার কান পচিয়ে ফেলার জোগাড় করেছে। গায়ে মাংস না থাকলে কি হবে, গলাটা যেন মাইক। এমন করে ফাটা বাশে বাড়ি মারছে, কিশোরের ভয় হতে লাগল, কামরার সব লোকই শুনে ফেলবে। কিসের বডিগার্ড? ভি আই পি নাকি তোমরা! বাব্বাহ, বডিগার্ডও থাকে সঙ্গে! পরের বার প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে দাঁড়াবে নাকি!
খুব সাংঘাতিক কোন রসিকতা করে ফেলেছে যেন মেয়েটা, এমন ভঙ্গিতে নিজের কথায় নিজেই পুলকিত হলো। তার কথায় মজা পেল আরও কয়েকজন যাত্রী। মুসার দিকে তাকাল।