কিশোর, রবিন বলল, ব্যাপারটা নিয়ে কালও আলোচনা করা যাবে। এখন আর পারছি না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
আমারও, মুসা বলল। আমি ভেবেছিলাম, ছুটি কাটাতে বেরিয়েছি। কিন্তু ছুটি যে এত টেনশনের, কল্পনাও করিনি।
এত তাড়াতাড়ি ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না কিশোরের। বলল, ঠিক আছে, তোমরা ঘুমাও।
ঘুমিয়ে পড়ল রবিন আর মুসা। চুপচাপ ছাতের দিকে তাকিয়ে রইল। কিশোর। কোন শব্দ নেই। পাশের ঘর থেকে ভেসে আসছে কেবল রাবুনানার নাসিকা গর্জনের শব্দ।
.
১৫.
পরদিন ভোর হওয়ার আগেই ওদেরকে ডেকে তুলে বেরিয়ে পড়লেন রাবাত। ভ্রমণটা আর ভ্রমণ নেই এখন ওদের জন্যে, তাড়া খেয়ে পালানোর অবস্থা হয়েছে। গায়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা ধরে চলা বাদ দিয়েছে, কারণ, লাভ নেই। যে পথে যত সতর্ক থেকেই ওরা চলুক না কেন, শত্রুরা ঠিক বুঝে ফেলছে। ওদের পিছু নিয়ে চলে আসছে। সুতরাং হাইওয়ে ধরে যাওয়াই ভাল। তাতে ঝামেলা কম হবে, তাড়াতাড়ি চলা যাবে, সময়ও বাঁচবে। আরও একটা ব্যাপার, হাইওয়েতে যানবাহনের ভিড় থাকায় দিনে-দুপুরে আক্রমণ করতেও দ্বিধা করবে শত্রুরা।
ইনডিয়ানার পর ওহাইওর ভেতর দিয়ে ছুটতে লাগল ওরা। একটানা চালিয়ে সন্ধ্যাবেলা কাহিল হয়ে পড়লেন রাবাত। মেজাজ গেল বিগড়ে। এ সবের জন্যে দায়ী করতে লাগলেন মিলারকে। তাকে এখন পেলে কি করবেন, উত্মার সঙ্গে সে-কথা বলতে লাগলেন। পেনসিলভানিয়ায় এসে আর চালানোর সাধ্য হলো না। হাইওয়ে থেকে দুশো গজ দূরে একটা মোটেলে রাত কাটানোর জন্যে থামলেন।
তোমরা গিয়ে সাঁতার কাটো, টেলিভিশন দেখো, যা ইচ্ছে করো, বললেন তিনি। আমি পেট্রোল আনতে যাচ্ছি। চলে আসব এখনই।
আমরাও যাব তোমার সঙ্গে, মুসা বলল।
কি দরকার? বডিগার্ড লাগবে না আমার! ধমকে উঠলেন রাবাত। মেজাজ খারাপ হয়েছে ভালমতই। রাস্তার ওপরই একটা পেট্রোল স্টেশন দেখে এসেছি। নিয়ে আসি। যাব আর আসব।
আর কিছু বলার সাহস পেল না মুসা।
ঘরে এসে টেলিভিশন চালু করে দিল ওরা। পর্দায় চোখ আছে, মন নেই। চিন্তিত। রাবুনোর ফেরার অপেক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে রইল।
বিশ মিনিট গেল। আধঘণ্টা।
মুসা বলল, এত দেরি! নিশ্চয় কিছু ঘটেছে।
ঘরের মধ্যে পায়চারি শুরু করল কিশোর। জানালার কাছে উঠে গেল রবিন। বাইরে তাকিয়ে রইল। ছোট একটা শহরের প্রান্তে ঠাঁই নিয়েছে ওরা। গাছপালার ভেতর দিয়ে শহরের আলো দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই হয়তো কোন জিনিস কেনার কথা মনে পড়েছে, বলল সে। শহরে চলে যাননি তো?
কিংবা এখানে পেট্রোলের দাম বেশি দেখে অন্য কোন পাম্পে গেছেন, বলল কিশোর। কিন্তু কেন যেন কথাটা বিশ্বাস হতে চাইল না নিজেরই।
আরও পনেরো মিনিট পেরোল। আর অপেক্ষা করতে পারল না ওরা। জ্যাকেটগুলো আবার গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে এল ঘর থেকে। রাস্তায় নামল।
মোটেলে সবচেয়ে কাছের পাম্পটায় পাওয়া গেল না তাঁকে। কর্মচারী জানাল, ওরকম কাউকে দেখেনি। তবে, বলল সে, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা একটা গাড়ি দেখেছি। এত দূর থেকে গাড়িতে করে সাধারণত আসে না। কেউ কালেভদ্রে হয়তো দুএকটা চোখে পড়ে।
পরের স্টেশনটায় চলল গোয়েন্দারা। ঘন হয়ে আসছে তখন অন্ধকার। দ্বিতীয়টাতেও পাওয়া গেল না রাবাতকে। তৃতীয় স্টেশনটা রয়েছে পথের মোড়ে। সেখানকার কর্মচারী ছেলেদের বয়েসী। সে জানাল, বুইক গাড়িওয়ালা একজন বুড়ো মানুষকে দেখেছে।
আধঘণ্টা আগে, ছেলেটা বলল, কিংবা আরও কিছুটা বেশি হবে, বুড়ো লোকটা তেল নিতে এল। ট্যাংক ভরে তেল নিল। তেল আর পানি চেক করে দিলাম। টায়ারের হাওয়াও।
এখান থেকে বেরিয়ে কোনদিকে গেছে দেখেছ? জিজ্ঞেস করল মুসা।
যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকেই, মোটেলের দিকে দেখাল ছেলেটা। তারপর কোথায় গেল, খেয়াল করিনি। দুটো মোটর সাইকেল ঢুকল তখন। ওদের তেল দিতে গেলাম।
মোটর সাইকেল?
ভুরু কুঁচকে ফেলল কিশোর। ছেলেটা মুসার প্রশ্নের জবাব দেয়ার। আগেই জিজ্ঞেস করল, কয়টা বললে?
দুটো। কেন?
নাঃ ইয়ে..অনেক পশ্চিমে একটা মোটর সাইকেল গ্যাঙের সঙ্গে গণ্ডগোল বেধেছিল আমাদের। ওরাই কিনা বুঝতে চাইছি। ওরা কোন দিকে গেছে, দেখেছ?
ওদিকেই, বুড়ো লোকটা যেদিকে গেল। রাতে এখানে কোথায় ক্যাম্প করলে ভাল হয় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল ওরা। পার্সনস উডের পিকনিক গ্রাউন্ডের কথা বলে দিলাম। শোনো, একটা কথা বলি, গোয়েন্দাদের উদ্বেগ দেখে সন্দেহ হয়েছে ছেলেটার, তোমাদের কি মনে হচ্ছে লোকগুলো বুড়ো মানুষটার ক্ষতি করবে? বলো তো পুলিশে ফোন করতে পারি।
দ্বিধা করতে লাগল গোয়েন্দারা। নানার বদমেজাজের কথা ভাবল মুসা। অতি সামান্য কারণেও রেগে ওঠেন অনেক সময়। আজ বিকেলে মেজাজ খুবই খারাপ। ছেলেরা তার জন্যে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করছে ভাবলেই ফেটে পড়বেন।
থ্যাংকস, বলল মুসা, লাগবে না। সাহায্যের দরকার হলে তোমাকে জানাব।
পিকনিক গ্রাউন্ডে কি করে যেতে হয়? জিজ্ঞেস করল রবিন।
ছেলেটা জানাল, ওখান থেকে বড়জোর আধ মাইল দূরে। অফিস থেকে একটা শূন্য ওঅর্ক অর্ডারের ফর্ম নিয়ে তার উল্টো দিকের সাদা অংশে নকশা একে দেখাল কি করে যেতে হবে ওখানে। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এল। গোয়েন্দারা। ফিরে এল হাইওয়েতে। নকশাটা রবিনের হাতে।
মোটেলের দিকে এগোনোর সময় দেখল মেইন রোড থেকে একটা রাস্তা নেমে গেছে বায়ে। নকশায় এই রাস্তাটাই একে দিয়েছে পাম্পের ছেলেটা। সেটা ধরে এগোল ওরা। সামনে বাড়িঘর কিংবা দোকান চোখে পড়ল না। খানিক পর পর ল্যাম্পপোস্ট আছে রাস্তায়। কিছুদূর গিয়ে আর তা-ও নেই। অন্ধকার। তবে চাঁদ উঠছে। তার ফ্যাকাসে আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।