দরজার কাছে একটা ওয়াটার কুলার দেখতে পেয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল রবিন। পানি বের করার হাতলটা চেপে ধরল। তাকে সরানোর জন্যে টানাটানি শুরু করল লোকটা। পারল না। টান লেগে পানি বেরিয়ে আসতে লাগল। পানি পড়তে লাগল রবিনের মুখে, গলায়; শার্ট ভিজে গেল। কিন্তু বোতাম ছাড়ল না। চিৎকারও বন্ধ করল না।
দেখো, ধমক দিয়ে বলল লোকটা, বন্ধ করো এ সব! জোরে বলল না সে, কণ্ঠস্বর দাবিয়ে রাখল। যেন অবাধ্য ছেলেকে শাসন করছে বাবা।
চেঁচামেচি শুনে সেখানে এসে হাজির হলো অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার। কি হয়েছে?
না, কিছু না, শান্তকণ্ঠে বলল লোকটা। রবিনের কব্জি ছাড়েনি। তার হাতল ধরা হাতটাও ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। ম্যানেজারকে বলল, রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে ছেলেটা…
মিথ্যে কথা! আরও জোরে চিৎকার করে উঠল রবিন। এই লোক আমার বাবা নয়! জীবনে চোখেও দেখিনি একে! ও একটা ডাকাত! হোটেলে আগুন লাগিয়েছে! কিডন্যাপার! জলদি পুলিশ ডাকুন!
ছোটখাট ভিড় জমে গেল। চার-পাঁচজন দোকান-কর্মচারী ঘোট ঠেলাগাড়িতে করে মাল নিয়ে চলেছিল, দাঁড়িয়ে গেল। ওদের মধ্যে একজন তরুণ ক্লার্কও রয়েছে, লাল জ্যাকেট পরা।
হ্যারি, ওকে বলল ম্যানেজার, যাও তো, শেরিফের অফিসে ফোন। করো। এখানে কি হয়েছে বলবে। ওরা এসে যা করার করুক।
আশ্চর্য! ধমকে উঠল মিলারের সঙ্গী। এর মধ্যে আবার পুলিশ ডাকাডাকি কেন? গলার স্বর খাদে নামিয়ে ম্যানেজারকে বলল, আসল কথা। কি জানেন? নেশা ধরেছে ও। বাড়ি থেকে পালিয়েছে। শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটাকে…
ও আমার বাবা নয়! জোরে চিৎকার করে উঠল রবিন। আমার নাম পর্যন্ত জানে না, জিজ্ঞেস করে দেখুন?
লোকটার দিকে তাকাল ম্যানেজার।
জিজ্ঞেস করুন ওকে! আবার বলল রবিন। আমার নাম বলতে বলুন। বলতে পারবে না।
মসৃণ হাসি হাসল লোকটা। নিজের ছেলের নাম আবার বলতে পারে না কেউ? বনেট। ওর নাম বনেট।
কুলারের হাতল ছেড়ে দিল রবিন। পকেট থেকে বের করে আনল মানিব্যাগ। তার ভেতর থেকে স্টুডেন্ট আইডেনটিটি কার্ড বের করে বাড়িয়ে দিল ম্যানেজারের দিকে, দেখুন, আমার নাম আসলে কি? ছবিও আছে। চিনতে অসুবিধে হবে না আপনার।
কার্ডটা হাতে নিল ম্যানেজার।
মিলারের সঙ্গী ভাবেনি রবিনের সঙ্গে কার্ড আছে। আর একটা মুহূর্ত দাঁড়াল না সে। দোকান থেকে বেরিয়ে পালাল।
.
১৪.
সুপারমার্কেটের ডেইরি সেকশনের পেছনে সেঁতসেঁতে ছোট ঘরটায় বসে ডেপুটি শেরিফের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে রবিন। কিন্তু বোঝানো সহজ হচ্ছে না।
কেন তোমাদের পেছনে লোক লাগবে? জিজ্ঞেস করল অফিসার।
মিস্টার রাবাত বলেছেন, তার আবিষ্কৃত একটা জিনিসের ফর্মুলা নিয়ে। চলেছেন। সেটাই ছিনিয়ে নিতে চাইছে লোকটা।
রাবাত কে জানতে চাইল অফিসার। তার বন্ধুর নানা, জানাল রবিন। কি জিনিস আবিষ্কার করেছেন রাবাত, জানে না সে। তাদেরকে বলেননি তিনি। নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাবেন। বিশেষ কারও কাছে বিক্রি করবেন ওটা। সেই বিশেষ লোকটি কে, তা-ও জানে না সে। শেষে বলল, মিস্টার রাবাত বলেন, আমাদের জন্যে জানাটা নাকি বিপজ্জনক। না জানলেই ভাল।
কিন্তু বিপদটা তো এড়াতে পারলে না, অফিসার বলল।
মাথা ঝাঁকাল রবিন। অফিসার তাকে মোটেলে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দিলে খুশি হয়েই রাজি হলো।
গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দিল অফিসার।
কি ঘটেছে শুনে রেগে আগুন হলেন রাবাত। কি আবিষ্কার করেছেন, অফিসারকে জানাতে রাজি নন মোটেও। রকি বীচ থেকে যে তাদের পিছু নেয়া হয়েছে, সব খুলে বললেন। কোন কথা বাদ দিলেন না। মোটেলে আগুন লাগার কথাও নয়। পেট্রোল ট্যাংকের নিচে যন্ত্র আটকে দেয়ার কথা বললেন। এমনকি লা ক্রসে লোকটা যে বুইকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল সে-কথাও।
চুপচাপ শুনল অফিসার। শৈষ দিকে অবিশ্বাসের ভঙ্গি দেখা দিল তার চোখেমুখে। বলল, তাই নাকি? আর কিছু ঘটেছে?
কেন, যথেষ্ট হয়নি? আরও কিছু ঘটুক, চান নাকি? রেগে উঠলেন রাবাত।
না না, তা বলিনি।
মাউন্ট সেইন্ট হেলেনে দেখা গাড়িটার নম্বর অফিসারকে জানাল কিশোর। রিপোর্ট লিখে নিল অফিসার। তার নিচে সই করলেন রাবাত আর রবিন।
বেরিয়ে গেল অফিসার। চেহারা দেখেই বোঝা গেল, ওদের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি সে।
ওই দুই ব্যাটাকে ধরতে পারবে না পুলিশ, রাবাত বললেন। এতক্ষণে শহর ছেড়ে পালিয়েছে ওরা।
তার কথার প্রতিবাদ করল না কেউ।
রাতে বিছানায় শুয়ে কিশোর বলল, একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না।
মুসা কেবল গোঙাল। ঘুমে ভারী হয়ে এসেছে চোখ।
রবিন জিজ্ঞেস করল, কি?
তোমাকে কিডন্যাপ করতে চাইল কেন?
রাবুনানার আবিষ্কার আদায় করার জন্যে।
সেটা তো বুঝেছি। আমি বলতে চাইছি, তোমাকে কেন? আমাকে আর মুসাকে নয় কেন?
কি জানি। হয়তো তক্কে তক্কে ছিল, যাকে একা পেয়েছে তাকেই ধরেছে। আমাদের আগে তোমাদের পেলে তোমাদেরও ধরত।
তন্দ্রা টুটে গেছে মুসার, শান্তশিষ্ট দেখেছে তো, হয়তো, ভেবেছে ওকে ধরাটাই নিরাপদ।
হাসল কিশোর। শান্ত যে কি পরিমাণ, সেটা তো বুঝিয়ে দিয়েছে। চিন্তায় ডুবে গেল সে। আনমনে বিড়বিড় করতে লাগল, লোকটা বলেছে–তোমাদের সঙ্গে জিনিসটা নেই। আমরা ধারণা করছি, জিনিসটা রাবুনোর আবিষ্কার। কিন্তু অন্য কিছুও হতে পারে।