ও! এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অফিসার বলল, ঠিক আছে, হ্যারিস মিলারের চেহারার বর্ণনা দিন। কি গাড়িতে করে এসেছে…
প্রথম একটা লিংকনে করে পিছু নিয়েছিল। এখন সম্ভবত গাড়িটা বদলে ফেলেছে। তবে এখন আর ওসব আলোচনা করে লাভ নেই। ওকে ধরতে পারবেন না। পালানোর ইচ্ছে থাকলে বহুদূরে চলে গেছে!
মাথা ঝাঁকাল অফিসার। মসৃণ হাসি ফুটল ঠোঁটে। রাবাত আর তিন। গোয়েন্দার নাম আর বাড়ির ঠিকানা লিখে নিল। কিশোরের কাছ থেকে লিংকন গাড়িটার লাইসেন্স নম্বরও লিখে নিল। তারপর সহকারীকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ কারে উঠল।
গাধা কোথাকার! বলে উঠলেন রাবাত। অহেতুক সময় নষ্ট করে গেল! কিছু করবে না ও! করার চেষ্টাও করবে না!
করবে কি, ও তো তোমাকে পাগল ভেবে গেছে! মুখ ফসকে বলে ফেলল মুসা। নানা রেগে যাচ্ছেন বুঝে তাড়াতাড়ি সামাল দিল, কারোর কিচ্ছু করা লাগবে না। মিলার যদি পিছু নেয়, আমরাই ওর ব্যবস্থা করব!
.
১০.
দুই দিন পর। ইডাহোর ভেতর দিয়ে চলেছে ওরা, মনটানার লিভিংস্টোনের দিকে। আরও দক্ষিণে এগোলে পড়বে ওয়াইয়োমিঙের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। টুরিস্ট মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। রাস্তায় যানবাহনের ভিড় তাই কম।
ইয়েলোস্টোনে পৌঁছে মাটিতে ফাটল থেকে ধোয়া উঠতে দেখল ওরা। এখানে ওখানে ফোয়ারার মত পানি ছিটকে উঠছে ওপরে, কোন কোনটা একশো ফুটের বেশি ওপরে উঠে যাচ্ছে। পানির রঙ লোহার মরচের মত লাল। তাজ্জব হয়ে দেখল, রাস্তার ধারে ডোবা, তাতে গলিত কাদা থেকে বুদ্বুদ উঠছে–যেন ওগুলোর তলায় বিশাল সব চুল্লিতে আগুন জ্বলছে, কাদা। ফুটতে শুরু করবে খানিক পরই। সুন্দর সুন্দর লেক আর ঝর্নার ছড়াছড়ি। এক সময় এটা ছিল আগ্নেয়গিরির এলাকা, এখন সেগুলো মরে গেছে। এত সুন্দর দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্যে মিলারের ভাবনা ওদের মন থেকে মুছিয়ে দিল।
তারপর পার্ক রোড ধরে এগোতে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকাল রবিন আর মুসা। জোরে নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। নীরবে শত্রু খুঁজছে মুসার চোখ।
মাউন্ট সেইন্ট হেলেন পেরোনোর পর থেকে সন্দেহজনক আর কিছু দেখিনি, রবিন বলল।
জানানোর সময় এসেছে, ভাবল কিশোর। লংভিউর মোটেলে ড্রাইভওয়েতে বড় গাড়িটা দেখার কথা বলল সে। হ্যারিস মিলারই গাড়িটা চালাচ্ছিল কিনা, বলতে পারব না।
হয়তো এতক্ষণে রকি বীচে চলে গেছে মিলার, রবিন বলল, অর্কিড গাছে পানি দিচ্ছে। মোটেলে আগুন লাগাটা হয়তো নেহায়েত কাকতালীয় ঘটনা। কোন ছিঁচকে চোর স্টোর রুমে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ঘর থেকে। আমাদের বের করেছিল…
আরে দূর! মুসা যে ভঙ্গিতে বলে, সেভাবে বলে উঠলেন রাবাত। সাধারণ চোর হতেই পারে না। হলে চুরি করল না কেন? প্রচুর জিনিস ছিল, সুযোগও ছিল। আমার মানিব্যাগটাই তো পড়ে ছিল টেবিলের ওপর। দুয়েও দেখেনি। তোমার ক্যামেরাটা দামী, ওটাও নিতে পারত।
পেলে হয়তো নিত। কাল রাতে গাড়িতে ছিল ওটা। ঘরে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু টাকা? সামনে পেলে টাকা নেয় না এমন চোরের কথা শুনিনি। চালাকি করে স্টোর রুমে আগুন লাগিয়ে বোর্ডারদের বের করে জিনিস চুরি করার কথাও ভাবে না সাধারণ চোর। সুযোগ পেলে চট করে ঘরে ঢুকে পড়ে। কিছু পেলে নিয়ে চলে যায়।
পুরানো হয়ে এল ফোয়ারা। প্রথম দেখার পর যেমন লেগেছিল, অতটা ভাল লাগছে না আর। উত্তেজনাও কমে গেল।
রাবাত বললেন। জায়গাটা বেশি খালি! অত শূন্যতা ভাল লাগে না!
নানার অস্বস্তিটা মুসার মাঝেও সঞ্চারিত হলো। মনে করিয়ে দেয়ার পর এখন কেমন ভূতুড়েই লাগছে এলাকাটা তার কাছে। বলল, তাড়াতাড়ি করো, নানা, সরে যাই! দেখার কিছু আর নেই এখানে!
শেষ বিকেলে মনটানা-ওয়াইয়োমিং সীমান্তের কাছে একটা ছোট শহরে ঢুকল ওরা। মোটেল খুঁজে বের করল। মালপত্র ঘরে রাখার পর বুইকটা নিয়ে চলে গেলেন রাবাত। পার্কিং লট থেকে দূরে রাস্তার ধারে গাড়ি রেখে এলেন। ইচ্ছে করেই রাখলেন, মিলারের জন্যে টোপ। দেখতে চান, সে আসে কিনা, খোলার চেষ্টা করে কিনা। বাকি বিকেলটা কাটালেন গাড়ির কাছে যাতায়াত করে।
পঞ্চমবার যখন গাড়িটা দেখতে চললেন তিনি, আর থাকতে পারল না মুসা। বলল, এ ভাবে গিয়ে লাভটা কি হচ্ছে? ক্ষতি করছ আরও। মিলার এলে তোমার এই ঘনঘন যাওয়া-আসা দেখলে সতর্ক হয়ে যাবে। জেনে যাবে আমরা কোথায় উঠেছি। রাতে এসে হানা দেবে।
মুসার কথায় যুক্তি আছে। আর গেলেন না রাবাত। ঘরে ফিরে এলেন। খানিক পরই তার নাক ডাকানোর শব্দ কানে এল।
জেগে রইল তিন গোয়েন্দা। কয়েউর ডিঅ্যালিনির মোটেলে আগুন লাগার ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল।
মিলারকে সন্দেহ করতে পারছি না আমি, মুসা বলল। সে এল কি করে মোটেলে? জানল কি করে আমরা ওটাতে উঠেছি? আমাদের পিছে আসতে দেখিনি তাকে। অন্য গাড়ি নিয়ে অনুসরণ করলেও চোখে পড়ে যেত আমাদের। এত দীর্ঘ পথ কিছুতেই লুকিয়ে থাকতে পারত না।
আচ্ছা, হেলিকপ্টারে করে আসেনি তো? রবিনের প্রশ্ন।
নাহ! সম্ভাবনাটা একেবারেই ঝেড়ে ফেলে দিল মুসা। হেলিকপ্টার পাবে কোথায়? ভাড়া করতে অনেক টাকা লাগে। তা ছাড়া অতিরিক্ত শব্দ করে হেলিকপ্টার। নিঃশব্দে অনুসরণ করা একেবারে অসম্ভব।
চুপ হয়ে গেল রবিন।
হঠাৎ বিছানায় সোজা হয়ে বসল কিশোর। ওকে ফোন করব! ইস, আরও আগে এ কথাটা ভাবলাম না কেন? রকি বীচে ওর বাড়িতে ফোন করলে যদি জবাব দেয় তাহলে বুঝব আমাদের সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাওয়াটা কাকতালীয় ঘটনা ছিল। আবার ফিরে গেছে। আমাদের দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।