আচ্ছা, পেছনে লেগেছে কেন মিলার? কাকতালীয় ঘটনা বলে আর মেনে নিতে পারছে না কিশোর। রাতে দ্বিতীয়বার এল কেন মিলার? তবে কি রাবুনানার কথাই ঠিক? তার আবিষ্কারের ফর্মুলা কেড়ে নিতে চায় মিলার? আবিষ্কারটা কি? কোন সূত্র নেই, সুতরাং কি জিনিস হতে পারে আন্দাজও করতে পারছে না সে। জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। ইচ্ছে করে না বললে তার মুখ থেকে কিছু বের করতে পারবে না।
মিলারের আচরণ যেহেতু সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে, তার ব্যাপারে জানা দরকার। আলোচনা শুরু করার জন্যে বলল, অর্কিডের কথা ভাবছি।
কিশোরের এই অপ্রাসঙ্গিক কথায় অবাক হলো রবিন। অর্কিড! কিসের অর্কিড?
কেন, ভুলে গেছ, মিস্টার মিলার অর্কিডের চাষ করে?
হ্যাঁ, করে, জবাব দিলেন রাবাত। তার কথায় যোগ দেবেন তিনি, এটাই চাইছিল কিশোর। বলল, কিন্তু বাগান করার মত ধৈর্য তার আছে বলে তো মনে হয় না। লনের ঘাস কাটার ইচ্ছে হয় না যার, সে অর্কিডের চাষ করে, ভাবতে কেমন অবাক লাগে না?
লনের ঘাস কাটলে তো আর পয়সা আসে না, কাটবে কেন? গাছ, ফুল, কিংবা বাগানের প্রতি কোন আগ্রহ নেই মিলারের, তার একমাত্র আগ্রহ–টাকা। অর্কিডের পেছনে সময় ব্যয় করে টাকা আসে বলে। ফুল বিক্রেতারা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। একটা অর্কিড ক্লাবের সদস্য সে। মাসে একবার করে মিলিত হয় সবাই। তখন ওর মতই কিছু পাগলকে অর্কিড দেখাতে বাড়ি নিয়ে আসে মিলার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিনা লাভে আনে না। ওদের কাছ থেকেও কিছু না কিছু হাতিয়ে নেয় সে। অন্য কিছু আদায় করতে না পারলে কায়দা করে ওদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। মাঝেমধ্যেই দেখি অপরিচিত একজন ওর গ্রীনহাউসে কাজ করছে।
কারা ওরা?
হবে ওর ক্লাবের কোন বোকা লোক।
এখন কেউ আছে নাকি? জানতে চাইল কিশোর।
কি জানি। ও সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। অত পাজি মানুষ আমি জীবনে দেখিনি! অভদ্র! এই ব্লকে যখন প্রথম এল, কি করেছিল জানো? একবার আমার পানির পাইপে গোলমাল দেখা দিল। পানি সরবরাহ বিভাগকে খবর দিলাম। এসে দেখল মেইন লাইনে ছিদ্র হয়ে গেছে, সেটা দিয়ে সব পানি বেরিয়ে যায়। সারানোর সময় আমার বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। খাওয়ার পানি নেই ঘরে। ভাবলাম, কি আর হবে, পড়শীই তো, একটা কেটলি নিয়ে মিলারের বাগানের কলে গেলাম পানি আনতে। কি করল সে জানো?
নিশ্চয় পুলিশ ডাকল? অনুমানে বলল রবিন।
ডাকার হুমকি দিল। অবাক হয়ে গেলাম। আরও অভিযোগ করল, আমি নাকি তার লাইনের সঙ্গে হোস পাইপ লাগিয়ে পানি চুরি করে নিয়ে যাই বাগানে দেয়ার জন্যে। যেন ওই কটা টাকার পানি চুরি করার জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছি আমি!
মিলারের কথা বলতে গিয়ে রেগে যাচ্ছেন রাবাত। এই প্রথম রেডউডের জঙ্গলের ওপর থেকে নজর সরে গেল তার।
মিলারটা একটা প্যারানয়েড, কোন সন্দেহ নেই, বললেন তিনি। এই জন্যেই ওরকম ভাবনা মাথায় ঢোকে। প্যারানয়েড কাকে বলে জানো? মগজের এক ধরনের রোগ। এ সব রোগীরা সব মানুষকেই সন্দেহের চোখে দেখে। ভাবে, এই বুঝি কেউ তার সব জিনিস চুরি করে নিয়ে গেল, তার ক্ষতি করতে এল। মিলার একটা প্যারানয়েড! কথাটা আবার বললেন তিনি।
রাবাতের রাগ চরমে পৌঁছার আগেই তাকে থামানো দরকার। আপাতত মিলারের ভাবনা তার মাথা থেকে দূর করতে না পারলে অবস্থা কোন দিকে গড়াবে বলা যায় না। তাই চুপ হয়ে গেল কিশোর। ও ব্যাপারে আর কোন প্রশ্ন করল না।
নীরবে গাড়ি চালালেন রাবাত। দিনটা চমৎকার, রেডউডের জঙ্গলেরও এক ধরনের আকর্ষণ আছে, যা খুব তাড়াতাড়িই রাগ কমিয়ে দিল তার।
পথে কোন অঘটন ঘটল না। ক্যালিফোর্নিয়ার সাগর তীরের ছোট্ট শহর ক্রিসেন্ট সিটিতে নিরাপদে পৌঁছল ওরা। সূর্য তখন দিগন্ত সীমার প্রায় কাছাকাছি নেমে গেছে। একটা মোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে আগে গোসল সেরে নিল সবাই। তারপর বেরোল শহরটা ঘুরে দেখতে।
মনটিরের ফিশারম্যান ওআর্ফ জেটির তুলনায় এখানকার জেটিটা অনেক ছোট। তবে বেশ ছিমছাম। পানির ধারে পার্কিঙের জায়গা আছে, কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আর গোটা দুই বড় ধরনের দোকানও আছে। রেস্টুরেন্টগুলোর কাছ থেকে কিছুটা দূরে নৌকা বাঁধার জায়গা। ছোট জেটি হলেও যথেষ্ট সরগরম। নৌকা পরিষ্কার করছে কয়েকজন মাল্লা। কেউ পরিষ্কার করছে, কেউ বা ছেঁড়া পাল মেরামতে ব্যস্ত। সী-গাল উড়ছে। বেড়াতে আসা দম্পতিরা অলস ভঙ্গিতে হাঁটছে পাকা চত্বরে, সূর্যাস্ত দেখছে।
মিলারকে বোধহয় এড়ানো গেল, আচমকা বলে বসলেন রাবাত।
এই রে, সেরেছে! শঙ্কিত হয়ে পড়ল মুসা। ভেবেছিল, অর্কিড ব্যবসায়ীর কথা ভুলে গেছেন নানা। কিন্তু না, ভোলেননি। মেজাজ এখন কেমন হয়ে যায়, কে জানে!
আসার সময় রিয়ারভিউ মিররে চোখ রেখেছিলাম, রাবাত বললেন, কোন গাড়িকে আমাদের লেজে লেগে থাকতে দেখিনি। কাল রাতে তোদের তাড়া খেয়ে ভয় পেয়েছে শেয়ালটা, তাতেই মুরগী চুরির লোভ উবে গেছে।
হবে হয়তো, হেসে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনাটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করল মুসা।
রাস্তায় অনেকগুলো ইঞ্জিনের শব্দ আর হই-চই শোনা গেল।
সাতটা মোটর সাইকেল ছুটে আসছে জেটির দিকে। আরোহীরা সবাই তরুণ, কালো চামড়ার জ্যাকেট পরা।
হুমম! মাথা দোলালেন রাবাত। চালচলন ভাল মনে হচ্ছে না!