- বইয়ের নামঃ ডাকাতের পিছে
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
ডাকাতের পিছে
০১.
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল রান্নাঘরের দরজা। দড়াম করে বন্ধ হলো। গটমট করে ভেতরে ঢুকলেন। মিসেস আমান। চোয়াল কঠিন। ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট চেপে বসা। হ্যান্ডব্যাগটা টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে ধপ করে বসে পড়লেন চেয়ারে।
আর সহ্য হয় না এই অত্যাচার! কপাল চাপড়ে বললেন তিনি। ইচ্ছে করছে গুলি করে শেষ করে দিই। তারপর আমার জেল-ফাঁসি যা হয় হোক!
কি হয়েছে, মা? শঙ্কিত হয়ে উঠেছে মুসা।
কি আর! তোর নানা! আবার একটা অঘটন ঘটিয়েছে!
আবার কি করল?
জ্বলন্ত দৃষ্টিতে প্রথমে মুসার দিকে তাকালেন মিসেস আমান। তারপর একে একে তার দুই বন্ধু কিশোর আর রবিনের দিকে। ডাইনিং টেবিলে বসে বিস্কুট খাচ্ছে ওরা।
পানি ছিটানোর জন্যে একটা ফোয়ারা বসিয়ে দিয়ে এসেছে গির্জার হলরুমে। নতুন ধরনের একটা স্প্রিঙ্কলার সিসটেম। ঘর ধোয়ার জন্যে। ভালমানুষী করে দান করেছে। করেছে, ভাল কথা, কিন্তু সেই সঙ্গে নিজের আরও একখান আবিষ্কার লাগিয়ে দিয়ে এসেছে। ফোয়ারা চালু করার একটা যন্ত্র। সুইচ টিপলে হালকা ধোয়া তৈরি করে যন্ত্রটা, সেই ধোয়া গিয়ে লাগে সিসটেমে, চালু হয়ে যায়। তাতেই হয়েছে সর্বনাশ। হলঘরটা ভাড়া নিয়ে মহিলারা ফ্যাশন শো করছিল। এই সময় জ্বালানো সিগারেট নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়লেন পাদ্রী সাহেব। ব্যস, কোন দিক থেকে যে কি ঘটে গেল, ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল ঘরের সমস্ত লোক। ফ্যাশন শো মাথায় উঠল। মোটা টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসেছে কোম্পানি। টাকাটা বাবাকে দিতে হবে। হুমকি দিয়েছে, নইলে কেস করে দেবে তার নামে। বাজারে গিয়েছিলাম। মিসেস গিলবার্ট আমাকে এ খবর জানাল। কেন বাপু, দুনিয়ায় এত জিনিস থাকতে ধোয়াকে ট্রিগার করার কুবুদ্ধি কেন? আর কি কিছু ছিল না?
হাসি দমন করার অনেক চেষ্টা করেও পারল না মুসা। বলল, নানা হয়তো ভেবেছিল এখন দুনিয়া জুড়ে সিগারেট বিরোধী আন্দোলন চলছে, ধোয়া কোন সমস্যা নয়। তা ছাড়া গির্জার ভেতর তো কেউ সিগারেট খায় না। স্বয়ং পাদ্রী সাহেবই যে এই কাণ্ডটা করে বসবেন, তা কি আর নানা ভেবেছিল।
দেখ, অত হাসবি না! গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা কর! ধমকে উঠলেন মিসেস আমান। কিন্তু বেশিক্ষণ তিনিও গভীর থাকতে পারলেন না। ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা দিল। আর ঠেকানো গেল না ছেলেদের। হাসির রোল পড়ে গেল।
কিশোর বলল, কাজটা তিনি ভালই করতে গিয়েছিলেন। দোষটা তো। পাদ্রী সাহেবের।
মোটেও তা নয়, আবার গম্ভীর হয়ে গেলেন মিসেস আমান। দোষটা আমার বাবারই। অত সেনসিটিভ একটা ট্রিগার কেন বানাতে গেল? আর সেটা বসাতেই বা গেল কেন ওরকম একটা জায়গায়, যেখানে পাবলিক মীটিঙ চলে? প্রার্থনার সময় কেউ খায় না বটে, কিন্তু অন্য অনুষ্ঠান চলার সময় যে কেউ সিগারেট খেতে পারে ওখানে। সরকারী চাকরিতে যতদিন ছিল, ভাল। ছিল। অকাজ করার সময় পেত না তখন। রিটায়ার করার পরই ধরেছে। ভূতে। খালি আবিষ্কারের চিন্তা। উদ্ভট সব ভাবনা মাথায় ঘোরে। একবার বানাল তেরপলের ছাতওয়ালা একটা বাড়ি। ভাজ করে সরিয়ে রাখা যায় ওই ছাত। কিন্তু তার নিচে আর বাস করার সাধ্য হলো না কারও। টানা-হেঁচড়ায় এত ছিদ্র হয়ে গেল, বাইরে বৃষ্টি পড়ার আগেই ভেতরে পড়ে।
আবার একচোট হাসাহাসির পর মিসেস আমান বললেন, আরও কত কাণ্ড যে করেছে, যদি জানতে! সারাজীবনে জরিমানা যা দিয়েছে, সেগুলো। জমিয়ে রাখতে পারলে এখন বড়লোক থাকতাম আমরা। বাবা ভীষণ বদমেজাজী। কথায় কথায় লোকের সঙ্গে ঝগড়া বাধায়, হাতাহাতি করতেও ছাড়ে না। আমাদের বাড়ির সামনে একটা এলম গাছ আছে। কি নাকি রোগ হয়েছে ওটার, রেখে দিলে আশপাশের অন্য গাছেরও হতে পারে এই ভয়ে একদিন পার্ক ডিপার্টমেন্টের লোকেরা এসে সেটা কাটতে চাইল। বেকে বসল বাবা। কিছুতেই কাটতে দেবে না। কথা কাটাকাটি হতে হতে একসময় ঘর থেকে গিয়ে হকি স্টিক নিয়ে এল। এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করল। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে হাজতে ভরে দিল বাবাকে। উকিলের পেছনে অনেক টাকা খরচ করে শেষে বের করে আনা হলো। মোটা টাকা জরিমানা তো করলেনই জজ সাহেব, শাসিয়ে দিলেন, ফের এ রকম করলে জেল-জরিমানা কোনটাই আর মাপ হবে না।
চুপ করে দম নিলেন মিসেস আমান। তারপর বললেন, এখন ধরেছে নিউ ইয়র্ক যাবার বাতিক!
খাইছে! হাসি চলে গেল মুসার মুখ থেকে। রকি বীচ থেকে নাকি আর কোথাও নড়বে না?
একেবারে যাচ্ছে না তো। একটা বিশেষ কাজে যেতে চায়। তার মতে কাজটা খুবই জরুরী। কি একটা আবিষ্কার করেছে। জিনিসটা কি, এ ব্যাপারে কোন ধারণা দিতেও নারাজ। নিউ ইয়র্ক যাওয়া ছাড়া নাকি ওটার গতি করা যাবে না। অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি–না গিয়ে কিছু করা যায়। কিনা, শোনে না। বলে টেলিফোন কিংবা চিঠিতে কাজ হবে না, নিজেকেই যেতে হবে। সামনাসামনি প্রচুর আলোচনার দরকার।
গেলে যাক না। অসুবিধেটা কি?
অসুবিধে আছে। কার কাছে যাচ্ছে, কিছু জানি না। যাওয়ার পর সেই লোক যদি দেখা করতে রাজি না হয়? যদি কাউকে দিয়ে বলিয়ে দেয়-বাড়ি যান, চিঠিতে যোগাযোগ করুনগে? কাণ্ডটা কি করবে জানিস না? জোর করে ঢৈাকার চেষ্টা করবে!