চাদরের ওপর বসে পড়ে একটা বাস্কেটের দিকে হাত বাড়াল মুসা, খিদে পেয়ে গেছে আমার। কি দিয়েছে উলফ?
উম..দাঁড়াও, অনুমান করতে দাও আমাকে, কোরি বলল, কি হতে পারে? টিউনা মাছের স্যান্ডউইচ?.
ঢাকনা তুলল মুসা। ভেতরে তাকিয়ে বলল, হয়নি। আবার বলো।
গলদা চিংড়ি।
হ্যাঁ, হয়েছে। দারুণ সুগন্ধ! মুরগীর রোস্টও আছে।
আরেকটা ঝুড়ির ঢাকনা সরাল রবিন। বড় এক পাত্র সালাদ বের করল। আর বড় বড় দুটো ফ্রেঞ্চ ব্রেড। ম। আভন থেকে বের করেই ঝুড়িতে ভরে দিয়েছে উলফ।
মুখ গোমড়া করে রাখুক আর যাই করুক, নাক দিয়ে খাবারের সুগন্ধ টানতে টানতে বলল কোরি, খাবারগুলো ভালই দিচ্ছে।
চীনামাটির বাসন, রূপার চামচ, কাপড়ের ন্যাপকিন বের করে চাদরে নামিয়ে রাখল রবিন। সুন্দর করে ওগুলো ঝুড়িতে সাজিয়ে দিয়েছে উলফ। দুটো মোমও দিয়েছে।
আকাশের লালিমা মুছে কালো হয়ে যাচ্ছে। উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে। চাঁদ। তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ছলাৎছল বাজনার মত লাগছে। খেতে আরম্ভ করল ওরা।
সিনেমার মত লাগছে আমার কাছে! কোরি বলল।
এত সুন্দর দৃশ্য সিনেমাতে নেই, বলল রবিন।
হোটেলের দিকে তাকাল কোরি। আকাশের পটভূমিতে কালো দেখাচ্ছে। বাড়িটা। শুধু দোতলার দুটো জানালায় আলো জ্বলছে। তাকিয়ে রয়েছে যেন বেড়ালের চোখের মত।
খাওয়ার পর সাতরাতে নামলে কেমন হয়? প্রস্তাব দিল মুসা।
বেদিং সুট তো পরে আসিনি, রবিন বলল।
তাতে কি? হাসল মুসা। খালি গায়ে নামব।
চাঁদনী রাতে সাগরে সাঁতার কাটার স্বপ্ন দেখেছি আমি বহুদিন, কিশোর বলল।
তার মানে তুমিও নামবে?
অসুবিধে কি?
বালির ঢিবির ওপর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল কোরি, কে যেন আসছে!
ফিরে তাকাল অন্য তিনজন। অন্ধকার ছায়ায় মিশে ভূতের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা মূর্তি।
ভয় পেয়ে গেল কোরি। জিজ্ঞেস করল, কে ওখানে?
০৬.
ছায়া থেকে চাঁদের আলোয় বেরিয়ে এল মুর্তিটা।
অবাক হলো কোরি। মিস্টার মেলবয়েস!
ঢিবির মাথায় দাঁড়িয়ে থেকে ওদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন তিনি। ধবধবে সাদাঁ পোশাকে ভূতুড়ে লাগছে তাঁকে। ভয়টা এখনও কাটেনি কোরির। বিশ্বাস করতে পারছে না সত্যি মানুষ কিনা। পরীক্ষা করার জন্যে হাত নেড়ে ডাকল, আসুন না?
অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে নেমে আসতে শুরু করলেন ব্যারন। খাওয়া বন্ধ করে মুসাও তাকিয়ে রয়েছে হাঁ করে। ভূত বুঝলে দেবে দৌড়।
কাছে এসে দাঁড়ালেন তিনি। হাতে একটা মদের বোতল। আরেক হাতে গ্লাস।
আন্ট জোয়ালিন এসেছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইল কোরি।)
না, জবাব দিলেন ব্যারন। লঞ্চ এসেছে, কিন্তু তোমার আন্টি আসেননি। অত ভয়ের কিছু নেই। সামান্য পেটব্যথা তো, সেরে যাবে। আরও একআধ দিন বোনের ওখানে কাটিয়ে আসার ইচ্ছে।
কিন্তু ফোন করল না কেন?
সকালে ফোন যখন খারাপ ছিল তখন হয়তো চেষ্টা করেছে। ফোন খারাপ ভেবে পরে আর করেনি। আজ রাতটা যাক, তাকে আর বিরক্ত করব না। কাল সকালে যদি না করে আমরাই খোঁজ নেব। প্রসঙ্গটা বাদ দেয়ার জন্যে খাবারগুলোর ওপর চোখ বোলালেন তিনি। বাহ, উলফ তো নাস্তাটাস্তা ভালই দিচ্ছে তোমাদেরকে।
হেসে জবাব দিল কিশোর, নাস্তা নয়, একেবারে ভূরিভোজ।
উলফ কিন্তু আমাদের বাবুর্চি নয়। বাবুর্চির নাম মনিকা। আগামী শুক্রবারের আগে আসবে না। মৃদু হেসে বললেন ব্যারন, এত কাজ একহাতে করতে হচ্ছে বলে অভিযোগের পর অভিযোগ করে চলেছে উলফ। তবে রান্না করতে তার খারাপ লাগছে না এটাও বুঝতে পারছি।
সে তো বোঝাই যাচ্ছে, রুটি চিবাতে চিবাতে বলল মুসা। কিন্তু এত বেশি পেট ভরিয়ে রাখছে আমাদের, আলসে হয়ে যাচ্ছি। কাল কোন কাজই করতে পারব না।
হ্যাঁ, দশ পাউন্ড ওজন বেড়ে গেছে আমার, কোরি বলল।
ভয় নেই, কালই সেটা খসিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করব, হেসে বললেন ব্যারন। চাদরের একধারে বসে বোতল থেকে মদ ঢাললেন গ্লাসে। গ্লাসটা তুলে ধরলেন ওদের দিকে। তোমাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
লম্বা চুমুক দিলেন গ্লাসে। গম্ভীর হয়ে বললেন, মিলারও আমাদের সঙ্গে থাকলে এখন ভাল হতো, আচমকা বদলে গেছে কণ্ঠস্বর। কত করে বললাম আসতে। এল না।
আপনার ভাই কি অসুস্থ? জানতে চাইল কিশোর।
প্রশ্নটা যেন অবাক করল ব্যারনকে। অসুস্থ? মোটেও না। অতিমাত্রায় বিষণ্ণ। আমরা মেলবয়েসরা এমনিতেই একটু খেয়ালী।
শুনেছি আমি, রবিন বলল। ব্ল্যাক ফরেস্টের সবাই জানে আপনার পূর্বপুরুষদের কাহিনী। আমাদের বাড়ির চিলেকোঠা থেকে মেলবয়েস ম্যানসন দেখা যায়।
চোখ বুজে যেন পূর্বপুরুষদের কীর্তিকলাপের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করলেন। মেলবয়েস। হ্যাঁ, অনেক গল্প আছে ওদেরকে নিয়ে। ভয়ঙ্কর সব কাহিনী। চোখ মেলে তাকালেন রবিনের দিকে।
একঝলক হালকা বাতাস ওদের ঘিরে নেচে নেচে বয়ে গেল।
রোজার মেলবয়েস কি আপনার দাদা ছিলেন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
আরেক চুমুক মদ খেলেন ব্যারন। না। আমার দাদার ভাই। আমার গ্রেট-আঙ্কেল।
তার নামে নাম রাখা হলো কেন আপনার? জানতে চাইল কোরি।
তার নামে রাখা হয়েছে কথাটা ঠিক না, বিচিত্র হাসি খেলে গেল ব্যারনের ঠোঁটে। চাঁদের আলোয় রহস্যময় দেখাল হাসিটা। আমার বাবার নামও ছিল রোজার।
পাইনবনে ডেকে উঠল কি একটা জানোয়ার। দীর্ঘ, বিষণ্ণ চিৎকার।
তাদের সম্পর্কে বলুন না কিছু, অনুরোধ জানাল কোরি। শোনার জন্যে সামনে ঝুঁকে বসল।