কেউ এল না।
বেরোনো দরকার, ফিসফিস করে বলল রবিন। মিলার কখন ঢুকে পড়েন…
হ্যাঁ, ওর সঙ্গে একমত হলো মুসা। অ্যালবামের ছবি দেখে কোন। লাভ হবে না আমাদের। বরং তাড়াতাড়ি গিয়ে পুলিশকে খবর দেয়া দরকার। ওরা এসে খোঁজাখুঁজি যা করার করুক।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। এখানে কোথাও একটা ট্র্যাপোর আছে নিশ্চয়। রোজারকে গুলি করার পর লাশটা ওই পথে সরিয়ে ফেলেছেন হয়তো মিলার। মহিলাও ওখান দিয়েই পালিয়েছে।
কিন্তু রক্ত কই? প্রশ্ন তুলল রবিন। এক ফোঁটা রক্তের দাগও তো নেই কোথাও।
এটাই গোলমাল করে দিচ্ছে সব। কিছু বুঝতে পারছি না!
কিশোর, আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক না। এসব কথা বাইরে গিয়েও আলোচনা করতে পারব আমরা। মিলার ঢুকে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
দাঁড়াও, আরেকটু দেখে নিই।
খুঁজতে শুরু করল কিশোর। দেয়ালে থাবা দিয়ে দেখল ফাপা আছে। কিনা। টেবিল ল্যাম্প উল্টে দেখল। ড্রেসার-ড্রয়ারের নব ঘুরিয়ে দেখল।
কি করছ তুমি? জানতে চাইল রবিন।
দেখছি গুপ্তদরজা খোলার কোন গোপন সুইচ আছে কিনা, দেয়ালে একটা লাইট সুইচ দেখে সেটা টিপে দিল কিশোর। আরি দেখো দেখো!
বুকসেলফটা রিভলভিং ডোরের মত ঘুরতে আরম্ভ করেছে। অর্ধেক ঘুরে থেমে গেল। বইয়ের তাক চলে গেল অন্যপাশে, এপাশে চলে এল একটা ডেস্ক।
আবার সুইচ টিপল কিশোর। ডেস্কটা ঘুরে আবার বুক শেলফটা ঘুরে এপাশে আসতে শুরু করতেই সুইচ টিপে অফ করে দিল সে। মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল ঘোরা। ফাঁক দিয়ে দেখা গেল অন্যপাশে আরেকটা ঘর।
ফাঁকটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। ফিরে তাকিয়ে বন্ধুদের বলল, এটা স্টাডিরূম। দেখে যাও।
লাশটা আছে? উঁকি দিল রবিন। কিন্তু অন্ধকারের জন্যে কিছু দেখতে পেল না। টেবিলে পেপারওয়েট চাপা দেয়া একটা কাগজের দিকে চোখ পড়তে স্থির হয়ে গেল দৃষ্টি। হাত বাড়িয়ে তুলে নিল কাগজটা। একবার পড়েই হাত কাঁপতে শুরু করল। কিশোর।
কি?
জলদি এসো! কি লিখেছে দেখো!
এপাশে বেরিয়ে এল কিশোর। রবিনের গা ঘেঁষে এল মুসা।
জোরে জোরে পড়তে শুরু করল রবিন,
ডিয়ার জোয়ালিন,
মর্মান্তিক এই খবরটা তোমাকে জানাতে কি যে কষ্ট লাগছে আমার বলে। বোঝাতে পারব না। তোমার বোনঝি কোরি আর ওর তিন বন্ধু কিশোর, মুসা এবং রবিন হঠাৎ করে দ্বীপ থেকে রহস্যজনকভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ওদের কি হয়েছে, কোথায় গেছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
কি যে মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে আমার বলে বোঝাতে পারব না। পাইরেট আইল্যান্ডের পুলিশকে খবর দিয়েছি। ওরা এসে দ্বীপের প্রতিটি ইঞ্চি খুঁজে দেখেছে। কিছুই পায়নি। কোন সুত্র নেই। দিনেরাতে বহুবার ফোনে তোমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। না পেরে শেষে এই চিঠি লিখে জানাতে বাধ্য হলাম।
ঘটনাটা অদ্ভুত। মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছি না। পুলিশ কোন আশা দিতে পারছে না। রহস্যময় এই ঘটনায় ওরাও পুরোপুরি বিমূঢ় হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েগুলোর বাবা-মাকে যে কি জবাব দেব ভেবে ভয়ে পালাতে ইচ্ছে করছে আমার। তোমার মুখোমুখি হওয়ার সাহসও আমার নেই।
যাই হোক, ওদেরকে খুঁজে বের করার সাধ্যমত চেষ্টা আমি করছি। ওদের এই উধাও হওয়ার রহস্য ভেদ না করা পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না। সারাক্ষণ দোয়া করছি, ছেলেমেয়েগুলো সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসুক। কিন্তু বুঝতে পারছি, সেটা ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অতীতেও এধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এই দ্বীপে। হারানো মানুষকে আর জ্যান্ত ফিরে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে তাদের গলিত লাশ, কিংবা শুকনো কঙ্কাল। কি আর বলব, বলো? দ্বীপের এই বদনামের কথা তুমি তো সবই জানো।
মুখ তুলল রবিন। কাঁপা গলায় বলল, নিচে সই করেছেন মিলার মেলবয়েস! তারিখটা আজ থেকে দুদিন পরের!
.
১৪.
আমাদের খুন করার প্ল্যান করেছে সে! চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসার।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল রবিন, দাঁড়িয়ে আছ কেন এখনও? চলো না পালাই!
পাগল! বদ্ধ উন্মাদ! রবিনের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নীরবে আরেকবার পড়ল কিশোর। বিশ্বাস হতে চাইছে না তার। রসিকতা করেনি তো?
কার সঙ্গে করবে? কেন?
আমাদের খুন করতে চায় কেন?
কি করে বলব? পাগলের তো কত রকম ইচ্ছেই থাকে। অকারণেও অনেক কিছু করে। লোকটা একটা স্যাডিস্ট।
হু! নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল কিশোর, উলফও কি এতে জড়িত আছে নাকি? নইলে রোজারকে খুন করা হয়েছে শুনেও পুলিশে খবর দেয়নি কেন?
দেয়নি, কি করে বুঝলে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
তাহলে এতক্ষণে পুলিশ চলে আসার কথা। পাইরেট আইল্যান্ড থেকে আসতে ওদের দশ-বারো মিনিটের বেশি লাগবে না।
আমরাও তো খবরটা দিতে পারি।
কি ভাবে? রবিনের প্রশ্ন। ফোন করতে গেলেই দেখে ফেলবে উলফ। ওদিকেই রয়েছে সে আর মিলার।
তাহলে নৌকা নিয়ে নিজেরাই চলে যেতে পারি পাইরেট আইল্যান্ডে। ঘাটে তো নৌকা বাধাই আছে।
আমাদের ব্যাগট্যাগ সব, সঙ্গে নিয়ে চলে যাব। একবার বেরোতে পারলে এখানে ফিরে আসার আর কোন মানে হয় না।
কিন্তু কোরির কি হবে? চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। ওকে এখানে ফেলে যেতে পারি না। মিলার ওকে দেখলেই খুন করবেন।
কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে ওকে? রবিন বলল, তাড়াতাড়ি গিয়ে পুলিশ নিয়ে এলে ওরাই ওকে খুঁজে বের করবে। উলফ আর মিলার এসে আমাদের আটকে ফেলার আগেই পালানো দরকার। চলো চলো, আর দেরি করা যায় না।