কিন্তু দেরি হয়ে গেছে তো অনেক… বিড়বিড় করলেন মিলার।
না, হয়নি। এখনও সময় আছে। আসুন।
দ্বিধা করলেন মিলার। রাইফেলটা লাঠির মত করে ধরে ভর দিলেন তাতে। আবার আমার সঙ্গে চালাকি করছ না তো?
না না, করছি না।
জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিলার। মাথা কাত করলেন, ঠিক আছে। চলো।
তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরল উলফ, এই, তোমরা ঘরে যাও। শুতে যাও। আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না।
মিলারকে নিয়ে সিঁড়ির দিকে রওনা হয়ে গেল সে।
*
রোজারের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল কিশোর।
কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল রবিন।
জবাব না দিয়ে রোজারের ঘরের দরজা খুলে ফেলল কিশোর। ঢুকে পড়ল ভেতরে। বারুদের গন্ধ এসে ধাক্কা মারল নাকে। বড় একটা সিটিং রম। ঝকঝকে ক্রোমের আসবাবপত্র, সাদা চামড়ায় মোড়া গদি। কাচের কফি টেবিলে রাখা রূপার একটা কেটলি আর কয়েকটা চীনামাটির কাপ পিরিচ। কাউচের পেছনে সাদা একটা কাঠের টেবিল।
পেছনের দেয়ালে দুটো দরজা। অন্য ঘরে যাওয়ার জন্যে নিশ্চয়। রবিন। বলল, রোজার কোথায়?
ঘরে রোজারও নেই, মহিলাও নেই। মেঝেতে রক্তও নেই।
ভেতরের ঘরে আছে হয়তো, মুসা বলল।
কিন্তু চিৎকার তো এঘরেই শুনলাম।
গুলি খাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেছেন…
মেঝেতে সাদা কার্পেট পাতা। একফোঁটা রক্তের দাগ নেই।
এগিয়ে গিয়ে বায়ের দরজাটা খুলে ফেলল কিশোর। ভেতরে উঁকি দিল। ছোট একটা বেডরূম। টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। এলোমেলো হয়ে আছে চাদর, বালিশ সব। খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিন স্তূপ করে রাখা হয়েছে একপাশের দেয়াল ঘেষে। আরেকপাশে একটা বুকসেলফ। তাকের বই সব এলোমেলো। কুচকানো, ময়লা কয়েকটা শার্ট-প্যান্ট অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে মেঝেতে।
এটা নিশ্চয় মিলারের ঘর, অনুমান করল সে।
কই, রোজার তো এখানে নেই! কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে বলল বিস্মিত মুসা।
ঘুরে দাঁড়াল কিশোর। তাড়াতাড়ি গিয়ে ডানের দরজাটা খুলল। এটাও বেডরূম। আগেরটার চেয়ে বড়। এটা অন্যটার একেবারে বিপরীত। জিনিসপত্র সব নিখুঁতভাবে গোছানো। ঝকঝকে পরিষ্কার।
এখানেও নেই কেউ! এতক্ষণে কথা বলল কিশোর। মিস্টার রোজার নেই। মহিলাও নেই।
অসম্ভব! গেল কোথায়? বিড়বিড় করল মুসা। ভয় ফুটুল চোখে। এই, ভূতের কারবার না তো! একটা লাশ এভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারে না। সেই সঙ্গে একজন জ্যান্ত মানুষ…
একজন নয়, মনে করিয়ে দিল রবিন, দুজন। কোরিকেও খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।
.
১৩.
টোয়াইলাইট জোনে প্রবেশ করলাম নাকি আমরা? ধপ করে বিছানায় মুসার পাশে বসে পড়ল রবিন।
কথা বোলো না, আমাকে ভাবতে দাও, ওদের সামনে পায়চারি করতে করতে বলল কিশোর। মাথা গরম হয়ে গেছে আমাদের। ঠিকমত চিন্তা করতে পারছি না। সেজন্যেই উল্টোপাল্টা মনে হচ্ছে সব।
কিশোর, প্লীজ, এভাবে পায়চারি কোরো না। মাথাটা আরও গরম হয়ে যাচ্ছে আমার।
বোঝার চেষ্টা করছি আমি, আনমনে বলল কিশোর। রবিনের কথা যেন শুনতেই পায়নি। পায়চারি থামাল না। বাইরে দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যে তিনজন মানুষকে কথা বলতে শুনেছি আমরা। তর্কাতর্কি করছিল। তারপর গুলির শব্দ। এবং তারপর ঘর থেকে ছুটে বেরোলেন মিলার।
লাশটাকে টেনেহিঁচড়ে কোথাও সরিয়ে ফেলেছেন মিলার, অস্বস্তিতে বিছানায় নড়েচড়ে বসল রবিন। আশেপাশেই কোথাও আছে।
থমকে দাঁড়াল কিশোর। দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে আরও ভালমত খোঁজা উচিত আমাদের। বিছানার নিচে। আলমারির ভেতর।
কিন্তু যদি মিলার চলে আসেন? দরজার দিকে তাকিয়ে বলল রবিন। রাইফেলটা এখনও তার কাছে। আমাদের ঘরে দেখলে রেগে গিয়ে গুলি করে বসতে পারেন। একটা খুন ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন…
জলদি সারতে হবে আমাদের। তিনজন তিন ঘরে খুজব, তাতে তাড়াতাড়ি হবে। তোমরা অন্য ঘরে যাও, আমি এখানে খুঁজি। এটা নিশ্চয় মিলারের ঘর।
কিন্তু কিশোর
যাও, দেরি কোরো না! বিছানার নিচে উঁকি দেয়ার জন্যে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল কিশোর
বেশ, অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে দাঁড়াল রবিন। মুসা, এসো।
ওরা দুজন বেরিয়ে আসার দুই মিনিটের মাথায় দরজায় এসে দাঁড়াল কিশোর। উত্তেজিত স্বরে বলল, দেখে যাও! কি পেয়েছি।
চমকে গেল মুসা। লাশটা নাকি?
জবাব না দিয়ে দ্রুত আবার মিলারের ঘরে ফিরে এল কিশোর। পেছন পেছন এসে ঢুকল অন্য দুজন।
এই দেখো, বড় একটা ফটো অ্যালবাম তুলে দেখাল কিশোর।
দেখার জন্যে কাছে এসে দাঁড়াল মুসা আর রবিন।
দেখতে দেখতে রবিন বলল, পুরানো ছবি। যে রকম কালো হয়ে গেছে, মনে হয় একশো বছরের পুরানো।
না, এত পুরানো নয়, একটা ছবিতে আঙুল রাখল কিশোর, দেখো তো এটা চিনতে পারো কিনা?
নাইট শ্যাডোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা বড় সেডান গাড়ি। ফিফটির। মডেল। সুন্দর রোদ ঝলমলে দিন। অলঙ্করণ করা দামী গাড়িটায় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন মানুষ–একজন পুরুষ, আরেকজন মহিলা।
এ তো রোজার মেলবয়েস, রবিন বলল। চুল এত কালো, চেনাই যায় না।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। সঙ্গের মহিলাটিকে চিনতে পারো নাকি দেখো তো?
খাইছে! চিনে ফেলল মুসা। এ তো কোরির আন্টি! আন্ট জোয়ালিন।
হ্যাঁ। অবাক লাগছে না? তারমানে জোয়ান বয়েসে খাতির ছি দুজনের…
হলওয়েতে শব্দ হলো। হাত কেঁপে গেল কিশোরের। অ্যালবামটা মেঝেতে পড়ে গেল। তোলার চেষ্টা করল না। দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।