বনের ভেতর দিয়ে যেতে হবে? ঘাবড়ে গেল মুসা। ভূতের ভয় তার ষোলো আনা। আসার ইচ্ছেও ছিল, আবার না-ও। ভুতকে ভয় পায়, এদিকে দেখার কৌতূহলও সামলাতে পারেনি।
হ্যাঁ, সারেং বলল। এই রাস্তা ধরে চলে যাবে। লঞ্চের দড়ি খুলতে আরম্ভ করল সে। একটা গেটহাউস দেখতে পাবে। হোটেলটার চারপাশ, ঘিরে বেড়া দেয়া। যাও, পেয়ে যাবে গেট।
দড়ির খোলা মাথাটা ডেকে ফেলে দিয়ে এঞ্জিন স্টার্ট দিল সে। দ্রুত সরিয়ে নিতে শুরু করল ডকের কাছ থেকে। ওর এই তাড়াহুড়াটা ভাল লাগল না মুসার। বনের দিকে তাকাল। যাব কি করে? শাটলবাস আছে?
তার কথার জবাব দিল না সারেং। অনেক সরে গেছে। বিকট শব্দ করছে। এঞ্জিন। ওদের দিকে একবার হাত নেড়ে লঞ্চের নাক ঘুরিয়ে দিল সে। একটিবারের জন্যেও আর ফিরে তাকাল না।
.
০২.
লোকজন তো কাউকেই দেখছি না, নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়েও আবার নামিয়ে রাখল কিশোর।
আমাদের কথা ভুলেই গেল কিনা কে জানে, কোরি বলল।
দাঁড়িয়ে না থেকে চলো হাঁটি।
একটা জিনিস অবাক লাগেনি তোমাদের? রবিন বলল, লঞ্চে আমরা ছাড়া আর কোন যাত্রী ছিল না। একজন টুরিস্টও এল না কেন?
সমুদ্রের অবস্থা খারাপ দেখে সাহস পায়নি হয়তো, অনুমান করল। মুসা।
মনে হচ্ছিল সাগরটা যেন ইচ্ছে করে ঠেলে আসতে চেয়েছে আমাদের। দিকে, কালো ছায়া পড়ল কোরির মুখে! এখানে আসতে বাধা দিচ্ছিল আমাদের।
খাইছে! গলা কেপে উঠল মুসার। ওরকম করে বোলো না। আমার ভয় লাগছে।
আরে কি সব ফালতু কথা শুরু করলে, বনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিশোর। কেউ আসে কিনা দেখছে।
ফালতু দেখলে কোথায়? তর্ক শুরু করল কোরি। সুস্থ মানুষ, হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেলেন আন্ট জোয়ালিন। সাগরের ঢেউ ঠেলে এসেছে। আমাদের দিকে। এসবই খারাপ লক্ষণ : নিজের অজান্তেই হাত উঠে গেল। গলার লকেটটার কাছে। আঙুলগুলো চেপে ধরল কাচের তৈরি মানুষের খুলির। মত দেখতে রঙিন লকেটটা। রকি বীচের এক অ্যানটিক শপ থেকে জোগাড় করেছে সে। দোকানদার বলেছে, বহু পুরানো জিনিস। প্রাচীন একটা কবরে পাওয়া গেছে। এটা যার গলায় পরা থাকবে. ড্রাকুলার মত সাংঘাতিক ভূতও। তার কিছু করতে পারবে না।
উফফ, বিরক্ত হয়ে বলল কিশোর, এক মুসার যন্ত্রণাতেই বাঁচি না, আরও একজন যুক্ত হলো। অই কোরি, তোমার ওই ভুত, অশুভ লক্ষণ, এসব নিয়ে লেকচার থামাবে?
ভূত দেখতেই কিন্তু এখানে এসেছ তোমরা।
ও একটা কথার কথা। আমি এসেছি আসলে বেড়াতে। ভুত যদি থাকেই, মুসাকে নিয়ে দেখিয়ে দিয়ে। পরে এখন চলো যাওয়া যাক
কেন, শাটলবাসের জন্যে অপেক্ষা করবে না মুসার দিকে আড়চোখে তাকাল রবিন।
শাটলবাস না, কচু আসবে এখানে মুখ ঝামটা দিয়ে বলল কোরি। তার চেয়ে বরং হাত নাড়ো, ট্যাক্সি চলে আসুক।
ঠাট্টা করছ নাকি? মনে হচ্ছে যেন মোড়ের কাছে বসে তোমার অপেক্ষা করছে গাড়িওয়ালা, কিশোর বলল এখানকার সুবিধা-অসুবিধা আন্ট জোয়ালিন তো সবই বলে দিয়েছেন। এখন বিরক্ত হও কেন?
কিন্তু ডকের কিনার থেকেই যে খাড়া পাহাড়ে চড়তে হবে একথা বলেনি. বিশাল দুটো সুটকেসে জিনিসপত্র ভরে নিয়ে এসেছে কোরি। এরকম বোঝা বইতে হবে জানলে আনত না বিরক্তমুখে নিচু হয়ে দুহাতে তুলে নিল দুটো সুটকেস।
নিজের ক্যানভাসের ব্যাগটা কাঁধের ওপর ফেলল মুসা। হাত বাড়াল কোরির দিকে, একটা দাও আমাকে। তুমি দুটো নিতে পারবে না।
কিন্তু দিল না কোরি। বলল, না, পারব।
চাপাচাপি করল না মুসা ঠিক আছে, না পারলে দিয়ে দিয়ে।
রাস্তা ধরে উঠতে শুরু করল, ওরা ঢুকে পড়ল পাইনবনে। কিছুদূর এগোতে পাথরের একটা গেটহাউজ দেখা গেল দুপাশ থেকে উঁচু লোহার শিকের বেড়া চলে গেছে দুদিকে। সারেং বলেছে হোটেলের পুরো সীমানাই ঘিরে রেখেছে ওটা। গেটহাউজে কোন লোক পড়ল না। বেড়ার গায়ে সাইনবোর্ডে বড় বড় ইংরেজিতে অক্ষরে লেখা–
হোটেল নাইট শ্যাডো
প্রাইভেট প্রপার্টি
গেটে তালা থাকলেই হয় এখন, রবিন বলল, ঢুকতে আর হবে না।
কি যে বলো না, অস্বস্তি চাপা দিতে পারল না কোরি, তালা থাকবে কেন?
আছে কিনা দেখলেই তো হয়, লম্বা পা ফেলে আগে আগে গিয়ে গেটের সামনে দাঁড়াল মুসা। ঠেলা দিল পাল্লায়।
নড়ল না ওটা।
একপাশের পুরানো আমলের হাতল দেখিয়ে বলল রবিন, ওটা ঘোরাও। খুলে যাবে।
ঘুরিয়ে আবার ঠেলা দিল মুসা। খুলল না গেট।
তালা দেয়া! নাটকীয় ভঙ্গিতে হাত থেকে সুটকেস দুটো ছেড়ে দিল। কোরি। আমি জানতাম, এমন কোন কিছুই ঘটবে।
আরে এত অধৈর্য হচ্ছ কেন? গেটহাউজের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে বলল কিশোর, ফোন আছে। হোটেলে ফোন করে তালা খুলে দিতে বলব।
আকাশের দিকে তাকাল কোরি। এত তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে কেন?
অন্ধকার হচ্ছে না। গাছপালার ছায়ার জন্যে অন্ধকার লাগছে। আলো ঢুকতে পারছে না ঠিকমত, দেখছ না?
সরু কাচের দরজা ঠেলে খুলে গেটহাউজে ঢুকল কিশোর। ফোন তুলে নিল। কুঁচকে ফেলল ভুরু।
দরজায় মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছে মুসা। কি হয়েছে?
ডায়াল টোন নেই।
ইন্টারকম ফোন হতে পারে। হোটেলের রিসিভারে সরাসরি লাইন দেয়া।
তাতে কি? ডায়াল টোন তো থাকবে। রিসিভার রেখে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল কিশোর।
তারমানে বাইরেই আটকা পড়লাম, মুসার গলায় অস্বস্তি।
পড়লে পড়ব, দুষ্টু হাসি খেলে গেল কিশোরের মুখে। আজকের রাতটা নাহয় সৈকতেই কাটাব। বেড়াতেই তো এলাম।