উলফের কাছে।
দ্রুতপায়ে হোটেলে ফিরে চলল ওরা।
*
ঘুমিয়ে পড়েননি তো? হোটেলে ঢুকে বলল রবিন।
হাতঘড়ি দেখল কিশোর। মাথা নাড়ল। মনে হয় না। মোটে তো সাড়ে আটটা।
ব্যারনের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ওরা। টোকা দিতে যাবে কিশোর, এই সময় ভেতর থেকে ভেসে এল তীক্ষ্ণ চিত্তার।
পরক্ষণেই আরেকটা চিৎকার শোনা গেল। অন্য কণ্ঠ।
তারপরেই শুরু হলো তর্কাতর্কি। রেগে রেগে কথা বলছে দুজন মানুষ। মিলারকে ধমক মারছেন রোজার। থেকে থেকে ঘোৎ-ঘোৎ করে উঠছেন। মিলার। চাপা গলায় জবাব দিচ্ছেন দুএকটা
দুজনকে থামানোর চেষ্টা করল একজন মহিলা।
কিশোরের হাত খামচে ধরল মুসা। ফিসফিস করে বলল, শুনলে?
পাগল! আস্ত পাগল! মহিলা বলল।
কে পাগল? খেঁকিয়ে উঠলেন মিলার।
তোমরা দুজনেই। বদ্ধ উন্মাদ! দুজনকেই তালা দিয়ে রাখা দরকার।
দেখো কথাবার্তা একটু সাবধানে…
অ্যাই, থামো! ধমক দিয়ে ভাইকে থামিয়ে দিলেন রোজার।
দেখো, ওর পক্ষ নেবে না বলে দিলাম। ও তোমার সাহায্য চায় না। তুমি একটা গাধা। একটা রামছাগল।
মুখ খারাপ করছ কেন? মহিলা বলল।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন রোজার, আরে কি করছ! আরে!
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। ভেতরে মারামারি বাধতে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
যত কথাই বলো তোমরা, দুই ভাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তেজে চেঁচিয়ে উঠল মহিলা, আমি তোমাদের পার্টিতে থাকছি না।
না থেকে যাবে কোথায়? রাগে খসখসে হয়ে গেছে মিলারের কণ্ঠস্বর। যাওয়ার উপায় নেই তোমার।
রোজার বললেন মহিলাকে, কি করব বলো? কত বোঝানো বোঝালাম ওকে–পায়ে ধরা বাকি রেখেছি শুধু। শুনল না। মিলার, শোনো…
না, কোন কথা শুনব না আমি! ষাড়ের মত চিৎকার করে উঠলেন মিলার। তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি….
প্লীজ, মিলার, ভীতকণ্ঠে বলল মহিলা, নামাও ওটা! নামাও।
আরে করছ কি? রোজারও আঁতকে গেছেন কোন কারণে।
না না, মিলার! প্লীজ! রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এখন মহিলা।
দোহাই তোমার, মিলার, ভয় পেয়ে গেছেন রোজারও, মাপ চাই আমি। তোমার কাছে! তুমি না আমার ভাই…
গুলির প্রচণ্ড শব্দ হলো ঘরের মধ্যে।
তারপর সব চুপ।
.
১২.
দরজার দিকে পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে শুনে হলওয়ে দিয়ে দৌড় মারল কিশোর। দেখাদেখি রবিন আর মুসাও ছুটল। তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়ল একটা অন্ধকার কোণে।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল রোজারের ঘরের দরজা। রাইফেল হাতে বেরিয়ে এলেন মিলার। পরনে সেই সাফারি জ্যাকেট। উদভ্রান্তের মত ছুটে গেলেন একদিকে। একটামাত্র চোখ দিয়ে মনে হয় ঠিকমত দেখতে পাননি, ধাক্কা খেলেন গিয়ে উল্টোদিকের দেয়ালে। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে ফেললেন তিন গোয়েন্দাকে। বিশ্বাস করতে পারলেন না যেন নিজের চোখকে। ওদের এখানে আশা করেননি।
অ্যাক্সিডেন্ট! অস্বাভাবিক উঁচু গলায় ওদের বললেন তিনি। আমার ভাই রোজারের একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।
রাইফেলটা ঘোরালেন চারপাশে। ভঙ্গি দেখে মনে হলো যেন যে কোন দিক থেকে শত্রু ছুটে আসার ভয় পাচ্ছেন। সেই অদৃশ্য শত্রুকে ঠেকানোর জন্যে তৈরি হয়েছেন।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ওপরে উঠে এল উলফ। জিজ্ঞেস করল, মিস্টার মিলার? কি হয়েছে?
টলতে শুরু করলেন মিলার। একপাশের দেয়ালে গিয়ে পড়লেন। সামলে নিলেন কোনমতে। অ্যাক্সিডেন্ট! একটা সাংঘাতিক অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে রোজারের!
ভুরু কুঁচকে গেল উলফের। নিচের চোয়াল ঝুলে পড়ল। অ্যাক্সিডেন্ট?
ডাক্তার ডাকুন, জলদি! চিৎকার করে বলল কিশোর। মিস্টার রোজারকে গুলি করেছেন উনি! এগিয়ে এসে রোজারের ঘরের দরজা খোলার জন্যে হাত বাড়াল সে।
খবরদার! গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন মিলার। যাও এখান থেকে। সরো!
এরকম হঠাৎ রেগে যাবেন মিলার, ভাবতে পারেনি কিশোর। ঢোক গিলে বলল, কিন্তু একটা মানুষ গুলি খেয়ে পড়ে আছে ভেতরে একজন মহিলাও আছেন…
তাতে তোমার কি? ভাগো এখান থেকে! দরজা জুড়ে দাঁড়ালেন মিলার। একচোখে কালো পট্টি। আরেক চোখে আগুন।
ডাক্তার ডাকতে বাধা দিচ্ছেন কেন? সামলে নিয়েছে কিশোর। মিলারের ধমকের পরোয়া না করে বলল, ভাইকে তো গুলি করলেন…
ডাক্তার ডেকে আর কোন লাভ নেই এখন।
মানে? লাল হয়ে গেছে উলফের মুখ।
দেরি হয়ে গেছে অনেক। রোজার মরে গেছে।
হাঁ করে মিলারের দিকে তাকিয়ে রইল উলফ। এগিয়ে গেল এক পা।
রাইফেল বাগিয়ে ধরলেন মিলার। প্রয়োজনে উলফকে গুলি করতেও দ্বিধা করবেন না।
উলফ বলল, অ্যাক্সিডেন্ট নয়, আপনি ভাল করেই জানেন…
না, জানি না, রাগত স্বরে বললেন মিলার, এটা অ্যাক্সিডেন্টই…
না, অ্যাক্সিডেন্ট নয়! মিস্টার রোজারকে গুলি করে মেরেছেন আপনি।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চোখে চোখে তাকিয়ে রইল দুজনে। তারপর ঝটকা দিয়ে রাইফেল তুলে কাঁধে ঠেকালেন মিলার। উলফকে নিশানা করলেন।
আরে একি করছেন! পাগল হয়ে গেলেন নাকি? চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
*
সরান ওটা! শান্তকণ্ঠে বলল উলফ।
লোকটার স্নায়ুর জোর দেখে অবাক হলো কিশোর। মাত্র তিন ফুট দূরে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে আছে রাইফেলের নল। কিন্তু ভয় পাচ্ছে না।
মিস্টার মিলার, আবার বলল উলফ, সরান ওটা। আপনি জানেন, আমাকে গুলি করতে পারবেন না।
জবাব দিলেন না মিলার। আস্তে আস্তে নামালেন রাইফেলটা।
উলফ বলল, আসুন আমার সঙ্গে। ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি? আগেও যেমন বহুবার করেছি। আমাদের মেহমানদের অহেতুক ভয় দেখাচ্ছেন আপনি। ওদের ঘুমোতে দিচ্ছেন না।