কি জানি, রোজার কিংবা মিলারের সঙ্গে গিয়ে হয়তো আড্ডা দিচ্ছে, বলল রবিন। ওদের কাউকেও তো দেখলাম না।
তা ঠিক। নৌকা নিয়ে ব্যারনের সঙ্গে শোরটাউনেও চলে যেতে পারে, আন্টির সঙ্গে দেখা করার জন্যে।
ও তা কেন যাবে? প্রশ্ন তুলল কিশোর। আন্টি যে ভাল আছেন, শুনলই।
কেন, তোমার কিছু সন্দেহ হচ্ছে নাকি?
বুঝতে পারছি না, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। তবে ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগছে না আমার কাছে।
নাস্তার পর উলফেরও আর দেখা মেলেনি। ওদের লাঞ্চের জন্যে রেফ্রিজারেটরে ঠাণ্ডা স্যান্ডউইচ আর ড্রিংকস রেখে গেছে। ডাইনিং রূমের ধূসর আলোয় দ্রুত খাওয়া শেষ করল ওরা। বাইরে মেঘের ঘনঘটা। কালো আকাশ। সকাল থেকে সেই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, থামছে না আর। কমছে, বাড়ছে, কমছে, বাড়ছে–চলছে এভাবেই।
খাওয়ার পর আবার কাজে লাগল ওরা। দেয়াল থেকে আরও অনেক কাগজ ছিঁড়ল। কিন্তু আর কোন গুপ্তদরজা বেরোল না। আগের দিনের দরজাটা তৈমনি লাগানো রয়েছে। ভোলার কথা একটিবারের জন্যে মনেও করল না কেউ। অন্ধকার সুড়ঙ্গে উঁকি দেয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আর।
সাড়ে চারটা নাগাদ যন্ত্রপাতি গুছিয়ে রেখে গোসল করতে চলল। নিজের ঘরে ঢোকার আগে কোরির দরজায় থামল কিশোর। টোকা দিল।
সাড়া নেই।
থাবা দিয়ে জোরে জোরে কোরির নাম ধরে ডাকল।
জবাব মিলল না।
নব ঘুরিয়ে ঠেলা দিতেই খুলে গেল পাল্লা। ভেতরে আলো জ্বলছে। অগোছাল বিছানা। কিছু পোশাক এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে চেয়ারের হাতলে, কিছু বিছানায়। কিন্তু কোরি নেই।
কোরি? চিৎকার করে ডাকল কিশোর। বাথরূমে আছ নাকি?
কোন জবাব পাওয়া গেল না।
*
ডাইনিং রুমে বসে ডিনার খাচ্ছে ওরা, এই সময় সামনের দরজা দিয়ে রোজারকে ঢুকতে দেখল। ওদের দিকে তাকালেন না তিনি। দ্রুত হেঁটে চলে। যাচ্ছেন।
মিস্টার মেলবয়েস? ডাক দিল কিশোর। কোরিকে দেখেছেন কিনা জিজ্ঞেস করবে।
কিন্তু শুনতেই যেন পাননি ব্যারন। সোজা চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে।
কোরির জন্যে কিন্তু রীতিমত দুশ্চিন্তা হচ্ছে এখন আমার, কিশোর বলল। দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে।
দুশ্চিন্তাটা বাড়িয়ে দিতেই যেন রান্নাঘর থেকে খাবারের ট্রে হাতে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল উলফ, মেয়েটা কোথায়?
ওকে দেখেননি?
মাথা নাড়ল উলফ।
আমরা তো ভাবলাম মিস্টার রোজারের সঙ্গে নৌকায় করে শোরটাউনে। চলে গেছে।
না, সাহেবের সঙ্গে যেতে দেখিনি ওকে। সাহেব তো গেলেন ওয়ার্কারদের সঙ্গে কথা বলে জেনে আসতে কবে নাগাদ হোটেলের কাজ করতে আসছে ওরা।
ভয় পেয়ে গেল কিশোর। রান্নাঘরে যাচ্ছে উলফ। তার দিকে তাকিয়ে রইল। আচমকা ফিরে তাকাল মুসা আর রবিনের দিকে। আর বসে থাকা যায় না। কোরিকে খুঁজতে যাব আমি। তোমরা আমার সঙ্গে যাবে, না ভাগাভাগি হয়ে খুঁজবে?
একসঙ্গে থাকাই ভাল, মুসা বলল। ওর ঘর থেকে শুরু করা যাক। নাকি?
মাথা নাড়তে নাড়তে আনমনে নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল রবিন, কোথায় আছে ও?
সত্যি সত্যি ভূতের খপ্পরে পড়েনি তো? ভয়ে ভয়ে বলল মুসা।
ভূত না কচু, কিশোর বলল। আঙুল তুলে মঞ্চটা দেখিয়ে বলল, ওটাও কি ভূতে নিয়ে রেখে এসেছিল দরজার কাছে?
কিশোর ঠিকই বলেছে। মুসার দিকে তাকাল রবিন। কোন মানুষের কাজ। হয় উলফ, নয়তো মিলার।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আর দেরি করা ঠিক হবে না।
কোরির ঘর থেকে খোঁজা শুরু করল ওরা। কোন সুত্র নেই। জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় দেখে বোঝা গেল না কোনটা নিখোঁজ হয়েছে কিনা। রাতে বিছানায় ঘুমিয়েছে কিনা তা-ও বোঝার উপায় নেই।
বিছানার অন্য পাশে গিয়েই চিৎকার করে ডাকল রবিন, এই, দেখে। যাও!
তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল কিশোর আর মুসা। বিছানার পায়ের কাছে মেঝেতে চক দিয়ে আঁকা বিচিত্র কিছু নকশা আর চিহ্ন।
পেন্টাকল এঁকেছে! অবাক হয়ে বলল কিশোর। কাছেই পড়ে থাকতে দেখল একটা পুরানো বই। হাতে নিয়ে দেখল। জনৈক ভূত-গবেষকের লেখা। কি করে ভূত তাড়াতে হয়, কি করে ডেকে আনতে হয়, লিখে রেখেছে। কোথাও কোথাও নকশা এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে।
ভুরু কুঁচকে মুসা বলল, খাইছে, ভূতকে ডেকে এনেছিল নাকি কোরি! শেষে ভুতেই গাপ করে দিল!
গম্ভীর হয়ে আছে কিশোর। জবাব দিল না।
কোরির ঘর, বাথরূম তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্দেহজনক আর কিছু পাওয়া গেল না।
ওল্ড উইঙে হলওয়ের দুই পাশে যত ঘর আছে, সবগুলোতে খুঁজে দেখা হলো। লবি আর রেকর্ড রূমেও পাওয়া গেল না কোরিকে। অফিস রূমে ঢুকল। অন্ধকার। নীরব। টর্চ জ্বেলে খুঁজে দেখল। নেই সে।
হোটেলের পেছনের আঙিনায় বেরিয়ে এল ওরা। বৃষ্টি থেমেছে। তবে আকাশ মেঘে ভারী হয়ে রয়েছে এখনও বাতাস গরম, ভেজা ভেজা।
সুইমিং পুলের কাছে এসে দেখা গেল বৃষ্টির পানিতে কানায় কানায় ভরে গেছে। কোরির নাম ধরে চিৎকার করে ডাকল কিশোর। জবাব পাওয়া গেল না। আরও কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর বলল, রোজার মেলবয়েসকে জানাতে। হবে।
রবিন বলল, পুলিশকে জানানো দরকার।
পুলিশ পাবে কোথায়? মুসা বলল, তার জন্যে শোরটাউনে যেতে হবে। কিংবা ফোন করতে হবে।
পাইরেট আইল্যান্ডেও পুলিশ আছে।
গোস্ট আইল্যান্ডের পাশের দ্বীপ পাইরেট আইল্যান্ড। গোস্ট আইল্যান্ডের চেয়ে বড়। মোটরবোটে যেতে দশ মিনিট লাগে।
ওখানে পুলিশ আছে জানলে কি করে? জিজ্ঞেস করল মুসা।