চোখ তুলে তাকাল বাকি তিনজন। দেয়ালের গায়ে যেখান থেকে কাগজ ছিঁড়েছে রবিন, সেখানে একটা দরজার খানিকটা দেখা যাচ্ছে।
এগিয়ে গেল কিশোর। টান দিয়ে নিচের দিকের বাকি কাগজটুকু ছিঁড়ে ফেলল। বেরিয়ে পড়ল পুরো দরজাটা। বিড়বিড় করে বলল, দরজা ঢেকে দিয়েছিল কেন? আশ্চর্য!
সরো! সরো ওটার কাছ থেকে! চিৎকার করে উঠল কোরি। আমি পড়েছি, ভূতের উপদ্রব ঠেকানোর জন্যে ভূতুড়ে ঘর কিংবা সুড়ঙ্গের দরজা এ ভাবে ফুলআকা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। তাহলে নাকি ওসব দরজা দিয়ে। আর বেরোতে পারে না ভূত।
রসুনের মালা ড্রাকুলার মত ভূতকে ঠেকায় শুনেছি, কিন্তু ফুলআঁকা কাগজ দরজাটার দিকে এগিয়ে গেল কিশোর।
দেখো, আমি তোমাকে মানা করছি! সাবধান করল কোরি। যেয়ো না! বের করে এনো না ভূতটাকে…
চকচকে মসৃণ কাঠের দরজাটার একপাশে ফ্রেমে বাঁধাই একটা ছোট ছবি ঝোলানো। মঞ্চের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিল। সেটাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেই কোণা ধরে সামান্য সরাতে বেরিয়ে পড়ল দরজার নব। হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। নব ধরে মোচড় দিতে খুলে গেল দরজার পাল্লা।
কোরির দিকে ফিরে তাকাল সে। হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মুখে।
ঢুকো না! কোরির দুচোখে ভয়। আমি এখনও বলছি, ভাল চাইলে বন্ধ করে দাও ওই দরজা!
মুসার দিকে তাকাল কিশোর।
হ্যাঁ-না কিছু বলল না মুসা। কোরির ভয়টা তার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে। ঢোকা উচিত কিনা বুঝতে পারছে না।
রবিন বলল, খুলেই যখন গেছে, চলো দেখি কি আছে?
ওর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই তীক্ষ্ণ একটা চিৎকার দিয়ে ফড়ফড় করে বেরিয়ে এল কি যেন।
লাফ দিয়ে সরে গেল কোরি। মুসা হতভম্ব।
জানালার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল রবিন, বাদুড়। ওই জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল। হাসতে হাসতেই বলল, কোরি, ভ্যাম্পায়ার নয়, শিওর থাকতে পারো। দিনে বেরোয় না ভ্যাম্পায়ারেরা। সূর্য ডোবার আগে বেরোতে পারে না।
ইয়ার্কি মেরো না! ঝাঁঝিয়ে উঠল কোরি। যখন পড়বে ভূতের খপ্পরে তখন বুঝবে মজা!
যত ভয়ই পাক, কিশোর, রবিন আর মুসাও যখন ঢুকে গেল ভেতরে, আগ্রহ এবং কৌতূহল কোনটাই ঠেকাতে না পেরে কোরিও ঢুকে পড়ল ওদের পেছনে। অন্ধকারে আবার কিচকিচ করে উঠল কয়েকটা জীব। ফড়ফড় করতে লাগল মাথার ওপর। চামচিকে আর ছোট জাতের বাদুড়ে বোঝাই হয়ে। আছে জায়গাটা।
বাদুড় আমার সাংঘাতিক ভয় লাগে, অন্ধকারে ফিসফিস করে বলল কোরি। মাকড়সা আর তেলাপোকাকেও।
শুয়াপোকাকে ভয় লাগে না? হেসে জিজ্ঞেস করল রবিন। বড় কালো কালো শুয়াপোকা? লম্বা লম্বা কাটার মত লোম, কিলবিল করে
মাগো! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল কোরি। দোহাই লাগে। তোমার রবিন, আর বোলো না..প্লীজ! উফ, দেয়ালেই হাত দিতে পারব না। আর।
ওর চিৎকারে মাথার ওপর ফড়ফড় করতে লাগল আবার বাদুড়ের ঝাক।
শক্ত করে গলার লকেটটা চেপে ধরল কোরি। অন্ধকারে কেউ দেখতে পেল না সেটা।
ধীরে ধীরে চোখে সয়ে এল অন্ধকার। পেছনের খোলা দরজাটা দিয়ে অতি সামান্য আলো আসছে। আবছামত দেখা যাচ্ছে এখন ভেতরটা। কংক্রীটে তৈরি সরু, নিচু ছাতওয়ালা একটা সুড়ঙ্গে ঢুকেছে ওরা।
মুসা, কিশোর বলল, আলমারিতে টর্চ আছে। নিয়ে এসো তো দুটো। ঢুকেছি যখন ভাল করেই দেখে নিই কি আছে না আছে?
ভয়ের ভান করে রবিন বলল, না না, এগিয়ে না আর! বলা যায় না, কখন কাউন্ট ড্রাকুলার কফিন চোখে পড়ে যায়! এ ফালতু কথা বোলো না তো! লাফ দিয়ে দরজার দিকে সরে গেল কোরি। আমি যাব না!
ওর পাশ কেটে বেরিয়ে গেল মুসা। আলমারি খুঁজে দুটো টর্চ বের করে নিয়ে এল।
মুসার কাছ থেকে একটা টর্চ নিল কিশোর। আগে আগে এগোল।
যাব না বললেও কৌতূহল দমাতে পারল না কোরি। এগিয়ে চলল তিন গোয়েন্দার সঙ্গে।
রোজার এসে যদি জিজ্ঞেস করেন, কাজ ফেলে কোথায় গিয়েছিলাম। আমরা, রবিন বলল, কি জবাব দেব?
সত্যি কথাই বলব, জবাব দিল কিশোর। সুড়ঙ্গটা দেখে কৌতূহল হয়েছিল। ভেতরে কি আছে দেখতে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিক কৌতূহল এটা। তিনি কিছু মনে করবেন না। একটু চিন্তা করে বলল, তবে একটা কথা ভাবছি। এটার কথা কি উলফ জানে?
শুকনো গলায় কোরি বলল, আমার ভয় লাগছে!
সেটা তো বুঝতেই পারছি।
শূন্য সুড়ঙ্গ। পায়ের নিচে কংক্রীটের মেঝে। দেয়াল ছুঁয়ে দেখল কিশোর। ঠাণ্ডা। ভেজা ভেজা।
ওই দেখো! হাত তুলল মুসা।
ওর বলার ভঙ্গিতে চমকে গেল কোরি। আবার চিৎকার করে উঠল। তাকিয়ে দেখল দেয়াল বেয়ে এগিয়ে আসছে একটা বড় পোকা। গোঁ গো শুরু করল সে। যেন চোখ উল্টে দিয়ে পড়ে যাবে। ওয়াক ওয়াক করে বলল, আমার বমি আসছে!
নাহ, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোই তো মুশকিল! বিরক্ত হয়ে বলল কিশোর। যাও, তুমি চলে যাও, আমাদের সঙ্গে আর যাওয়া লাগবে না!
ঠিক আছে, আর চেঁচাব না। কিন্তু আধমিনিট পরেই বড় একটা মাকড়সা দেখে আবার চিৎকার করে উঠল কোরি। টারান্টুলা! ব্ল্যাক উইডো। স্পাইডার! পিষে ফেলো! কামড়ে দিলে সর্বনাশ!
আরে কিসের টারান্টুলা? ধমক লাগাল কিপোর। খেয়ে আর কাজ পেল না। এখানে টারান্টুলা আসবে কোত্থেকে? না চিনেই চেঁচামেচি। একেবারে সাধারণ মাকড়সা।
ডানে মোড় নিল সুড়ঙ্গ। ঢালু হয়ে গেছে মেঝে। গলিঘুপচির অভাব নেই। ওসবের মধ্যে না ঢুকে সোজা এগিয়ে চলল ওরা।