হু! ওর সঙ্গে কথা ছিল।
ঠিক আছে, আমার সঙ্গে দেখা হলে তাকে বলব আপনি খুঁজছিলেন।
মন দিয়ে কাজ করো! হ্যাঁ, ভাল কথা, তোমরা কি পার্টিতে যোগ দিতে এসেছ নাকি?
পার্টি! চমকে গেল কিশোর। মোচড় দিয়ে উঠল পেটের মধ্যে। গতরাতের মহিলার কথা মনে পড়ল–প্লীজ, তোমার পায়ে ধরি, পাটি দিয়ো না! কেন মানা করছিল মহিলা? পার্টিকে এত ভয় কেন তার?
কিসের পার্টি? জানতে চাইল কিশোর।
কর্কশ কণ্ঠে মিলার বললেন, থেকে যাও। পার্টিতে যোগ দিতে হবে তোমাদের। পালানোর চেষ্টা কোরো না।
*
সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ল ওরা রবিনের মাথা ধরেছে। কোরির গা ম্যাজম্যাজ করছে কথাই বলতে পারল না কোনমতে খাওয়া শেষ করে ঘরে চলে গেল দুজনে
এত তাড়াতাড়ি শুতে যেতে ইচ্ছে করছে না কিশোরের। মুসারও না। ডাইনিং রূমে বসে রইল ওরা।
মিলারকে কি সত্যি পাগল মনে হয়েছে তোমার, কিশোর? জিজ্ঞেস করল মুসা।
পাগল কিনা জানি না, তবে আচরণ কেমন অদ্ভুত।
সেজন্যেই কোরি ভাবছে, ও ভূত।
যা খুশি ভাবুকগে। কারও আচরণ অদ্ভুত হলেই সে ভূত হয়ে যায় না। ভুলে যাচ্ছ কেন, মিলার বিষণ্ণতা রোগে ভুগছেন। সে যাকগে। আন্ট জোয়ালিনের ব্যাপারটা কি বলো তো? কোরি নাকি একবারও যোগাযোগ করতে পারেনি তাঁর সঙ্গে?
এটাও আমার কাছে রহস্যময় লাগছে।
একটা মুহূর্ত চুপ করে রইল কিশোর। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল, বাইরে একটু ঘুরে আসিগে। রঙের মধ্যে শ্বাস নিতে নিতে মাথাটা গরম হয়ে গেছে।
মুসাও বেরোল ওর সঙ্গে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এল চন্দ্রালোকিত সৈকতে।
অপূর্ব দৃশ্য। হলদে আলোয় ঝলমল করছে বালি। তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ভাঁজগুলোকে কালচে দেখাচ্ছে।
কি পরিষ্কার আলো দেখো, মুগ্ধকণ্ঠে বলল কিশোর। সব স্পষ্ট।
স্যান্ডেল খুলে বালিতে পা রেখে দেখো। ঠাণ্ডা। খুব আরাম লাগে।
পানির কিনারে এসে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। ফিরে তাকাল হোটেলের দিকে। বালির ঢালের লম্বা ঘাসগুলোতে ঢেউ তুলছে বাতাস। মনে হচ্ছে ওগুলোও তরল পদার্থ। চাঁদের আলো সবকিছুকেই কেমন অন্য রকম করে তুলেছে।
ডকের দিকে একটা খসখস শব্দ হলো। পই করে ঘুরে তাকাল সে। ডকের ওপরে ছোট্ট পাথরের টিলার কাছে হয়েছে শব্দটা।
কিসের শব্দ? মুসাও শুনতে পেয়েছে।
কেউ নজর রাখছে নাকি? চলো তো দেখি।
আমার ভয় করছে।
ভূতের ভয়?
সবদিকে নজর থাকে ওদের। নিজে অদৃশ্য থেকে সবখানে হাজির হতে পারে একমাত্র ওরাই..
চলো তো দেখি।
বালির ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল কিশোর। নিচে কেউ থাকলে এখান থেকে দেখা যাবে।
কিন্তু অনেকখানি উঠেও কাউকে দেখতে পেল না। কোন শব্দও নেই। কেবল তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ছলাৎছল আর ঢেউয়ের মধ্যে বয়ে যাওয়া বাতাসের কানাকানি।
ক্লান্ত লাগছে। হাঁটতে আর ভাল লাগছে না। হোটেলে ফিরে চলল। দুজনে।
.
০৯.
পরদিন সকালে নাস্তার পর আবার কাজে লাগল ওরা।
দেয়াল ঘেঁষে রাখা মঞ্চটাতে ওঠা দরকার। ছাতের ঠিক নিচে দেয়ালে দশ বর্গফুটমত জায়গার রঙ ঘষতে হবে। কিন্তু সবাই একসঙ্গে উঠতে পারবে না ওটাতে। মাত্র দুজনের জায়গা হয়।
মুসা বলল, আমি আর রবিন উঠে ঘষতে থাকি। আমাদের হাত ধরে গেলে তোমরা দুজন উঠো।
খালি খালি বসে থাকব? কিশোর বলল। মঞ্চের পাশে একটা মই ঠেস দিয়ে তাতে উঠে কাজ করা যায়।
কোরি গেছে তার আন্টিকে ফোন করতে।
একটা ইলেকট্রিক স্যান্ডার দিয়েছে আজ উলফ। হাতে ঘষার চেয়ে এটা দিয়ে ঘষা অনেক সহজ। অনেক দ্রুত অনেক বেশি জায়গা ঘষা যায় যন্ত্রটা দিয়ে। যথেষ্ট ভারী। অন্য তিনজনের চেয়ে সহজে তুলে ধরে রাখতে পারবে মুসা, কারণ তার গায়ে শক্তি বেশি। সুতরাং ওটা নিয়ে মঞ্চে উঠে পড়ল সে।
রবিন উঠল তার পাশে। মঞ্চটার অবস্থা বিশেষ সুবিধের লাগছে না আমার। নড়ছে, দেখছ? দুলছে। ভেঙে পড়বে না তো?
রবিনের সন্দেহটাকে গুরুত্ব দিল না মুসা। স্যান্ডার ঠেসে ধরতে গেল দেয়ালে। এই সময় ফিরে এল কোরি। মুখ থমথমে।
পেয়েছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। রিং হচ্ছিল ঠিকই। কেউ ধরল না। ভায়োলা আন্টি নাহয় হাসপাতালে গেছে। কিন্তু আন্ট জোয়ালিন?
রোজার মেলবয়েস কি বললেন? শোরটাউনে যাবেন?
ঠোঁট ওল্টাল কোরি, জানি না। ফোন রেখে তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কোথাও খুঁজে পেলাম না।
স্যান্ডারটা দেয়ালে ঠেসে ধরল মুসা। বিকট শব্দ করে রঙ তুলতে লাগল যন্ত্রটা। পাশে দাঁড়িয়ে টেনে টেনে দেয়ালের কাগজ ছিঁড়তে শুরু করল মুসা।
যন্ত্র দিয়ে কাজ করার ফলে বাতাসে রঙের কণা এত বেশি উড়ছে, শাস নিতে কষ্ট হতে লাগল দুজনের। ব্যাপারটা লক্ষ করে একটা আলমারি থেকে গিয়ে দুটো মাস্ক বের করে আনল কিশোর। হাত লম্বা করে বাড়িয়ে দিল রবিনের হাতে। একটা নিজে রেখে আরেকটা মুসাকে দিল রবিন।
কাজ করতে করতে পাশে সরে গেল মুসা। দুলে উঠল মঞ্চ। কাত হয়ে যাচ্ছে একপাশে।
চিৎকার করে উঠল রবিন, আরি, পড়ে যাচ্ছে তো!
ঠেকানো গেল না কোনমতে। মড়মড় করে ভেঙে পড়ল মঞ্চ। মুসার হাত থেকে স্যান্ডারটা উড়ে গিয়ে পড়ল কিশোরের পায়ের কাছে। আরেকটু হলে তার পা-টা হেঁচত। মেঝেতে পড়ে গেল মুসা আর রবিন।
দৌড়ে এল কোরি আর কিশোর।
কোনমতে উঠে বসল রবিন। হাতে মুঠো করে ধরা রয়েছে এখনও একটুকরো কাগজ। দেয়ালের দিকে চোখ পড়তে চিৎকার করে উঠল, আরে দেখো দেখো! একটা দরজা!