- বইয়ের নামঃ বিপজ্জনক খেলা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
বিপজ্জনক খেলা
০১.
মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওদের। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আন্ট জোয়ালিন। অথচ রকি বীচ থেকে যখন রওনা দিয়েছিলেন, তখন দিব্যি সুস্থ। রাস্তায় গাড়ি চালাতে চালাতে পেটব্যথা শুরু হলো। শোরটাউনে পৌঁছতে পৌঁছতে একেবারে কাহিল। তার বোন মিস কিশোর থ্রিলার ভায়োলার বাড়িতে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ডাক্তার ডাকা হয়েছে। এসে ওষুধপত্র দিয়ে গেছেন। বলে গেছেন, আগামীদিনের আগে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মিস ভায়োলার বাড়িতে অবশ্য এমনিতেও উঠত ওরা–আন্ট জোয়ালিন, তিন গোয়েন্দা এবং কোরি ড্রিম। এখানে থেমে গোস্ট আইল্যান্ডে যাওয়ার অপেক্ষা করত। প্রতিদিন একবার করে দ্বীপে যায় লঞ্চটা। ধরতে না পারলে পরের দিনের জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
কোরি ড্রিম তিন গোয়েন্দার বান্ধবী, এক স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। আন্ট জোয়ালিন কোরির খালা। গরমের ছুটিতে গোস্ট আইল্যান্ডে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওদের। তিন গোয়েন্দার ওখানে যাওয়ার দুটো কারণ–ছুটি কাটানো এবং ভূত দেখা। কোরির দৃঢ় বিশ্বাস, গোস্ট আইল্যান্ডের একমাত্র হোটেল নাইট শ্যাডো-তে ভূত আছেই। যেমন নাম দ্বীপের, তেমনি হোটেলের। কৌতূহল ঠেকাতে পারেনি গোয়েন্দারা। যেতে রাজি হয়ে গেছে।
ভাল রোদ ঝলমলে দিন দেখে রওনা হয়েছে ওরা। পথে যে এ রকম একটা অঘটন ঘটবে কে ভাবতে পেরেছিল?
কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাশ হতে হলো না। সেদিনই সন্ধ্যার লঞ্চ ধরতে ওদের রাজি করালেন আন্ট জোয়ালিন। বললেন, তোরা চলে যা। কাল শরীর ভাল হয়ে গেলে আমিও যাব। না পারলে পরশু।
অহেতুক আন্ট ভায়োলার বাড়িতে বসে থাকার মানে হয় না। শোরটাউনে দেখার কিছু নেই। সুতরাং কোরিকে নিয়ে লঞ্চঘাটে রওনা হলো। তিন গোয়েন্দা।
ট্যাক্সি নিয়ে ছোট্ট শহরের সরু রাস্তা ধরে লঞ্চঘাটে পৌঁছল ওরা। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। যা আছে, বেশির ভাগই টুরিস্ট। ডকের শেষ মাথায় একধারে একটা ছোট কাঠের সাইনবোর্ডে লেখা: গোস্ট আইল্যান্ড টুরস। নিচে তীরচিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়েছে কোন ঘাট থেকে দ্বীপে যাওয়ার লঞ্চ ছাড়ে।
সেদিকে এগিয়ে গেল ওরা।
ছোট একটা বোট থেকে লাফিয়ে নেমে এল হাসিখুসি এক তরুণ। হেসে জিজ্ঞেস করল, গোস্ট আইল্যান্ডে যাবে?
কিশোর জবাব দিল, হ্যাঁ।
আমি এই লঞ্চের সারেং। এসো।
ব্যাগ-সুটকেস নিয়ে লঞ্চে উঠে পড়ল তিন গোয়েন্দা। হাত ধরে কোরিকে উঠতে সাহায্য করল সারেং। শুধু ওরাই। আর কোন যাত্রী দেখল না। অবাক লাগল কিশোরের।
সামনের দিকে এগিয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। সরু কাঠের বেঞ্চের নিচে ঢুকিয়ে দিল ব্যাগগুলো। সবজে-ধূসর ঢেউ লঞ্চের কিনারে বাড়ি মারছে ছলাৎ ছল ছলাৎছল। খানিক দুরে সৈকতের বালিতে ফেলে দেয়া আবর্জনায় খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে চার-পাঁচটা সী গাল।
ওরা উঠতেই আর দেরি করল না সারেং। ডকের সঙ্গে বাঁধা লঞ্চের দড়িটা খুলে দিয়ে এঞ্জিন স্টার্ট দিল। বিকট গর্জন করে উঠল পুরানো এঞ্জিন। জেটির কাছ থেকে সরে যেতে শুরু করল লঞ্চ।
কেবিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে কিশোর। বাতাস ভেজা ভেজা। ঠাণ্ডা।
আচমকা ভীষণ দুলে উঠল লঞ্চ। জেটি থেকে সরে আসতেই বিশাল ঢেউ ধাক্কা মেরেছে। সীটে বসেও প্রচণ্ড ঝাঁকি খেল যাত্রীরা। সাংঘাতিক দুলুনি।
মজা পেয়ে হেসে উঠল কোরি। হাসিটা সংক্রামিত হলো অন্য তিনজনের মাঝে।
ভয় পাচ্ছ? হেসে জিজ্ঞেস করল সারেং। আজ অতিরিক্ত ঢেউ।
দারুণ! মুসা বলল। মনে হচ্ছে নাগরদোলায় চড়ছি।
রেলিঙের কাছে গিয়ে দাঁড়াল কোরি। আধ মিনিটেই অর্ধেক কাপড় ভিজিয়ে সরে চলে এল। বৃষ্টির ছাটের মত এসে গায়ে লাগে পানির কণা।
শোরটাউন থেকে বেশি দূরে না দ্বীপটা। বেশিক্ষণ লাগল না পৌঁছতে। তীরের দিকে তাকিয়ে ডকের এপাশ ওপাশ খুঁজল মুসা, কই? আমাদের না নিতে আমার কথা? কেউ তে এল না।
কোরি বলল, বুঝতে পারছি না। হয়তো দেরি দেখে ফিরে গেছে।
সারেঙের দিকে ফিরল কিশোর, আসতে দেরি করেছি নাকি?
আর দিনের চেয়ে কিছুটা তো দেরিই।
হু, কোরির দিকে তাকাল কিলোর। তারমানে মেলবয়েস লোক পাঠিয়েছিলেন ঠিকই। লঞ্চ না দেখে ফিরে গেছে।
ডকে ভিড়ল লঞ্চ। লাফ দিয়ে দিয়ে নামল ওরা। সারেং নামল না। ওপর থেকে ওদের ব্যাগ-সুটকেসগুলো বাড়িয়ে দিল এক এক করে।
দমকা বাতাসে ওদের দুই পাশে ধুলোর ঘূর্ণি উড়ল।
দ্বীপ বটে একখান! আনমনে বিড়বিড় করল সারেং
চারপাশে তাকাল কিশোর। শেষ বিকেলের রোদে এত সুন্দর লাগছে জায়গাটাকে, বাস্তব মনে হয় না। আকাশের গোলাপী রঙ রাঙিয়ে দিয়েছে সাগরের পানিকে। ঢেউ আছড়ে পড়ছে সাদা বালিতে। ডকের দুদিকে বহুদূর লম্বা হয়ে ছড়িয়ে গেছে সৈকতটা।
সরু একটা রাস্তা এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠে ঢুকে গেছে। পাইনবনের ভেতর। ওপর দিকে তাকালে বন ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।
হোটেলটা কই? জানতে চাইল কিশোর।
শেষ ব্যাগটা মুসার হাতে তুলে দিল সারেং। শার্টের আস্তিন দিয়ে কপালের ঘাম আর নোনা পানি মুছল। হাত তুলে বনের দিকে দেখিয়ে বলল, ওখানে।