আবার অ্যানির কথা ভাবল।
রিকির কথা ভাবল।
রাগটা মাথা চাড়া দিল আবার। মনে মনে আবারও কসম খেল, ভ্যাম্পায়ারের দলকে ধ্বংস না করে শান্ত হবে না।
কি করে খতম করতে হয় ওদের, ভালমতই জানে এখন সে। ড্রাকুলার বইতে পড়েছে। একজন পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেছে। একজন মওলানাকে জিজ্ঞেস করেছে। পাদ্রী বলেছেন, কাঠের চোখা খুঁটি ঢুকিয়ে দিতে হবে। ভ্যাম্পায়ারের বুকে। ক্রুশ বাড়িয়ে ধরলে ভ্যাম্পায়ার আর এগোয় না। মওলানা বলেছেন, আল্লাহ-রসুলের নাম করলে কোন জিন-ভূতেরই সাধ্য নেই। কাছে এগোয়। দুজনেই একটা ব্যাপারে একমত রোদের আলো আর আগুন সহ্য করতে পারে না রক্তচোষা ভূত। রোদের মধ্যে বের করে নিয়ে এলে, কিংবা গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলে ধ্বংস হতে বাধ্য। বুকে কাঠের খুঁটি পোঁতার চেয়ে আগুন ধরানোটাই সহজ মনে হয়েছে ওর কাছে।
তবে সবার আগে, প্রথম কাজটা হলো ওদের খুঁজে বের করা
*
সাঁঝের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কণিকা। কেমন অসহায় বোধ করছে। কোথায় ওরা?–ভাবল। সব সময় এত দেরি করে কেন আসতে? শহরে গিয়ে ছেলেগুলোকে খুঁজে বের করার কথা ভাবল একবার।
চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিল উড়তে থাকা লম্বা কালো চুল। জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। ওর এত তাড়া থাকাটা উচিত না। ডলি আর কিমি কখনও তাড়াহুড়া করে না।
পা থেকে স্যান্ডেল খুলে নিল সে। ঠাণ্ডা বালি ঢুকে যাচ্ছে আঙুলের ফাঁকে। হাঁটতে গেলে লাফ দিয়ে দিয়ে উঠে আসছে পায়ের পাতার ওপরে।
মাথার ওপর ডানা ঝাপটানোর শব্দে মুখ তুলে তাকাল সে। অনেকগুলো বাদুড় একসঙ্গে উড়ে চলেছে পাহাড়ের দিকে।
বালিয়াড়ির পাশ দিয়ে চলার সময় খিলখিল হাসির শব্দে চমকে গেল। ফিরে তাকিয়ে দেখল টিলার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে কিমি আর ডলি। ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর।
ঘাবড়ে গেল কণিকা। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল দুজনকে। চিৎকার করে উঠল, এই, কি করছ!
রক্ত খাব, জবাব দিল ডলি।
কি যা তা বলছ! আমি তোমাদের স্বজন!
স্বজনের রক্তই খাব আজ, কিমি বলল।
দুজনে যুক্তি করে এসেছে, বুঝতে পারল কণিকা। তারমানে আমাকে– বিশ্বাস করতে পারছ না?
না, পারছি না, ডলি বলল। তুমি যে আমাদের স্বজন, কি করে বুঝব?
কি করে বুঝতে চাও?
তোমার গলায় দাঁত বসাব। রক্তের স্বাদ থেকেই বুঝে যাব, তুমি আসল না নকল।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দুজনকে দেখতে দেখতে কণিকা বলল, কাউন্ট ড্রাকুলা বলেছেন বুঝি?
যদি বলি তাই?
একই কথা তো আমিও তোমাদের বলতে পারি। আমি যদি বলি, আমার সন্দেহ তোমরা নকল। কাউন্ট ড্রাকুলা আমাকে বলেছেন তোমাদের রক্ত খেয়ে দেখার জন্যে। তাহলে কি বলবে?
প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না কিমি আর ডলি। পরস্পরের দিকে তাকাতে শুরু করল।
দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে ওদের বুঝতে পেরে চাপ দিল কণিকা, কই, দাঁড়িয়ে আছ কেন? এসো, রক্ত টেস্ট করো আমার। তারপর আমি তোমাদের রক্ত টেস্ট করব।
ডলির দিকে তাকিয়ে আচমকা ধমকে উঠল কিমি, তখনই বলেছি, এসব চালাকির দরকার নেই। ও আমাদেরই লোক। জন যখন ঢুকিয়েছে, নকল। হতেই পারে না, কাউন্ট ড্রাকুলা যতই বলুন। নইলে আমাদের যা করতে বললেন, একই কাজ কণিকাকেও করতে বলবেন কেন? কণিকার দিকে তাকাল, থাক, নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে আর লাভ নেই। কোথায় যাচ্ছিলে?
শহরে।
আমরাও যাব।
.
০৭.
পরদিন সন্ধ্যায় রবিনকে ফোন করল মুসা। সারাদিন ওর খোঁজ পায়নি। আশা করেছিল, আসবে। আসেনি। সে নিজেও যোগাযোগ করতে পারেনি। সারারাত থানায় কাটিয়ে এসে ভোরের দিকে সেই যে শুয়েছিল, উঠেছে। দুপুরের পর। সাগরে গিয়ে সাঁতার কেটেছে অনেকক্ষণ। ফিরে এসে গোসল করে খাওয়াদাওয়া সারতে সারতে বিকেল শেষ। কাপড় পরে বেরোনোর জন্যে রেডি হয়ে এখন রবিনকে ফোন করল।
ফোন ধরল বোর্ডিং হাউসের অ্যাটেনডেন্ট। ওখানেই উঠেছে রবিন। মুসার শত চাপাচাপিতেও ওদের ভাড়া করা কটেজে ওঠেনি। লোক বাড়লে গাদাগাদি হয়ে যাবে, আঙ্কেল আর আন্টির অসুবিধে হবে। বেড়াতে আসা মানুষকে কোনভাবে বিরক্ত করা উচিত না।
রবিন কোথায়? জানতে চাইল মুসা। রবিন মিলফোর্ড?
ঘরে। আপনি কে?
আমি তার বন্ধু। মুসা আমান। ডেকে দেয়া যাবে, প্লীজ?
ধরো। দিচ্ছি।
রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ শুনতে পেল মুসা। বেশ দেরি করে এসে ফোন ধরল রবিন।
কে, মুসা? অ্যানির খবর শুনেছ?
হ্যাঁ। কেবল শুনিইনি, নিজের চোখে লাশ দেখে এলাম, মুসা বলল। কাল রাতে সৈকতে গিয়েছিল আমার সঙ্গে। বেড়িয়ে-টেড়িয়ে সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে চলে গেল। রাত দুপুরে পুলিশ এসে ঘুম থেকে জাগাল আমাকে। বলল বাড়িতে ফিরে যায়নি সে। ওর মা নাকি খোঁজাখুঁজি করছে। আমাকে ওদের সঙ্গে যেতে হবে। সৈকতে লাশ খুঁজে পাওয়ার পর আমাকে থানায় ধরে নিয়ে গেল। তারপর প্রশ্নের পর প্রশ্ন। যেন খুনিটা আমিই।
মানুষের জীবনটা কি অদ্ভুত, তাই না? কাল দেখলাম বেঁচে আছে, হেসেখেলে বেড়াচ্ছে, অভিনয় করছে, আজ নেই। কোনদিন আর মঞ্চে উঠবে না, কথা বলবে না… একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রবিন।
মুসা চুপ করে আছে। অ্যানির গলার দাগগুলোর কথা বলবে কিনা ভাবছে। রবিন বিশ্বাস করবে না। এতদিন যেমন করেনি, এখনও করবে না।
মুসা, শুনছ?
হ্যাঁ।
চুপ করে আছ কেন?
এমনি। তোমার কথা শুনছি। তোমার গলা এমন লাগছে কেন? শরীর খারাপ নাকি?