অ্যানি বলল, রাত নিশ্চয় অনেক। কটা বাজে?
অন্ধকারে ঘড়ি দেখার চেষ্টা করল মুসা। দেখা যাচ্ছে না। এগারোটার বেশিই হবে।
বাড়ি যাওয়া দরকার। দেরি করলে আম্মা চিন্তা করবে।
বাহ, ভ্যাম্পায়ারের আবার আম্মাও থাকে!–ভাবল মুসা। যদিও এখন পর্যন্ত কোন রকম অস্বাভাবিক আচরণ করেনি অ্যানি। সময় নিচ্ছে আরকি। ধৈর্য ধরে সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
কাল যাচ্ছ তো থিয়েটারে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
নিশ্চয়ই।
চলো, তোমাকে দিয়ে আসি।
লাগবে না। আমি একাই চলে যেতে পারব। শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না তোমার।
শহরের দিকে রওনা হয়ে গেল অ্যানি। যতক্ষণ দেখা গেল ওকে, তাকিয়ে। রইল মুসা।
ধীরে ধীরে বালিয়াড়ির ওপাশে হারিয়ে গেল অ্যানি।
*
খুব ভাল লাগছে আমার, কিমি বলল। আজকের রাতটা খুব সুন্দর।
আমারও ভাল লাগছে, টনি বলল। সৈকতের কিনারে সাগরের দিকে মুখ করা বারান্দায় বসে আছে দুজনে। মস্ত কটেজটা ভাড়া নিয়েছেন টনির বাবা।
চলো না, সৈকতে হেঁটে আসি।
কি দরকার। এখানেই তো ভাল লাগছে।
তা লাগছে। গেলে আরও ভাল লাগত, সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কিমি। টনিকে সম্মোহিত করে, ওষুধ শুকিয়ে কাবু করে রক্ত খাওয়ার অপেক্ষা। এভাবে বসে থাকলে সে-সুযোগ পাবে না। উঠে দাঁড়াল সে। রেলিঙের কাছে গিয়ে পেট ঠেকিয়ে দাঁড়াল।
খানিকক্ষণ বসে থেকে টনিও উঠে গেল।
ফিরে তাকাল কিমি। টনির মুখোমুখি হলো। জ্যোৎস্নায় খুব সুন্দর লাগছে ওকে। টনির চোখ আটকে গেল কিমির চোখে।
আরও কাছে চলে এল কিমি। হাত নাড়ল টনির নাকের সামনে। কিমির চাহনিতেই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল টনি, মিষ্টি গন্ধে অবশ হয়ে আসতে লাগল শরীর।
ওর কাঁধে দুই হাত রাখল কিমি। ধীরে ধীরে মুখটা নামিয়ে আনতে লাগল। গলার কাছে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে দপদপ করছে শিরাটা। মুহূর্তে খিদে চাগিয়ে উঠল। প্রবল হয়ে গেল রক্তের তৃষ্ণা। ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে গেল আপনাআপনি। বেরিয়ে পড়ল তীক্ষ্ণ মাথাওয়ালা শ্বদন্ত। কুটুস করে ফুটিয়ে দিলেই হলো এখন। রক্ত বেরিয়ে আসবে ফিনকি দিয়ে। চুষে চুষে খাবে সে।
সাবধান, অত উতল হয়ো না!–নিজেকে হুঁশিয়ার করল কিমি। লোভ সামলাও। রক্ত শুষে ওকে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলো না। ও মরে গেলে ভীষণ বিপদে পড়বে।
শিরাটার ওপর মুখ নামাল সে। দাঁত চেপে ধরল। ফুটিয়ে দিতে যাবে, ঠিক এই সময় শোনা গেল তীক্ষ্ণ চিৎকার, অ্যাই, কি করছ তোমরা?
ঝটকা দিয়ে মুখ সরিয়ে একলাফে পিছিয়ে গেল কিমি। ঠোঁট দিয়ে চেপে ঢেকে ফেলল দাঁত দুটো। গলা শুনেই বুঝতে পারল টনির বোন সিসি। সর্বনাশ! শঙ্কিত হলো কিমি। বিন্দু মেয়েটা শ্বদন্ত দুটো দেখে ফেলেনি তো?
টনিরও ঘোর কেটে গেল। চিৎকার করে উঠল, সিসি, চেঁচাচ্ছিস কেন?
দেখতে এসেছিলাম, তোরা কি করছিস, বলে হি-হি করে হাসতে লাগল সিসি।
রাগ আগ্নেয়গিরির লাভার মত ফুটতে শুরু করল কিমির মগজে। সিসির ঘাড় চেপে ধরে ওর গলাতেই দাঁত ফুটিয়ে দিতে ইচ্ছে করল। কিন্তু সেটা করতে যাওয়া হবে চরম বোকামি। যতই ঝগড়া করুক, বোনকে প্রচণ্ড ভালবাসে টনি। মুসা আর রবিনও পছন্দ করে। সিসির কিছু হলে। ভ্যাম্পায়ারের পেছনে আদাজল খেয়ে লাগবে তিনজনে। সাংঘাতিক বিপদে ফেলে দেবে। স্যান্ডি হোলো ছাড়তে বাধ্য করবে।
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালাল কিমি।
পারছে না কোনমতে। পেটে খিদে না থাকলেও এক কথা ছিল। এখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে না পেরে শেষে কোন অঘটন ঘটিয়ে বসে কে জানে! চলে যাওয়াই ভাল।
আমি যাই, টনি, বলে আর একটা মুহূর্ত দাঁড়াল না সে। দ্রুত বারান্দা থেকে নেমে লম্বা লম্বা পায়ে হাঁটতে শুরু করল। কানে এল, ওর চলে যাওয়ার জন্যে বোনকে দায়ী করে বকাবকি শুরু করেছে টনি।
*
রাত দুপুরে ঘনঘন কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল মুসার। এতরাতে কে? আধো ঘুম নিয়ে বিছানা থেকে নামল সে। দরজা খুলতে চলল।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন পুলিশ অফিসার। মুসার নাম জানতে চাইল একজন।
মুসা।
পুরো নাম?
মুসা আমান।
আজ রাতে এনিড ক্যামেরনের সঙ্গে সৈকতে গিয়েছিলে?
হ্যাঁ, ডলে ডলে চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করল মুসা। কেন? কিছু হয়েছে নাকি?
কটার সময় শেষ দেখেছ ওকে?
এই….এগারোটা-সাড়ে এগারোটা হবে।
তোমার আব্বা আছেন বাসায়?
না, মাকে নিয়ে বেড়াতে গেছে হ্যাঁমারহেডে। বলে গেছে শনিবার নাগাদ আসবে। কেন, বাবাকে দরকার?
না, তোমাকেই দরকার।
পরস্পরের দিকে তাকাল দুই অফিসার। একজন পুরুষ। ছয় ফুটের বেশি লম্বা। মাংসপেশীর পাহাড় মনে হয়। দ্বিতীয়জন কঠোর চেহারার মহিলা। দুজনেই গম্ভীর।
অ্যানির কিছু হয়েছে? জানতে চাইল মুসা।
ওকে পাওয়া যাচ্ছে না, অফিসার জানাল।
কে খবর দিল আপনাদের?
ওর আম্মা।
তারমানে সত্যি সত্যি আম্মা আছে অ্যানির। ভ্যাম্পায়ার নয় সে।
কোথায় তাকে শেষ দেখেছ? জানতে চাইল মহিলা অফিসার।
সৈকতে।
সৈকতের কোনখানে?
শহরের কিনারে। একটা বালিয়াড়ির কাছে। কমিউনিটি থিয়েটার থেকে বেরিয়ে ওখানে হাঁটতে গিয়েছিলাম আমরা।
জায়গাটা আমাদের দেখাতে পারবে?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
কাপড় পরে তাহলে এসো একটু আমাদের সঙ্গে।
পেট্রলকারের পেছনে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে মুসা।? ভেসে ভেসে যেন সরে যাচ্ছে নির্জন, ঘুমন্ত শহরটা। খড়খড় করছে টু-ওয়ে রেডিওর স্পীকার। কথা হচ্ছে। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলছে অফিসাররা, বুঝতে পারল না সে।