ওর চকচকে বাদামী চোখের দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। কোমল, কেমন যেন পুরানো ধাচের চোখ। হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাচ্ছে ওর। ভ্যাম্পায়ারের বয়েসের কোন ঠিকঠিকানা থাকে না। কোন্ আমলের মানুষ অ্যানি!
এখান থেকে বেরিয়ে কোন কাজ আছে তোমার? জানতে চাইল অ্যানি।
নাহ। চলো না তাহলে হেঁটে আসি কোনখান থেকে। সৈকতে যাবে?
তা যাওয়া যায়, ভ্যাম্পায়ারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভেবে বুকের মধ্যে কাপুনি শুরু হয়ে গেল মুসার। কিন্তু অ্যানি কি সতি, ভ্যাম্পায়ার? বাইরে নির্জনতার মধ্যে না গেলে সেটা বোঝা যাবে না। প্রমাণ করতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। ভূতের সঙ্গেই বেরোতে হবে।
দাঁড়াও, আসছি, বলে বাথরূম সারতেই বোধহয় মঞ্চের পেছনের পর্দা। সরিয়ে ওপাশে চলে গেল অ্যানি।
বেশি মানুষের সঙ্গে জানাশোনা হবে, তত ভাল। ভ্যাম্পায়ারের খোঁজ পাওয়া সহজ হবে। কোনজন যে ভ্যাম্পায়ার, কাছাকাছি না এলে বোঝা যাবে না।
সীটের দিকে ফিরে দেখল রবিন আর কণিকা বেরিয়ে যাচ্ছে।
পেছনে এসে দাঁড়াল ডলি। বলল, কিছুক্ষণের মধ্যে কে কোন পার্টটা পাবে, ঘোষণা করবেন মিসেস রথরক।
তুমি যেটা চাইছ, পাবে বলে মনে হয়?
না পাওয়ার কোন কারণ আছে? চোখের পাতা সরু হয়ে এল ডলির।
না না, তা বলছি না, ডলির প্রতিক্রিয়া দেখে অবাক হলো মুসা। তুমি কি ভাবছ সেটা জানতে চাচ্ছিলাম। রাগার কিছু কিন্তু বলিনি।
সামলে নিল ডলি, পার্টটা আমিই পাব।
অভিনয় তেমন বুঝিটুঝি না। তবে আমার মনে হয়েছে ভাল অভিনয় করেছ তুমি।
চেহারা আবার স্বাভাবিক হয়ে এল ডলির। বাইরে যাবে? চলো না, ঘুরে আসি। বদ্ধ ঘরে ভাল লাগছে না।
তোমার সঙ্গে যেতে পারব না।
কেন? ঘাড় বাকিয়ে তাকাল ডলি।
ঘাবড়ে গেল মুসা। আবার রেগে যাবে না তো!
না, আর রাগল না ডলি। মুসার চোখের দিকে তাকাল। আঠার মত আটকে গেল যেন দৃষ্টি।
মুসার মনে হতে লাগল তাকে কোন অদ্ভুত জায়গায়, স্বপ্নের মধ্যে টেনে নিয়ে চলেছে মেয়েটা। নিচের অন্ধকার খাদের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে সে।
এমন লাগছে কেন! জোর করে চোখ সরিয়ে নিল।
অবাক হলো ডলি। সেই সঙ্গে হতাশ। অভিমানের সুরে বলল, আমার সঙ্গে যেতে পারবে না কেন?
অ্যানিকে কথা দিয়ে ফেলেছি-ওর সঙ্গে বেরোব।
হতাশা ছেয়ে দিল ডলির চেহারা।
ওর অবস্থা দেখে মায়া লাগল মুসার। তুমি যেতে চাও আগে বললে না কেন? তাহলে অ্যানিকে আর…
অ্যাটেনশন প্লীজ! জোরে জোরে বলতে লাগলেন মিসেস, রথরক। আমার কথা শোনো! নাটকের জন্যে যারা যারা সিলেক্টেড হয়েছ, তাদের নাম ঘোষণা করছি। সবাই তোমরা ভাল অভিনয় করেছ। এত ভাল যে, কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেব সেটা ঠিক করতেই বেকায়দায় পড়ে গেছি। সবাইকে নেয়ার মত এত চরিত্র আমাদের নাটকে নেই। তাই বাধ্য হয়ে কয়েকজনকে বাদ দিতে হয়েছে…
যারা বাদ পড়েছে তাদের দুঃখ ঘোচানোর জন্যে প্রচুর ভাল ভাল কথা বললেন তিনি। সান্ত্বনা দিলেন। শেষে নাম ঘোষণা করতে লাগলেন।
টনি, রবিন, মুসা তিনজনেই সুযোগ পেল। পেল কণিকা আর কিমি। অ্যানিকে মেইন রোলটা পেতে দেখে অবাক হলো না মুসা। ডলিকে দেয়া হলো একটা বড় চরিত্র। ডলি তাতে খুশি হতে পারল না মোটেও। অ্যানি যেটা পেয়েছে সেটা চেয়েছিল সে।
মুসা, রোলটা পেয়েই গেলাম শেষ পর্যন্ত! উল্লাসে ফেটে পড়ার উপক্রম হলো অ্যানির।
পাবে, সে তো জানা কথা। তোমার পাওয়ার ব্যাপারে একবিন্দুও সন্দেহ ছিল না আমার।
সত্যি বলছ?
মিথ্যে বলব কেন?
থ্যাংক ইউ, ঝলমলে হাসি উপহার দিল অ্যানি। চলো, বেরোই। নাকি আরও থাকবে?
না, আর কি? হয়েই তো গেল। টেস্ট দিলাম, চান্স পেলাম, ব্যস।
এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলল মুসা। ধরে রাখল, অ্যানির বেরোনোর জন্যে।
বাইরে বেরিয়ে আগে আগে হাঁটতে শুরু করল অ্যানি। মুসাও পা বাড়িয়েছে, খুট করে শব্দ হলো পেছনে ফিরে তাকাল। সাৎ করে একটা ছায়া সরে গেল দরজার কাছ থেকে। ক্ষণিকের জন্যে আলো পড়ল ছায়াটার। মুখে। ডলিকে চিনতে ভুল হলো না তার।
একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল ডলি। তারপর দড়াম করে লাগিয়ে দিল দরজাটা। রাগ দেখাল। মুসার সঙ্গে বেরোতে না পারার দুঃখ ভুলতে পারছে না।
কিছু করার নেই মুসার। অ্যানিকে কথা দিয়েছে আগে।
.
০৫.
সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে চাঁদের দিক মুখ তুলে তাকাল অ্যানি। জ্যোৎস্নায়। অনেক বেশি আকর্ষণীয় লাগছে ওকে।
মেয়ে ভ্যাম্পায়াররা যে সুন্দরী মেয়ের রূপ ধরে আসে, ভোলেনি মুসা। কিন্তু অ্যানিকে ভ্যাম্পায়ার ভাবতে ভাল লাগল না। তবে অসতর্কও হলো না। ভ্যাম্পায়াররা নানা ছলনা জানে। ওদের মায়ার জালে জড়ালে রিকি আর জিনার অবস্থা হতে দেরি হবে না তারও।
পানির কিনার দিয়ে হাঁটছে ওরা। নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। ডানে পাথরের জেটিতে আছড়ে পড়ছে ঢেউ।
সামনের দিকে হাত তুলে অ্যানি জিজ্ঞেস করল, ওরা কি তোমার বন্ধু?
পানিতে নেমে পাশাপাশি হাঁটছে রবিন আর কণিকা। ঢেউ আছড়ে পড়ছে ওদের পায়ে।
মেঘের আড়ালে চলে গেল চাঁদ। অন্ধকারে হারিয়ে গেল দুজন। আবার যখন বেরোল চাঁদ, আর দেখা গেল না ওদের।
অবাক হলো মুসা। এত তাড়াতাড়ি গেল কোথায় ওরা?
কয়েক মিনিট নীরবে হাঁটল মুসা আর অ্যানি। আবার মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে চাঁদ। অনবরত চলতে লাগল চাঁদের এই লুকোচুরি খেলা।