ওকে টেনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল ডলি।
ভুরু কুঁচকে তাকাল মুসা। চিন্তিত।
তর সইছে না। খিদেটা ডলির সত্যি খুব বেশি, বুঝতে পারল কণিকা।
যেতে চাইছে না মুসা। অস্বস্তি বোধ করছে।
মুচকি হাসল কণিকা। বুঝতে পারছে, মেয়েদের সঙ্গে সহজ হতে পারে ছেলেটা। ভাল বিপদে পড়েছে বেচারা। মেয়েমানুষের খপ্পর।
টনি মোটামুটি স্বাভাবিক। কিমি যখন ওর হাত ধরল, মুসার মত কুঁকড়ে গেল না। বরং হাসির জবাব দিল হাসি দিয়ে।
রবিনের সঙ্গী হলো কণিকা। রবিন টনির চেয়েও স্বাভাবিক। মুসার মত অস্বস্তি বোধ করছে না। সহজ ভঙ্গিতে কথা বলতে লাগল কণিকার সঙ্গে। মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কোন অসুবিধে হয় না তার।
চলো, হটি, মুসার হাত ধরে টানল আবার ডলি।
মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটতে লাগল ওরা। বীচ এমপোরিয়ামের উইন্ডোর সামনে দাঁড়াল কিমি। বিকিনিগুলো খুব সুন্দর।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসল ডলি, কিনবে নাকি?
নাহ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল কিমি, পয়সা নেই।
স্যাভি হেলোতে এই প্রথম এলে বুঝি? মুসাকে জিজ্ঞেস করল ডলি।
না, আরও এসেছি।
তাহলে তো তুমি সব জানো। গরমকালে নাকি এখানে অনেক লোক আসে, পার্টি-টার্টি, হই-চই হয় খুব?
হ্যাঁ, হয়। ভরে যায়। সৈকতে আগুন জ্বেলে কাবাব বানিয়ে খায়, আড্ডা দেয়, নাচাকোদা করে। পাগল হয়ে যায় যেন সব। বুড়োগুলোও ছেলেমানুষ। হয়ে যায়।
তাই নাকি! খুব মজা হবে এবার। খোলা জায়গার পার্টি আমার খুব ভাল লাগে। তোমরা সঙ্গে থাকলে আরও বেশি জমবে।
জবাব না দিয়ে হাঁটতে থাকল মুসা।
মনে মনে হাসছে কণিকা। মুসাকে আগ্রহী করতে পারছে না ডলি।
রবিনের দিকে তাকাল কণিকা। তুমি এসেছ আর?
মাথা নাড়ল রবিন, এসেছি।
কথা বলতে বলতে এগোল ওরা।
ডলি বার বার মুসাকে দল থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। মুসাও সরতে নারাজ।
আমি বাড়ি যাব! আচমকা তীক্ষ্ণস্বরে চেঁচিয়ে উঠল সিসি।
ফিরে তাকাল সবাই। ভুলেই গিয়েছিল যেন ওর কথা। এমনকি ওর ভাই টনিরও যেন মনে ছিল না।
এত তাড়াতাড়ি?
কেন, আম্মা বলে দিয়েছে না এগারোটার পর যেন আর না থাকি।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে কিমির দিকে তাকিয়ে উনি বলল, তোমরা এগোও। আমি চট করে ওকে বাড়িতে রেখে আসি। সিলেকশনের আগেই চলে আসব। সিসির দিকে তাকাল, চল! জলদি! আর যদি রাতে কখনও সঙ্গে আসতে চাস তো ভাল হবে না বলে দিলাম।
রোজ রোজ দুটো করে কোন আইসক্রীম আর একটা করে চকলেট যদি। দিস, আসতে চাইব না।
অত পাবি না। একটা আইসক্রীম, আর একদিন পর পর একটা করে চকলেট।
কি ভেবে তাতেই রাজি হয়ে গেল সিসি।
*
মুসা কোন কথা জিজ্ঞেস করছে না দেখে ডলিই আগ বাড়িয়ে বলল, নাটকের প্লটটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার। মেইন একটা চরিত্র যদি পাই…
জবাব দিল না মুসা।
থিয়েটারে পৌঁছে গেল ওরা।
মুসা আর রবিনকে বলল ডলি, তোমরা যাও। আমরা আসছি।
থিয়েটারের দরজার দিকে এগিয়ে গেল দুই গোয়েন্দা।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল ডলি। খিদেয় জ্বলে যাচ্ছে পেট। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার যে এত যন্ত্রণা, আগে জানলে কে আসত!
খবরদার! চট করে কণিকার দিকে তাকাল কিমি। চোখে সন্দেহ। বিশ্বাস করতে পারছে না এখনও ওদের নতুন সঙ্গীকে। আবার ফিরল ডলির দিকে। এসব কথা বোলো না। কে কোনখান থেকে শুনে ফেলবে, কাউন্ট ড্রাকুলার কানে চলে গেলে রক্ষা থাকবে না। ভ্যাম্পায়ার যখন হয়েই গেছি, মানুষের রক্ত খেয়ে ফেলেছি, এখন এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমাদের।..কি বলো, কণিকা?
মাথা ঝাঁকাল কণিকা। তা তো বটেই!
যাই বলো, ডলি বলল, ওই মুসাটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কি স্বাস্থ্য। অনেক রক্ত শরীরে। ওর গলায় দাঁত ফোঁটাতে পারলে… চুটকি বাজাল সে, আহ!
কিন্তু ও তোমাকে ভাল চোখে দেখছে বলে মনে হলো না, কণিকা। বলল।
তা ঠিক। অতিরিক্ত চালাক, ডলি বলল। সম্মোহনের অনেক চেষ্টা করেছি। চোখের দিকেই তাকাতে চায় না। এখানকার ভ্যাম্পায়ারের ব্যাপারে কিছু জানে নাকি কে জানে! জন আর লীলা মরার সময় কাউন্ট ড্রাকুলা এখানে ছিলেন না। তার ধারণা, ওদের মরার ব্যাপারে এখানকার কারও হাত থাকতে পারে।
মুসার কথা বলছ?
অন্য কেউও হতে পারে!
ভঙ্গিতে তো মনে হচ্ছে আমাকে সন্দেহ করছ! নাকি? তোমার সঙ্গে কিন্তু কাউন্টের পরিচয় হয়নি এখনও, ঘুরিয়ে জবাব দিল ডলি। কোথায় থাকো সেটাও জানি না আমরা…
কাউন্টের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা ছিল জনের। কিন্তু সে-ই তো নেই।…চলো, ভেতরে চলো। দেরি দেখলে মুসারা আবার অবাক হয়ে ভাববে আমাদের কি হলো।
থিয়েটারের দরজার দিকে পা বাড়াল কণিকা।
.
০৪.
স্টেজের কিনারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সব মুসা। তিরিশ-বত্রিশজন ছেলেমেয়ে আছে ঘরে। একসঙ্গে কথা বলছে সবাই। হই-চই, হাসাহাসি করছে।
কোনজন? ভাবছে সে। ওদের মধ্যে ভ্যাম্পায়ার কে? আছে কি কেউ?
সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল। সামনের সারির ওই চটপটে মেয়েটাই কি সারাদিন কফিনে শুয়ে কাটিয়ে রাতে বেরোয়? নাকি ওই ছেলে দুটো? চেঁচিয়ে, পরস্পরের পিঠে চাপড় মেরে উল্লাস করছে যারা?
ও নিশ্চিত, জন আর লীলাই শেষ নয়। ওদের দলে ভ্যাম্পায়ার আরও আছে। রিকি শরকে শেষ করেছে লীলা। জন দিচ্ছিল জিনাকে শেষ করে আরেকটু হলেই। অল্পের জন্যে বেঁচেছে জিনা।