জবাব দেয়ার আগেই রান্নাঘর থেকে ঢোকার দরজায় আরেকটা মূর্তিকে দেখতে পেল মুসা। কিশোর।
কি হলো, জবাব দিচ্ছ না কেন?
এই জন্যে, পেছন থেকে বলে উঠল কিশোর।
ঘুরে দাঁড়াতে গেল ড্রাকুলা। সময় দিল না কিশোর। নির্দ্বিধায় কাঠের হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারল লোকটার মাথায়।
এক আঘাতেই ড্রাকুলা কাত। হাতের পিস্তলটা মেঝেতে পড়ল খটাং করে। কাটা কলাগাছের মত টলে উঠে পড়ে যেতে শুরু করল লোকটা। হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেঝেতে। বেহুশ হয়ে গেছে।
ধরো ব্যাটাকে! ওর কফিনেই শুইয়ে ডালা লাগিয়ে বন্দি করি। তারপর পুলিশ আনতে যাব।
শব্দ শুনে অন্য দুটো কফিনের ডালাও খুলে গেছে। উঁকি দিল কিমি আর। ডলি। দৃশ্য দেখে হাঁ হয়ে গেল দুজনেই।
কঠোর কণ্ঠে আদেশ দিল কিশোর, চুপচাপ থাকো। নইলে বসের অবস্থা করে ছাড়ব। ভ্যাম্পায়ারগিরি ঘুচিয়ে দেব আজ। হাতের হাতুড়িটা তুলে নাচাল। মাথায় বাড়ি খাওয়ার ইচ্ছে আছে?
ঝট করে মাথা নিচু করে ফেলল ডলি। বোঝা গেল, ইচ্ছে নেই।
জিজ্ঞেস করল কিশোর, এ দ্বীপে আর কে কে আছে তোমাদের সঙ্গে?
কেউ না, জবাব দিল কিমি।
সত্যি বলছ?
সত্যি।
তাহলে কোথায় আছে?
বহু জায়গায়। কোটার নাম বলব?
সবগুলোরই বলতে হবে। পরে। দ্বীপে আর কেউ নেই তো?
না, মাথা নাড়ল কিমি।
থাকলে ওর মাথা ফাটানোর আগে তোমার মাথা ফাটাব, বলে দিলাম। হুমকি দিল কিশোর।
সত্যি নেই।
হু। শুয়ে পড়ো এবার। কোন রকম শয়তানির চেষ্টা করলে এটা ঢোকাব হৃৎপিণ্ডে, একটা গজাল দেখাল কিশোর। ভ্যাম্পায়ার-খেলা অনেক খেলেছ। অনেক নিরীহ মানুষকে খুন করেছ। রবিনের রক্ত খেয়েছ। তোমাদের খুন। করার জন্যে হাত নিশপিশ করছে আমার। সুযোগটা দিয়ো না।
বিশ্বাস করল ওরা। সুযোগ দিল না কিশোরকে। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে ভেতর থেকে ডালা নামিয়ে দিল।
সঙ্গে করে দড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। তিনটে কফিনের ডালা বাক্সের সঙ্গে পেঁচিয়ে বাঁধা হলো, যাতে ভেতর থেকে কোনমতেই বেরিয়ে আসতে না। পারে তিন ভ্যাম্পায়ার।
কাজ শেষ করে দুই হাত ঝাড়তে ঝাড়তে মুসার দিকে তাকাল কিশোর, যাও এবার, পুলিশ নিয়ে এসোগে। আমি এদের পাহারা দিচ্ছি।
যদি দলে আরও লোক থাকে? তোমার ওপর হামলা চালায়?
নেই। কিমি মিথ্যে বলেনি। ডলির মত অভিনয় জানে না ও। আর যদি থাকেও, মেঝে থেকে পিস্তলটা তুলে নিল কিশোর, কিছু করতে এলে গুলি খেয়ে মরবে। দেখামাত্র বুকে গুলি করব। কোন ঝুঁকি নেব না। হাতে পিস্তল আছে যখন, নেকড়ে এলেও ভয় নেই যাও যাও, দেরি কোরো না। ওই শয়তানগুলো আসার আগেই নৌকায় উঠে পড়োগে।
ঠিক আছে, যাচ্ছি। সাবধানে থেকো। আমি যাব, আর আসব।
একটা গজাল আর হাতুড়ি তুলে নিয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মুসা।