এগিয়ে আসতে আসতে দ্বিতীয় মেয়েটার দিকে তাকাল সে। এই মেয়েটার সোনালি, কোঁকড়া চুল। মুখের চামড়া মসৃণ, ফ্যাকাসে। হাঁটার সময় নাচে চুলগুলো।
খুব খিদে পেয়েছে, বলল সোনালি চুল মেয়েটা। আর সহ্য হয় না। কখন যে পাব কে জানে!
পাওয়া যাবে শীঘ্রি, দ্বিতীয় মেয়েটা বলল। লোকজন তো আর কম। নেই।
ইস, যা খিদে লেগেছে! আর সহ্য করতে পারছি না…
দেখা দেয়ার সময় হয়েছে, ভাবল বাদামী মেয়েটা। ছায়া থেকে বেরিয়ে এগিয়ে গেল অন্য মেয়ে দুটোর দিকে।
হাই! চোখ চকচক করে উঠল লাল-চুল মেয়েটার।
দুজনেই দৌড়ে আসতে শুরু করল।
ওই যে এসে গেছে খাবার, সঙ্গের মেয়েটাকে বলল লাল-চুল মেয়েটা। বেশিক্ষণ আর না খেয়ে থাকতে হবে না।
দাঁড়িয়ে গেল বাদামী মেয়েটা। তার দুই পাশে এসে দাঁড়াল মেয়ে দুটো। ঠোঁট ফাঁক হলো। শ্বদন্ত দেখা গেল।
লাল-চুল মেয়েটার তাড়াহুড়া বেশি। শিকারের গলার শিরায় দাঁতের চোখা মাথা ফুটিয়ে দিতে মুখ বাড়াল।
ধমকে উঠল বাদামী মেয়েটা, গাধা কোথাকার! নিজের দলের লোককে চিনতে পারো না?
দ্বিধায় পড়ে গেল মেয়ে দুটো। মুখ সরিয়ে নিল লাল-চুল মেয়েটা।
কয়েক দিন আগে আমিও তোমাদের একজন হয়ে গেছি, বাদামী মেয়েটা জানাল।
অ, হতাশ ভঙ্গিতে বলল লাল-চুল মেয়েটা।
পেটের খিদে চোখে ফুটেছে ওদের।
তোমার নাম কি? জিজ্ঞেস করল সোনালি-চুল মেয়েটা। দলে ঢুকিয়েছে কে?
আমি কণিকা। বাড়ি ইন্ডিয়ায়। জন ঢুকিয়েছে আমাকে।
ও, জন। বেচারা! আগুনে পুড়ে মরল শেষ পর্যন্ত। বস্ তো ওর জন্যে রোজই দুঃখ করে,। দলের সেরা এজেন্ট ছিলখ কতজনকে যে ঢুকিয়েছে কিন্তু তোমার নাম তো কখনও শুনিনি ওর মুখে?
এতজনকে ঢোকাল, কজনের নাম আর বলবে।
তা ঠিক। তা ছাড়া আমরা এসেছি দিন তিনেক হলো। গতবছরের পর আর জনের সঙ্গে দেখা হয়নি আমাদের। ওর সঙ্গে লীলাও মারা গেছে। ওদের মৃত্যুটা রহস্যময়। কি করে মারা গেছে কাউন্টও জানেন না। যে বাড়িটাতে ছিল ওরা, আগুন লেগে পুরো বাড়িটাই পুড়ে গেছে। কোন সূত্রই পাওয়া যায়নি।
তোমাদের নাম কি?
আমি কিমি, পরিচয় করিয়ে দিল সোনালি-চুল মেয়েটা। ও ডলি।
শ্বদন্ত দেখিয়ে হাসল ডলি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কণিকার দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে, কণিকা সত্যি কথা বলছে না মিথ্যে। জ্বলজ্বল করছে চোখ। তাতে রাজ্যের খিদে। কণিকাও চোখ সরাচ্ছে না ওর চোখ থেকে। হেসে নিজের শ্বদন্তও দেখিয়ে দিল।
এখানে দাঁড়িয়ে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছি আমরা, ডলি বলল। আমার রক্ত দরকার। খিদেয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। এক্ষুণি চলো।
হ্যাঁ, চলো, বলল কিমি।
রাস্তার সমতলে উঠে যাওয়া বালিয়াড়িটায় চড়ল ওরা।
বছরের এই সময়টায় আমার ভীষণ খারাপ লাগে, শুকনো গলায় বলল ডলি। খাবার নেই, কিছু নেই। শুধু রক্ত খেয়ে থাকতে হয়। মানুষকে পটিয়ে রক্ত জোগাড় করা যে কি কঠিন কাজ!
রাস্তায় উঠল ওরা। শহরের মেইন রোডের দিকে এগোল। সাইডওয়াক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেকে। দুজন তরুণ-তরুণী হাঁটছে, মাঝে একটা বছর চারেকের মেয়ে। দুদিক থেকে দুজনে হাত ধরে রেখেছে বাচ্চাটার। হার্ড রক, টি-শার্ট গায়ে দুটো মেয়ে হাঁটছে গা ঘেষাঘেঁষি করে। একজোড়া প্রৌঢ় দম্পতি হেঁটে যাচ্ছে দোকানগুলোর সামনে দিয়ে। দোকানের উইন্ডোর দিকে নজর। কিছু কিনবে বোধহয়।
ওদের কাউকে ধরা যায় কিনা ভাবছে ডলি, হাত চেপে ধরল কিমি, ওই দেখো! শিকার!
খানিক দূরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওদের সমবয়েসী তিনটে ছেলে। পেছন পেছন হাঁটছে সাত-আট বছরের একটা ছোট্ট মেয়ে।
সবচেয়ে লম্বা ছেলেটা নিগ্রো। পেশী দেখে বোঝা যায় নিয়মিত ব্যায়াম করে, অ্যাথলিট। দ্বিতীয় ছেলেটাও লম্বা। মাথায় খাটো করে ছাঁটা চুল। আর তৃতীয় ছেলেটা হালকা-পাতলা, গোলগাল চেহারা, বাদামী-চুল।
মাথা নেড়ে চুল ঝাঁকিয়ে, মৃদু হেসে ডলি বলল, ওদের পটানো যেতে পারে, কি বলো?
চলো, চেষ্টা করে দেখা যাক, বলল কিমি।
.
০৩.
ছেলেগুলোর দিকে এগোল তিন ভ্যাম্পায়ার।
কাছাকাছি এসে ডাকল কিমি, হাই।
ফিরে তাকাল ছেলেগুলো। মেয়েদের আসতে দেখে দাঁড়াল। বাদামী চুল ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, আমাদের বলছ?
অকারণেই খিলখিল করে হাসল কিমি, এখানে তোমরা ছাড়া আর কে আছে? বেড়াতে এসেছ বুঝি?
মোরগের মত ঘাড় কাত করে, লাল চুল নাচিয়ে হাসল ডলি। আমরাও বেড়াতে এসেছি। আমি লেবার ডে পর্যন্ত থাকব।
অ, হাত বাড়িয়ে দিল বাদামী-চুল ছেলেটা, আমি রবিন। রবিন। মিলফোর্ড।
কোন শহর থেকে এসেছ তোমরা?
রকি বীচ।
আমি হানিকম্ব থেকে।
শুনতে তো নামটা মিষ্টিই লাগছে। জায়গাটাও মিষ্টি নাকি?
আছে। মোটামুটি।
আমাদেরটাও মোটামুটি। খুব খারাপও না, খুব ভালও না।
সঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দিল রবিন। নিগ্রো ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল, ও মুসা আমান। আর এ হলো টনি হাওয়াই। ও সিসি। টনির বোন।
হাই, হালো, হাত মেলানো ইত্যাদি শেষ হলে কণিকা জিজ্ঞেস করল, যাচ্ছ কোথায় তোমরা?
শহরে, জবাব দিল রবিন। নাটকের জন্যে প্লেয়ার সিলেকশন করা হবে। আজ। টেস্ট দেব।
ও, ভালই হলো। আমরাও ওখানেই যাচ্ছি। চলো, একসঙ্গেই যাওয়া যাক।
মুসার বাহুর ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে দিল ডলি। শুধু শুধু হাসছে। এত দ্রুত আন্তরিক হতে চাওয়ার ব্যাপারটা মুসার কাছে স্বাভাবিক মনে হলো না। এখানে অবশ্য অপরিচিত সবাইকেই তার সন্দেহ।