সকালের রোদে চকচক করছে কণিকার কালো চুল। চোখের ওপর হাত এনে রোদ আড়াল করে জিজ্ঞেস করল, হয়েছে? তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছ?
মুসা ভেবেছিল রবিন রেগে উঠবে। কিন্তু উঠল না। বরং সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। বলল, আমার শরীরটা ভাল থাকলে আজই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম।
কথা বলার জন্যে মুখ খুলেও বন্ধ করে ফেলল মুসা। কথা খুঁজে পেল না।
আনমনে নিচের ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে দুজনের পাশ কাটিয়ে আবার বেসমেন্টে ফিরে চলল কণিকা। সিঁড়ির গোড়ায় নেমে ফিরে তাকিয়ে বলল, আমি যে ভ্যাম্পায়ার নই, আর কোন সন্দেহ আছে?
রবিন বলল, মুসা, তুমি বরং রকি বীচে ফিরে যাও…
না, যেতে হবে না, ক্লান্ত ভঙ্গিতে একটা টুলে বসে পড়ল কণিকা। বসো। কথা আছে।
মুসা আর রবিন যার যার আগের জায়গায় বসল।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না, গলায় জোর নেই মুসার। ধাক্কাটা হজম করতে পারেনি এখনও। ভুলটা কোথায় করলাম?
ভুলটা তোমার মগজে, রবিন বলল। গাধার মত তোমার কথা শুনতে গেছিলাম! কিছু মনে কোরো না, কণিকা। আমি দুঃখিত। ও আমাকে এমন করে বোঝাতে লাগল…
ভুল করেনি ও, রবিনকে অবাক করে দিয়ে বলল কণিকা। ভ্যাম্পায়ার এখানে সত্যি আছে। সেজন্যেই এখানে এসেছি আমি। ওগুলোর অত্যাচার বন্ধ করতে।
কণিকা… তাকিয়ে আছে মুসা। তুমি..
মুচকি হাসল কণিকা। হাত বাড়িয়ে চেপে ধরল কালো চুল। টান দিয়ে খুলে আনল। বেরিয়ে পড়ল কোকড়া কালো চুল। এক এক করে প্লাস্টিকের নকল নাক, নকল দাঁত, গালে লাগানো রবারের আলগা চামড়া, গালের ভেতর দিকে লাগানো প্যাড় খুলে নিয়ে রাখল পাশের একটা বাক্সের ওপর। হাসিমুখে তাকাল দুই সহকারীর দিকে।
কিশোর! একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল মুসা আর রবিন।
আস্তে! চট করে দরজার দিকে চোখ চলে গেল কিশোরের। মেয়েলী কণ্ঠস্বর আর নেই। তার স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, কেউ শুনে ফেলবে! মুসার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, তা শেষ দিকের অভিনয়টুকু কেমন লাগল?
হাঁ করে তাকিয়ে আছে মুসা। কথা নেই মুখে।
অভিনয় কিশোরের জন্মগত ক্ষমতা। ছদ্মবেশ নেয়ার ক্ষমতাও অসাধারণ। গ্রীনহিলসে থাকতে বহুবার এর প্রমাণ পেয়েছে ওরা। পুলিশম্যান ফগর্যাম্পারকটকে কত যে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। ওকে এ রকম ছদ্মবেশ নিতে দেখে যত না অবাক হলো, তার চেয়ে বেশি হলো এই বেশে ওকে স্যান্ডি হোলোতে দেখে।
তোমার না রাশেদ চাচার সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা? অবশেষে কথা খুঁজে পেল মুসা।
ছিল, কিন্তু যাইনি।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কেন?
রিকির মৃত্যুটা ভাবিয়ে তুলেছিল আমাকে। তার ওপর দেখলাম জিনার অবস্থা। তোমার মুখে সব শুনেও ভ্যাম্পায়ারের কথা বিশ্বাস করিনি। তবে বুঝতে পারছিলাম রহস্যময় কিছু ঘটছে এখানে। একটা কথা মনে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে পুরানো পত্রিকা ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। শিওর হয়ে গেলাম, আমার ধারণাই ঠিক হবে।… তোমাদের না জানিয়ে ছদ্মবেশে আসার কারণ, ভ্যাম্পায়ারের নজরে পড়তে চাইনি। বরং আমি ওদের খুঁজে বের করে ওদের দলে মিশে যেতে চেয়েছিলাম…
কিন্তু আমাদের জানিয়ে এলে কি অসুবিধে হত? মুসা বলল, আমরা না চেনার ভান করতাম।
পারতে না। স্বাভাবিক আচরণ করতে পারতে না কোনমতেই। এতটা বড় অভিনেতা তোমরা নও। আমি চাচ্ছিলাম, তুমি অন্তত আমাকে সন্দেহ করো। ভ্যাম্পায়ার ভাব। তাহলে ভ্যাম্পায়াররা আর আমাকে সন্দেহ করবে না। কারণ জন আর লীলার মৃত্যুর ব্যাপারে তোমাকে সন্দেহ করবে ওরা, বুঝতে পেরেছিলাম। কার কার সঙ্গে তোমার খাতির, জেনে যেত সহজেই। ওদের সন্দেহের আড়ালে থেকে কাজ করতে চেয়েছিলাম আমি।
সফল হয়েছ?
তা বলতে পারো।
তারমানে তুমি বলতে চাইছ ভ্যাম্পায়ার সত্যি সত্যি আছে এখানে। রবিনের কণ্ঠে অবিশ্বাস।
কেন, মুচকি হাসল কিশোর, আমাকেও মুসার মত পাগল মনে হচ্ছে। নাকি? তারপর সিরিয়াস হয়ে গেল। হ্যাঁ, ভ্যাম্পায়ার সত্যি সত্যি আছে। এখানে। ওগুলোর শয়তানী বন্ধ করতে না পারলে আরও কত মানুষকে যে খুন করবে ওরা, তার কোন ঠিকঠিকানা নেই। রক্তের নেশায়, বিশেষ করে ক্ষমতার নেশায় ওরা উন্মাদ। ওরা আমাকে ওদের দলের মনে করেছে। দুবার সন্দেহ করে ধরে ফেলেছিল প্রায়, অল্পের জন্যে বেঁচে গেছি। ইমি আর অ্যানিকে ওরাই খুন করেছে। মিসেস রথরককেও। প্রথম দুজন খুন হওয়ার আগে কিছু জানতে পারিনি। কিন্তু মিসেস রথরকের ব্যাপারটা আঁচ করে ফেলেছিলাম। যখন গেলাম, দেরি হয়ে গেছে। বাঁচাতে আর পারলাম না। অল্পের জন্যে।
কারা করেছে এ কাজ? রাগে কাঁপছে মুসা। রিকির লাশটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। ওর নিরীহ, লাজুক হাসিটা স্পষ্ট দেখতে পেল।
কিমি আর ডলি।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। বুকের মধ্যে দাপাতে শুরু করেছে। হৃৎপিণ্ডটা। ডলি!
বসো। মাথা ঠাণ্ডা করো। কিমি আর ডলি দুজনেই ভ্যাম্পায়ার। আমাকে সন্দেহ করলে, আর ডলিকে চিনতে পারলে না?
আনমনে মাথা নাড়তে নাড়তে বিড়বিড় করল মুসা, ডলি! কিমি।
রক্তের নেশায়, খিদেয় পাগল হয়ে গিয়েছিল দুজনে। ইমি আর অ্যানিকে সৈকতে একা পেয়ে রক্ত শুষে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলেছিল। হুঁশ ছিল না যে মরে যাবে। কিংবা খিদের ঠেলায়, কেয়ারই করেনি। একই কাণ্ড করেছে মিসেস রথরকের বেলায়ও।