হ্যাঁ, কোনমতে দায়সারা জবাব দিল মুসা। কণিকাকে দূরে চলে যাওয়ার সময় দিল। তারপর বলল, আমাদের কথা শুনে ফেলেনি তো?
ফেললে আর কি করব! তবে কোনভাবেই যেন ও অপমানিত না হয়, সে-খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।
*
ছিলে কোথায় তুমি? পরদিন রাতে সৈকতের পার্টিতে এলে মুসাকে জিজ্ঞেস করল রবিন। খাবার তো সব শেষ।
হোকগে শেষ। বারগার খেয়ে এসেছি।
হাই, মুসা, হাত নাড়ল কণিকা। আরও অনেকগুলো ছেলেমেয়ের সঙ্গে রবিনের পাশে বসেছে সে।
মধ্যরাত পার হয়ে গেছে। সারা সৈকত জুড়েই চলছে বীচ পার্টি। কথা রেখেছে রবিন। কণিকার সঙ্গে একা হয়নি একটিবারের জন্যেও।
চোখ বুলিয়ে চারপাশটা দেখল মুসা। হুল্লোড় করছে ছেলেমেয়েরা। সোডার ক্যান ছুঁড়ে মারছে এর ওর গায়ে। খালি ক্যান দিয়ে একটা পিরামিড বানানো হয়েছে। উচ্চতা হবে ছয় ফুট। ক্রমেই আরও উঁচু হচ্ছে ওটা। ভলিবল খেলার চেষ্টা করছে কয়েকজন, অন্ধকারে জ্বলে এ রকম বল দিয়ে। বাতাসে কয়লার ধোয়া আর সাগর থেকে ধরা তাজা মাছের কাবাবের সুগন্ধ।
কণিকার দিকে তাকাল সে।
আজকের রাতটাই তোমার শেষ রাত কণিকা!
রবিনের রক্ত আর খেতে পারবে না তুমি! কারোর রক্তই পাবে না!
ওর প্ল্যানটা হলো, রবিনের সঙ্গে কণিকাকে কোন একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে আটকে ফেলবে। বসিয়ে রাখবে সকাল পর্যন্ত। সূর্য ওঠার আগে কোনমতেই বেরোতে দেবে না।
সাগরের ওপরের আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শোনা গেল বজ্রের গুডুডু চিমনি দিয়ে ভলকে ভলকে বেরোনো ধোয়ার মত কোথা থেকে কালো মেঘ এসে ছেয়ে ফেলল রাতের আকাশ।
বৃষ্টি! চমৎকার! খুশি হলো মুসা। বৃষ্টি এলে ওর প্ল্যানমত কাজ করতে সুবিধে হবে। ঘরে ঢুকতে বাধ্য হবে কণিকা। আর একবার ঢুকলো কোনমতেই ওকে সকালে সূর্য ওঠার আগে বেরোতে দেয়া হবে না।
ডলি এল এই সময়। টনি আর রবিনের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল। ওদের কথা শুনতে লাগল।
বৃষ্টি! আহ! আসে না কেন এখনও?
মুসার পাশে বসে পড়ল ডলি। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, চলো, সৈকতের ওদিক থেকে হেঁটে আসি।
না। বসো। এখন আমার হাঁটতে ইচ্ছে করছে না, মুসা বলল। আমি এখন সবার সঙ্গেই থাকতে চাই।
রবিনের কাছ থেকে কিছুতেই দূরে সরা চলবে না এখন। সুযোগ দিলেই ভুলিয়েভালিয়ে তুলে নিয়ে যাবে ওকে কণিকা। আর গেলেই সর্বনাশ ভ্যাম্পায়ারের সম্মোহন বেশিক্ষণ এড়াতে পারবে না রবিন।
মিনতি ভরা চোখে মুসার দিকে তাকিয়ে আছে ডলি! জোরে নিঃশ্বাস ফেলল।
হাঁটতে যেতে রাজি না হওয়ায় ও এত দুঃখ পেল কেন বুঝতে পারল না মুসা। সবার সামনে অপমান বোধ করল নাকি?
দূরে আবার গুড়গুড় শব্দ। আবার বজ্রপাত।
নীচে নেমে আসছে কালো মেঘ।
এসো বৃষ্টি। আরও তাড়াতাড়ি। প্লীজ।
কিন্তু মুসার অনুরোধে কান দিল না বৃষ্টি। দূরেই রইল বিদ্যুৎ চমকানো, দূরেই রইল বজ্রের গর্জন।
ভোররাত তিনটের দিকে পার্টিটা হয়ে গেল একেবারে প্রাগৈতিহাসিক। বুনো উন্মাদনায় মেতে উঠল সবাই। হই-হুঁল্লোড়, নাচাকোদা, যার যা ইচ্ছে চালিয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে খুনের কথাটা ভুলতে চাইছে সবাই, ডলি বলল।
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
মুসা, এবার তো হাঁটতে যেতে পারি আমরা? সারারাত এক জায়গায় বসে থাকার ইচ্ছেটা আজ তোমার কেন হলো, বুঝতে পারছি না।
কি জবাব দেবে ভাবছে মুসা, এই সময় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল আকাশ গুড়গুড় করে উঠল মাথার ওপর। চমকে ওপর দিকে তাকাতেই আকাশের এমাথা ওমাথা চিরে দিয়ে গেল বিদ্যুতের শিখা। পরক্ষণে বজ্রপাতের বিকট শব্দ।
মুহত পরেই অঝোরে নামল বৃষ্টি।
লাফ দিয়ে উঠে হাসাহাসি, চেঁচামেচি করতে করতে দৌড় দিল ছেলেমেয়ের দল। আর বাইরে থাকা যাবে না। এখন ঘর দরকার।
মুসা। চিৎকার করে উঠল ডলি, এদিকে! একদল ছেলেমেয়ের সঙ্গে মেইন স্ট্রাটের দিকে ছুটল সে।
চমৎকার!
রবিনের দিকে ফিরে বলল মুসা, শুরু করো।
ইঙ্গিতটা বুঝতে পারল রবিন। গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল। কণিকার দিকে ফিরে বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে চিৎকার করে বলল, এসো, কণিকা। থিয়েটারটা সবচেয়ে কাছে। ওখানেই যাব।
থিয়েটারের দিকে দৌড় দিল দুজনে। পেছনে ছুটল মুসা। পাথরের কুচির মত গায়ে এসে আঘাত হানছে বৃষ্টির ফোঁটা। বাতাসে ঝাঁপটা দিয়ে এনে এত জোরে চোখে ফেলছে, চোখ মেলে রাখা কঠিন। কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকাল। গুড। কেউ নেই।
রবিনের পাশ কাটিয়ে গিয়ে একটানে থিয়েটারের দরজাটা খুলে ফেলল
হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ল রবিন আর কণিকা। মাথার ওপরে বিদ্যুৎ চমকাল। থরথর করে বাড়িটাকে কাঁপিয়ে দিল বজ্রপাতের শব্দ।
লবিতে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাপাতে লাগল ওরা।
বাপরে বাপ! হঠাৎ করে কি নামাটাই নামল!কণিকা বলল। ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছি।
হঠাৎ করে আর কোথায়। অনেকক্ষণ থেকেই তো গর্জাচ্ছে। মেঝেতে পা হকে জুতোয় ঢুকে যাওয়া পানি বের করতে লাগল রবিন।
দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে ওর। দেখতে পাচ্ছে মুসা। দুর্বল শরীরে এ ভাবে দৌড়ানোটা কঠিন হয়ে গেছে ওর জন্যে।
চলো, বেসমেন্টে ঢুকে বসে থাকি, মুসা বলল। ওখানটায় গরম পাব। এখানে ঠাণ্ডা।
বেসমেন্টে নামার দরজায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। থিয়েটারের লোক ছাড়া অন্য কারও ঢোকা নিষেধ। কিন্তু তালা নেই। সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল মুসা। এত রাতে আর কে দেখতে আসবে। নিষেধ অমান্য করে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল সে। রইল সুবার পেছনে। দরজাটা লাগিয়ে দিল।