মেজাজ খারাপ করে একটা গোল পাথর তুলে নিয়ে পানিতে ছুঁড়ে মারল মুসা। একটা ঢেউ তখন তীরে আছড়ে পড়ে ভাঙছে। তার মাথায় পড়ল পাথর। পানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে ব্যাঙের মত কয়েকটা লাফ দিয়ে কিছুদূর গিয়ে তারপর ডুবল।
মুসার মত মারার চেষ্টা করল টনি। হলো না। ডুবে গেল। বলল, কি করে মারো তুমি? তোমারটা লাফায় আর আমারটা ডুবে যায়?
মারার কায়দা আছে, জবাব দিল মুসা।
রবিন হাসল। মুসার মনে হলো, জোর করা হাসি। আজকাল আর হাসি আসে না ওদের। তিন তিনটে মানুষ খুন হওয়ার পর–বিশেষ করে পরিচিত আর বন্ধুজন, হাসি থাকার কথা নয়।
সৈকতে চলাফেরা সত্যি বন্ধ করে দেবে? বলল রবিন।
তাহলে আর এখানে থেকে লাভটা কি হবে আমাদের, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল টনি। বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভাল।
পুলিশও সেটাই চায়, মুসা বলল।
কিন্তু আমার মোটেও যেতে ইচ্ছে করছে না। আবার সেই একঘেয়ে পরিবেশ, কাজ নেই কর্ম নেই, সময় কাটতে চাইবে নাঃ নাহ, সৈকত বন্ধ করে দিলেও আমি যাচ্ছি না। সিসিকে নিয়ে আব্বা-আম্মা চলে গেলেও আমি থেকে যাব।
থেকে কি করবে? সৈকতটাই এখানে আসল। আর তো তেমন কোন জায়গা নেই। এখানে যা কিছু আনন্দের, সব এই সৈকতকে ঘিরে।
ঘড়ি দেখল টনি। কিমি অপেক্ষা করবে বীচ এমপোরিয়ামে। আমি যাই। পরে কথা বলব তোমাদের সঙ্গে।
সৈকত ধরে হেঁটে যাওয়া টনিকে যতক্ষণ চোখে পড়ল, তাকিয়ে রইল মুসা। তারপর ফিরল রবিনের দিকে। কণিকা কি তোমাকে বলেছে, মিসেস রথরকের গলায় দাঁতের দাগ ছিল?
জবাব না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল রবিন। হাঁটতে শুরু করল।
ছাড়ল না মুসা। পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আমি দেখেছি। কণিকা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি?
না। থাক না ওসব কথা।
রবিনের হাত চেপে ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের দিকে ফেবাল মুসা, শোনো, কণিকা যে ভ্যাম্পায়ার, এটা আমাকে প্রমাণ করতে দাও নইলে তোমাকেও ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ছাড়বে খুব শীঘ্রি। আমি প্রমাণ করতে পারব।
ওহ, মুসা, প্লীজ! গুঙিয়ে উঠল রবিন, আমাকে রেহাই দাও।
রবিনের কথা কানেই তুলল না মুসা, তুমি দুর্বল কেন..
ফ্লু কিংবা অন্য কোন ভাইরাসে ধরেছে।
তাহলে তোমার গলায় দাগ এল কোত্থেকে? পোকার কামড় হলে চলে। যেত। ভ্যাম্পায়ারের হলে যাবে না এত সহজে।
আবার গুঙিয়ে উঠল ররিন।
প্রমাণ করতে পারলে তো বিশ্বাস করবে আমাকে? তোমাকে অনুরোধ করছি, আমাকে একটা সুযোগ দাও, কোনমতেই হাল ছাড়ল না মুসা। যদি না পারি এ ব্যাপারে আর টু শব্দ করব না কখনও, কথা দিলাম। কণিকাকে আর সন্দেহ করব না।
বেশ, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করল রবিন, আমি রাজি। বুঝতে পারছি, আমি তোমাকে সুযোগ না দিলে আমাকে রেহাই দেবে না তুমি। তবে তোমার ধারণা যে ভুল হবে, এখনই আমি লিখে দিতে পারি।
যাক, খানিকটা এগোনো তাহলে গেল! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মুসা।
রাজি তো হলাম, কি করতে চাও এখন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
প্রথমেই তোমাকে কথা দিতে হবে, প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কণিকার সঙ্গে একা কোথাও যাবে না।
এটা কোন কথা হলো?
হলো। তুমি যেহেতু প্রমাণ চাও, আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে। নইলে প্রমাণ করব কি করে? রবিন, শোনো, কোন মানুষকে যদি তিনবার ভ্যাম্পায়ারে কামড়ায়, সেই মানুষটাও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়। জীবন্মত অবস্থার ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দেয়ার একটাই উপায় থাকে তখন, বুকে কাঠের গজাল মেরে…
হয়েছে, হয়েছে, তাড়াতাড়ি দুই হাত তুলে মুসাকে থামাল রবিন। যাব না কোথাও কণিকার সঙ্গে।
একা দেখাও করবে না ওর সঙ্গে। আশেপাশে আর কেউ আছে কিনা। শিওর হয়ে নেবে।
বুঝলাম! আর…
রবিন, আমি ইয়ার্কি মারছি না!
সে তো দেখতেই পাচ্ছি। ঠিক আছে, যা বলছ করব।
কথা দিচ্ছ?
দিচ্ছি। এখন বলো, তোমার উদ্দেশ্যটা কি? কি করতে চাও?
খুব সহজ। কি করলে ভ্যাম্পায়ার ধ্বংস হয়?
কণিকার বুকে কাঠের গজাল ঢোকাতে পারব না আমি!
ঢোকাতে বলাও হচ্ছে না। তারচেয়ে সহজেই সম্ভব। গজাল ছাড়া অন্য কিসে ভ্যাম্পায়ার মরে, বলো তো?
জানি না।
রোদ। সূর্যের আলো।
তোমার মাথাটা পুরোই গেছে!
রবিনের কথা হাত নেড়ে ঝেড়ে ফেলে দিল মুসা। কি করে মারবে ভ্যাম্পায়ারকে বোঝাতে লাগল, এই সময় পেছনে শব্দ শুনে থেমে গেল। ফিরে তাকিয়ে দেখে কণিকা।
স্থির হয়ে গেল মুসা। কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে ও? কতখানি শুনেছে?
.
১৭.
কি ব্যাপার? হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল কণিকা, কি আলোচনা করছিলে। তোমরা? আমাকে দেখে থেমে গেলে কেন?
কণিকার মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমানের চেষ্টা করল মুসা, ওদের পরিকল্পনার কথা কতখানি জেনেছে মেয়েটা।
রবিনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল কণিকা। এমন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন তোমরা? হাঁটবে, না অন্য কিছু করবে?
মুসার দিকে তাকাল রবিন। কণিকার দিকে ফিরে বলল, আমি যেতে পারব না। শরীর ভীষণ দুর্বল।
আমাকেও বাড়ি যেতে হবে, তাড়াতাড়ি বলল মুসা।
বেশ, যাও, কণিকা বলল। কাল দেখা হবে। মেইন স্ট্রীটের দিকে হাঁটতে শুরু করল সে। কয়েক পা গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল, ওহহো, ভুলে গিয়েছিলাম। কাল সন্ধ্যায় সৈকতে একটা বড় পার্টি হবে। সবাই আসবে। তোমাদেরও দাওয়াত দিতে বলে দিয়েছে।
তাই নাকি, খুশি হয়ে রবিন বলল, খুব ভাল খবর শোনালে।
তাহলে কাল ওই সময় দেখা হবে, কণিকা বলল।