কেন, কুয়াশা ছিল কিনা মনে করতে পারছ না? জিজ্ঞেস করল মুসা।
পারছি। তবে অস্পষ্ট। সবই যেন ঘোরের মধ্যে ঘটেছে। কিংবা স্বপ্নের মধ্যে।
হবেই এ রকম–জানা আছে মুসার। ভ্যাম্পায়ারের মায়াজালে পড়লে এইই হয়। সব কিছু ভুলিয়ে দেয় ওরা। সম্মোহন করে। চোখে ঘোর লাগায়। তারপর ওই ঘোরের মধ্যে ধীরে সুস্থে ওদের কাজ সারে।
কেন ওরকম লেগেছে জানো? ভ্যাম্পায়ার তোমাকে সম্মোহন করেছে। বলে।
নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল রবিন, আবার সেই ভ্যাম্পায়ার!
ভ্যাম্পায়ারেই যখন করছে এ সব, আবার সেই ভ্যাম্পায়ারই তো হবে। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি তোমাকে প্রমাণ। আমার কথা বিশ্বাস না করে আর পারবে না।– শার্টের কলার চেপে ধরে এক হ্যাঁচকা টানে ওপরের বোতামটা ছিঁড়ে ফেলল মুসা। কলারটা নামিয়ে দিল নিচের দিকে।
আরে, আরে, কি করছ! চিৎকার করে উঠল রবিন।
এই দেখো! মুসাও চিৎকার করে উঠল। জানতাম, থাকবেই!
রবিনের গলার নিচের দিকে দুটো ছোট ছোট ফুটোর দাগ। কালচে বেগুনি হয়ে আছে।
দেখো এখন! দাগগুলো দেখো ভাল করে! টানতে টানতে রবিনকে আয়নার কাছে নিয়ে এল মুসা।
কি হবে দেখলে?
দেখোই না।
কি দেখব? তুমি কি বলতে চাও বুঝতে পারছি না।
কামড়ের দাগ।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। তুমি বলতে চাইছ ভ্যাম্পায়ারের কামড়?।
তো আর কিসের? এমন করে আর কে ফুটো করবে?
পোকার কামড়! অধৈর্য হয়ে চেঁচিয়ে উঠল রবিন, মুসা, তোমার পাগলামি থামাও! ছুটিতে এসে অসুস্থ হওয়াটাই একটা জঘন্য ব্যাপার। তার। ওপর তোমার পাগলামির অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না।
ভুলে যেয়ো না, ছুটিতে বেড়াতে আসোনি তুমি। জোর করে তোমাকে ধরে এনেছি আমি। ভ্যাম্পায়ার রহস্যের তদন্ত করতে। সেটা করছ না। উল্টো আমার কাজে বাধা দিচ্ছ। তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। ভ্যাম্পায়ার তোমার মাথাটা গড়বড় করে দিয়েছে। তবে তোমাকে আমি মরতে দেব না। রিকির মত। দেরি হওয়ার আগেই যা হোক একটা কিছু করব।
রিকি পানিতে ডুবে মরেছে। রাতের বেলা ভাটার সময় আমি পানিতেও নামব না, ঢেউয়ে ভাসিয়েও নিতে পারবে না। অতএব মরব না। ভয় নেই।
রিকিকে ঢেউয়ে ভাসিয়ে নেয়নি, রবিন, বিশ্বাস করো আমার কথা! রক্ত খেয়ে ওকে শুষে মেরে ফেলেছিল ভ্যাম্পায়ারে। লাশটা পানিতে ফেলে দিয়েছিল। কণিকা তোমাকে সম্মোহন করে তোমার মাথাটা ঘোলাটে করে। দিয়েছে, তাই স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারছ না। গলায় দাগ দেখেও তাই পোকার কামড় ভাবছ।
মুসার দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল রবিন। কণিকাকে তুমি ভ্যাম্পায়ার ভাবছ? তুমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছ, মুসা। নইলে ওর মত ভাল মেয়েকে…
রবিন, থামিয়ে দিল ওকে মুসা। কথা আজ শোনাতেই হবে রবিনকে। জোর করে হলেও। আমার কথা শোনো। কণিকা যে ভ্যাম্পায়ার, কোন সন্দেহই নেই আমার তাতে। রক্ত শুষে খেয়ে যাওয়ার সময় তার দাঁত আর মুখ থেকে তোমার রক্তে বিষ ঢুকে যায়। সেই বিষ তোমাকে অসুস্থ করে রেখেছে। এত দুর্বল লাগে সেজন্যেই। জিনার ব্যাপারে ডাক্তার কি বলেছে, ভুলে গেছ? বলেছে, রক্তে বিষ ঢুকেছে। তোমাকে এ ভাবে চলতে দিলে শেষমেষ তোমার কি হবে জানো? মারা যাবে। আর ভ্যাম্পায়ারের হাতে মারা পড়লে তুমি নিজেও ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে। জীবত। মানুষের রক্ত ছাড়া আর তখন চলবে না তোমার…
উফ, কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে! অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগল রবিন। মুসা, তোমার দোহাই লাগে, তুমি যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
রবিন! মুসাও চিৎকার করে উঠল, কেন তোমরা শুরুতেই আমার কথা বিশ্বাস করো না! কি করলে বিশ্বাস করবে? কি করে বোঝাব তোমাকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
মুসা, তুমি যাও। ঘুম না এলে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুম দাওগে। আমি একটু ভাল হলেই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব…
রাগে, দুঃখে, হতাশায় কেঁদে ফেলার উপক্রম হলো মুসার। ফোঁস করে। নিঃশ্বাস ফেলে জোরে জোরে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, পারলাম না, রবিন! কিন্তু আমি চেষ্টা করেছিলাম…
এক মুহূর্তও আর দাঁড়াল না সে। ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। নিজেকে বোঝাল, হাল ছাড়বে না কোনমতেই। জিনার বেলায়ও ছাড়েনি। ওকে বাঁচিয়েছে। আগে জানা থাকলে রিকিকেও মরতে দিত না। রবিনকেও বাঁচাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রমাণ করে ছাড়বে, সে পাগল নয়, তার সন্দেহই ঠিক।
সিঁড়ি বেয়ে নামতেই দেখল, হলে ঢুকছে কণিকা। মুসাকে দেখে হেসে হাত তুলল, হাই, মুসা।
কটমট করে তাকাল মুসা।
কণিকা হাসল।
তুমি কোত্থেকে এলে? কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মুসা।
সৈকত থেকে। পার্টি হচ্ছে। দাওয়াত দিয়েছে আমাদেরকে। রবিনকে নিতে এলাম।
ও যাবে না। শরীর ভীষণ খারাপ।
তাহলে তুমিই চলো। যাবে?
যাব, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল মুসা। রবিন আজ গেলে আর বাঁচবে না। রিকির মতই কাল তার লাশ পাওয়া যাবে সাগরে। ওর বদলে সে নিজে গেলে রবিন বাঁচবে। আর কণিকাও তার কিছু করতে পারবে না।
চলো, মুসার হাত ধরে টান দিল কণিকা। সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে আমার।
.
১৪.
পরদিন সন্ধ্যা।
মুসাকে দেখেই সরে পড়তে চাইল রবিন।
কিন্তু মুসা নাছোড়বান্দা।
শেষে প্রায় হাতজোড় করার মত করে রবিন বলল, দোহাই তোমার, আমার সঙ্গে কথা বোলো না। আর যদি বলোই, তো শুধু নাটকের কথা বলো। তোমার ওই ভ্যাম্পায়ারের গল্প শুনতে শুনতে কান পচে গেছে আমার।