এই না বললে প্রিন্সেসে যাবে?
বলেছি। রবিন বাড়ি যেতে চাইবে, জানতাম না। তোমরাও চলে যেতে পারো। আজ আর প্রিন্সেসে যাওয়া হবে না।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি, কণিকার মতই হতাশ মনে হলো ডলিকেও।
মুসার দেখাদেখি টনিও যদি মত পাল্টায়, এই ভয়ে তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে টান দিল কিমি, চলো, ওরা না গেলে নাই। আমরাই যাই।
মাথা ঝাঁকিয়ে, মুসা আর রবিনকে পরে দেখা হবে বলে কিমির হাত ধরে বেরিয়ে গেল টনি।
একা যেতে যেন ভাল লাগছে না কণিকার। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পাশ থেকে বলে উঠল একটা কণ্ঠ, কি ব্যাপার, একা নাকি?
ফিরে তাকাল সবাই। মুসা দেখল, সেই তিল-পড়া ছেলেটা।
কণিকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ছেলেটা। হেসে বলল, আমি ইমি। কার্নিভলে যেতে ইচ্ছে করছে। একা একা যেতে ভাল লাগছে না। একজন সঙ্গী পেলে যেতাম। ভয় নেই, খেলাধুলার খরচা সব আমিই দেব।
কি ভেবে রাজি হয়ে গেল কণিকা। রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে, তুমি বাড়ি যাও। আমি এর সঙ্গে চলে যাচ্ছি।
হা-না কিছু বলল না রবিন। বলার শক্তিও যেন নেই।
ইমির সঙ্গে বেরিয়ে গেল কণিকা।
রবিনের দিকে তাকাল মুসা, এসো।
সারাটা পথ ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে এল রবিন। উঁচু-নিচু জায়গাগুলোতে তাকে ধরে ধরে পার করল মুসা।
বোর্ডিং হাউসের গেটের কাছে এসে রবিন বলল, থাক, আর আসতে হবে না। যাও এখন। কাল দেখা হবে। থ্যাংক ইউ।
সামান্য উসখুস করে মুসা বলল, রবিন?
ঘুরে দাঁড়াল রবিন, কি?
রবিন, সাবধানে থেকো।
হাসল রবিন। বাড়ির বারান্দা থেকে এসে পড়া আলোয় মলিন দেখাল। হাসিটা। দেখো, রোগ হওয়াটা কারও হাতে নয়। সাবধানেই তো থাকি…
আমি সেকথা বলছি না…
তাহলে? …ও, ভ্যাম্পায়ার। তোমার মাথা থেকে এখনও গেল না সেটা। কই, হপ্তা তো পেরিয়ে গেল এখানে এসেছি। ভ্যাম্পায়ারের ছায়াও তো চোখে পড়ল না।
কিন্তু আমি দেখে ফেলেছি…।
পরে কথা বলব। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না…
ঠিক আছে, যাও। পরেই কথা বলব। তুলে দিয়ে আসব বারান্দায়?
না, লাগবে না।
*
বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করল না মুসার। সঙ্গী হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না। এখন আর। ডলিও চলে গেছে। একা একাই সৈকতে রওনা হলো সে।
চলে এল ডক হাউসের কাছে। দ্বীপটার দিকে তাকিয়ে গা ছমছম করে উঠল। ফিরে তাকাল পেছনের কালো পাহাড়ের দিকে।
বাদুড় উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। দ্বীপ থেকে আসছে। যাবে ওই পাহাড়টায়। খেয়েদেয়ে পেট ভরিয়ে অন্ধকার থাকতে থাকতেই আবার দ্বীপে ফিরে যাবে।
একা একা থাকতে ভাল লাগল না বেশিক্ষণ। ফিরে চলল। এতক্ষণ কৃষ্ণপক্ষের হলুদ চাঁদ ছিল আকাশে। এখন সেটাও মেঘে ঢাকা পড়েছে। সাগর থেকে এসে ঝাঁপটা দিয়ে গেল একঝলক ঠাণ্ডা বাতাস। গায়ে কাঁটা দিল।
অন্ধকার। চাঁদ-মেঘের খেলা। ভ্যাম্পায়ার আসার উপযুক্ত সময়।
সাবধানে এগিয়ে চলল মুসা।
ভয় লাগছে তার। দোয়া-দরূদ পড়তে পড়তে এগোল।
হাঁটতে হাঁটতে বালিয়াড়িটার কাছে চলে এল। কিছু ঘটল না।
মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল চাঁদ। ভূতুড়ে ঘোলাটে আলো ছড়িয়ে ৩ দিল আবার।
বালিয়াড়ির কাছ দিয়ে চলার সময় কালো কি যেন পড়ে থাকতে দেখল সে।
আবার কালো জিনিস! ধড়াস করে উঠল বুক। মানুষ না তো!
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওটার দিকে।
মানুষই! পড়ে থাকার ভঙ্গিটা ভাল না। আরও কাছে এসে দেখল উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে ওর। পকেটে হাত দিল। এখনও আছে। রিকির বুটেন লাইটারটা। দ্বীপে গিয়ে জিনাকে আনার সময় একবার কাজে লেগেছে ওটা। তারপর থেকে আর কাছছাড়াই করে না।
আলো জ্বেলে পড়ে থাকা মানুষটার মুখ দেখে চমকে গেল সে।
ইমি!
একবার নাড়ি টিপেই বুঝে গেল, বেঁচে নেই।
বালিতে মাখামাখি মুখ। গলায় ঝাক বেঁধে রয়েছে মাছি। নিশাচর মাছিও আছে তারমানে। রক্ত খায় নাকি! হাত দিয়ে প্রায় ডলে সরাল সেগুলোকে।
গলার চামড়ায় স্পষ্ট দেখা গেল ফুটো দুটো। এক ফোঁটা করে রক্ত লেগে রয়েছে সেগুলোর ওপর। মুখের চামড়া ময়দার মত সাদা।
শুষে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলা হয়েছে ওকে। এক ফোঁটা রক্ত থাকতে। ছাড়েনি। একেবারে রিকির মত।
কে করল কাজটা? বেরিয়েছিল তো কণিকার সঙ্গে।
সন্দেহটা সরাসরি কণিকার ওপরই পড়ে। তবে সে না-ও হতে পারে। মাত্র আগের দিন একইভাবে অ্যানি খুন হয়েছে এখানে। সে তো আর কারও সঙ্গে বেরোয়নি। তারমানে খুন করার পদ্ধতি বদল করেছে ভ্যাম্পায়ার। রাতে এসে ওত পেতে থাকে শিকারের আশায়। কাউকে একা পেলেই…
ঝট করে মাথা তুলে চারপাশে তাকাতে শুরু করল মুসা। নির্জন সৈকতে কোন মানুষের সাড়াশব্দ নেই। সে একা! তার রক্ত খাওয়ার জন্যেও আসবে না তো ভ্যাম্পায়ার!
একটা মুহূর্তও আর থাকতে সাহস করল না। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছুটতে শুরু করল লোকালয়ের দিকে।
.
১০.
পরদিন রাতে। পিজ্জা কোভে দুটো টেবিলে বসেছে টনি, রবিন, কিমি, ডলি, কণিকা আর মুসা। আলোচনা হচ্ছে ইমির মৃত্যুরহস্য নিয়ে।
মেইন স্ট্রীটের একটা পে ফোন থেকে থানায় ফোন করলাম, মুসা বলছে। মাথাটা তখন পুরো খারাপ আমার। ভয়ে, উত্তেজনায় থরথর করে। কাঁপছে হাত-পা। কথাও বলতে পারছিলাম না ঠিকমত।
যাই হোক, পুলিশ এল। নিয়ে গেলাম লাশের কাছে। ওদের কাজ শেষ হওয়ার পর আবার আমাকে নিয়ে গেল থানায়। চলল একটানা জিজ্ঞাসাবাদ। ডিটেকটিভ অফিসার ওকারিশের সন্দেহ আরও বেড়েছে আমার ওপর। বাড়বেই। দু দুটো খুন হলো। একজনের সঙ্গে শেষ দেখা গেছে আমাকে। তা ছাড়া দুজনের লাশই খুঁজে পেলাম আমি। ওকারিশের বোধহয় সন্দেহ, খুন করে রেখে এসে খুঁজে বের করার অভিনয় করেছি।