মঞ্চের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল মুসা। নজর পেছনে ব্যাকড্রপের আঁকা বিল্ডিঙের দিকে। বিড়বিড় করে বলল, টোয়েন্টি সেভেন ব্র্যাকার স্ট্রীট।…কোথায় ওটা?..পাচ্ছি না কেন?…খুঁজে বের করতে না। পারলে পিঠের চামড়া রাখবেন না আমার মিস্টার কর্কলি।
ওর হাতে একটা ছোট বাক্স। মুদি দোকানের কর্মচারি সেজেছে। ডেলিভারি বয়ের বেশে খদ্দেরের বাড়িতে মাল সরবরাহ করতে এসেছে। ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না।
ছায়া থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে এল ডলি। কানের কাছে বলে উঠল, কি খুঁজছ?
এমন চমকে গেল মুসা, আরেকটু হলে হাত থেকে ছেড়ে দিচ্ছিল বাক্সটা।
পথ হারিয়েছ বুঝি? ডলির ঠোঁটে শয়তানির হাসি।
আঁ… ইয়ে..ইয়ে… কথা সরছে না মুসার মুখ থেকে।
ইয়ে ইয়ে করছ কেন? হারিয়ে গেছ নাকি, সেটাও বলতে পারছ না?
আ-আমি ব্র্যাকার স্ট্রীটের সাতাশ নম্বর বাড়িটা খুঁজছি। তুমি চেনো?
চিনব না কেন? এসো, হাঁটতে শুরু করল ডলি।
পেছন পেছন চলল মুসা। বুক কাঁপছে। এত ভয় পাচ্ছি কেন? মনে মনে নিজেকে ধমক লাগাল সে। এটা তো আর আসল নয়। নাটক।
তবে আসল বিপদও আছে স্যান্ডি হোললাতে। পথ হারানো মানুষের কাছে এভাবেই আচমকা এসে উদয় হয় ভ্যাম্পায়ার। সেটা ভেবে নিজেকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করল। মনে হলো তার, তাতে অভিনয়টা জমবে ভাল।
হঠাৎ মুসাকে চেপে ধরল ডলি।
হাত থেকে বাক্স ফেলে দিল মুসা। ধাক্কা দিয়ে ডলিকে সরানোর চেষ্টা করল।
আসুরিক শক্তিতে তাকে জাপটে ধরল ডলি। ফাঁক হয়ে গেল ঠোঁট। দুদিকের কোণা সরে গিয়ে বেরিয়ে এল মারাত্মক শ্বদন্ত। মঞ্চের আলোয় ঝকঝক করে জ্বলছে দাঁত দুটো। মুসার গলায় দাঁত বসিয়ে দিতে গেল।
ভূ-ভূ-ভূত! বলে চিৎকার করে উঠল মুসা। কিছুতেই ডলির বাহুমুক্ত হতে না পেরে চেঁচাতে শুরু করল, বাবাগো! খেয়ে ফেলল! বাঁচাও! বাঁচাও!
ডলির আলিঙ্গন থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ছটফট করতে লাগল।
আরে করছ কি? আবার চিৎকার করে উঠল মুসা। চিৎকারটা আগের চেয়ে বাস্তব মনে হলো। অভিনয় নয়। এত জোরে দাঁত ফোঁটাচ্ছ কেন? কেটে যাবে তো!
হাসি শোনা গেল দর্শকদের।
কিন্তু কানেই তুলল না ডলি। দাঁতের চাপ কমাল না সামান্যতম। বরং বাড়াতে শুরু করল।
.
০৯.
আরে! করছ কি! ছাড়ো! ছাড়ো! চিৎকার করতে লাগল মুসা। যখন কোনমতেই ছাড়ল না ডলি, এক ধাক্কায় ওকে সরিয়ে দিল।
হাসি বাড়ল দর্শকদের।
পিছিয়ে গেল ডলি। প্লাস্টিকের দাঁত দুটো খুলে নিল।
গলায় হাত বোলাতে লাগল মুসা। রক্ত বেরোয়নি। তবে দাঁতের চাপ আরেকটু জোরে লাগলে যেত ফুটো হয়ে। বাপরে বাপ! আসল দাঁতের চেয়ে কম শক্ত নয় ওই প্লাস্টিকের দাঁত।
সরি, ডলি বলল, অভিনয়ে এতটাই মনোযোগ দিয়ে ফেলেছিলাম, তুমি যে ব্যথা পাবে সেটাও মনে ছিল না।
আহত জায়গা ডলতে লাগল মুসা। ডলির সরি বলাও তার গোমড়া মুখে হাসি ফোঁটাতে পারল না। ভোতা স্বরে বলল, তবে স্বীকার করতেই হবে তুমি ভাল অভিনেত্রী।
উজ্জল হলো ডলির চোখ। থ্যাংকস।
ভেরি গুড। চমৎকার অভিনয় করেছ, মিসেস রথরক বললেন। পরের দৃশ্য। রবিন, এসো।
দুর্বল ভঙ্গিতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল রবিনকে। অন্য মানুষ লাগছে আজ ওকে। সেই প্রাণচঞ্চল রবিন নয়।
সংলাপও বলতে পারল না ঠিকমত। নীরস কণ্ঠ। তাতে প্রাণ নেই। যা করল সেটাকে আর যাই বলা যাক, অভিনয় বলা যাবে না।
বাতিল করে ফেলেছে ওকে! আনমনে বিড়বিড় করল মুসা।
শুনে ফেলল ডলি। কণিকার সঙ্গে বেরিয়েছিল না একটু আগে?
অ্যাঁ!…হা! কি মনে হতে ঝট করে তাকাল ডলির দিকে। কণিকার সঙ্গে বেরোনোয় কি হয়েছে?
না, কিছু না, অন্য দিকে চোখ ফেরাল ডলি।
ওর আচরণ রহস্যময় মনে হলো মুসার কাছে। ডলি কিছু জানে মনে হচ্ছে। ভ্যাম্পায়ারের ব্যাপারটা সে-ও সন্দেহ করেছে নাকি!
রিহারস্যালের পর মুসা আর ডলির সঙ্গে টনি আর কিমিও এগোল দরজার দিকে।
বাড়ি যাবে এখন? মুসাকে জিজ্ঞেস করল টনি।
এই সময় রবিন আর কণিকাকে আসতে দেখে মুসা বলল, না, এত সকাল সকাল যাব না। কণিকার ওপর নজর রাখতে চায় সে। চলো, প্রিন্সেসে যাই। খিদে পেয়েছে।
রবিনের দিকে তাকাল ডলি, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে ঘুমাওনি।
উল্টোটা বললে, রকিন বলল। সারা দিনই ঘুমাই এখন। জেগে উঠে দেখি, ঘুমানোর আগে যেমন ছিলাম, তার চেয়ে দুর্বল লাগছে।
তাকিয়ে আছে মুসা। রিকি আর জিনার সঙ্গে রবিনের অসুস্থতার মোলো আনা মিল। গলায় দাগ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করল। নেই।
দ্বিধায় পড়ে গেল সে। রবিন কি আসলেই কোন রোগের শিকার? ভ্যাম্পায়ারের নয়?
পোলা শার্ট পরেছে রবিন। উঁচু কলার। গলার নিচের দিকটা দেখা যায় না। ওখানে দাগ থাকতে পারে। পুরো গলা না দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
রবিনের হাত ধরে টানল কণিকা, চলো, বেরোই।
কোথায় যাব?
প্রিন্সেসে। মুসা বলল না?
হাই তুলতে তুলতে জবাব দিল রবিন, আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি বাড়ি যাব।
হতাশ মনে হলো কণিকাকে। এক ঘণ্টার জন্যেও পারবে না?
ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন। মুসার দিকে তাকাল, মুসা, আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবে? একা যেতে ভরসা পাচ্ছি না।
চলো।
কিন্তু মুসা.. বলতে গেল ডলি।
বাধা দিল মুসা, না, ডলি, আজ আর তোমার সঙ্গে যেতে পারলাম না। কাল দেখা যাবে। রবিনকে দিয়ে আসা দরকার। ও অসুস্থ